Click the image to explore all Offers

গল্প ।। ইঁদুর বিড়ালের গল্প ।। চন্দন মিত্র


  ছবিঋণ- ইন্টারনেট 

 

ইঁদুর বিড়ালের গল্প

 চন্দন মিত্র

 

 একদা একটি ইঁদুরের মেয়ের সঙ্গে একটি বিড়ালের ছেলের  ভাব হয়ে  যায়। খবরটা জানাজানি হতেই মেয়ের বাড়িতে কান্নার  রোল ওঠে। বিড়াল-পরিবারে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিড়াল-মা তার ছেলেকে বলে, আমার দিক থেকে তোদের কোনো ভয় নেই। আমি মেয়েদের যন্ত্রণা বুঝি । কিন্তু তোর বাবাকে আমি বিশ্বাস করি না। একদিন সেই ইঁদুর-মেয়ে আর বিড়াল-ছেলে কাউকে কিছু না-জানিয়ে  বিয়ে করে ফেলে। কিন্তু ...

থাম থাম। এরকম গল্প তুই কোথায় পেয়েছিস। সবেমাত্র সেভেনে পড়ছিস এই বয়সে প্রেম,বিয়ে এসব নিয়ে …। বেশ তো পেকে উঠেছিস । কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক।

প্রতি শনিবার ফোর্থ পিরিয়ডে দ্রুত পঠনের ক্লাসে গাঙ্গুলিবাবু আমাদের কোনো একজনকে গল্প বলার জন্য ডেকে নেন। আজ ডেকেছিলেন ক্লাসের ফার্স্ট বয় রাজাকে। গল্পটি আমাদের বেশ ভালো লাগছিল। কিন্তু স্যারের ধমকে গল্পে ইতি পড়ল। 

 কাঁদো কাঁদো হয়ে রাজা বলল, না মানে কোথাও পড়িনি ।

তাহলে কার কাছে শুনেছিস ?

না স্যার, কারও কাছে শুনিনি।

তবে ?

স্যার, গল্পটি আমার নিজের বানানো।

এতদিন পরে আর মনে নেই তারপর কী হয়েছিল।

 মাধ্যমিকের পরে আমি কমার্সে চলে গেলাম। রাজা সায়েন্সে। আমার বি.কম, এম.কম সব কলকাতাতেই। ব্যাঙ্কিং সার্ভিসের দৌলতে নিজের শহরেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি জুটে গেল। একদিন বিকালে ব্যাঙ্ক থেকে ফেরার সময় হঠাৎ রাজার সঙ্গে দেখা। খালি পা, খালি গা, পরনে কেবল একটি ফুলপ্যান্ট । মাথা-মুখ কামানো। আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। দাঁড়িয়ে বললাম, রাজা, আমাকে চিনতে পারছিস; আমি দিগন্ত, আমরা একসঙ্গে পড়তাম।

 রাজা, একবার আমার মুখের দিকে ভালো করে তাকায়, তারপর স্মিত হাসি হেসে পাস কাটিয়ে চলে যায়। কয়েকদিন পরে ক্যাশ কাউন্টারের লাইনে দাঁড়ানো কৃষ্ণেন্দুকে দেখতে পেলাম। কৃষ্ণেন্দুও আমাদের সহপাঠী ছিল। ও আর রাজা একই পাড়ার ছেলে ; রাজার ব্যাপারে ভালোই জানবে। লাঞ্চটাইমের বেশি দেরি নেই দেখে কৃষ্ণেন্দুকে একটু অপেক্ষা করতে বললাম। দুজনে টিফিন ভাগাভাগি করে খেতে খেতে রাজার প্রসঙ্গ তুললাম।

 কৃষ্ণেন্দু বলল, তুই কোলকাতায় থাকতিস বলে জানিস না। এখানকার সব্বাই জানে। রাজা কেমিস্ট্রি অনার্স কমপ্লিট করার পর দুর্গাপুর স্টিলপ্ল্যান্টে চাকরি পায়। চাকরি পাওয়ার পরে পরেই সে বিয়ে করে। কিন্ডারগার্টেন থেকেই মেয়েটির সঙ্গে তার ভাব ছিল। ইন্টাররিলিজন ম্যারেজ । বহুত হুজ্জুতি হাঙ্গামার শেষে ব্যাপারটা থিতিয়ে যায়। রাজুর বাবা লোকটা সুবিধার নয়- লোকাল নেতা, দেখলে কেমন খুনী খুনী মনে হয়। রাজার বিয়ের কিছুদিন পরে তার মা আত্মহত্যা করেন। দিনকয়েক পরে তার বাবা এক শ্যালিকাকে বাড়িতে এনে রাখেন। রাজার সেই মাসি একদিন কিছু টাকাপয়সা ও গয়নাগাটি হাতিয়ে পালিয়ে যান। রাজা, মাসের শেষের দিকে কোনো এক শনিবার দেখে বাড়িতে আসত। তুই তো জানিস শনিবার-রবিবার সন্ধ্যায় স্কুলমোড়ে আমাদের কেমন জমজমাট আড্ডা বসে। এমনই এক শনিবার আটটার মতো বাজে ; বিস্তর রাজা-উজির-মারা গল্প চলছে, এমন সময় স্যুট বুট কোট টাই পরা রাজা হাজির। আমরা তো অবাক ! রাজা কোনোদিন এমন করে না। অফিস থেকে ফিরে পোশাক বদলে তারপর সে আড্ডায় আসে। হঠাৎ সে সবাইকে চমকে দিয়ে অট্টহাস্য শুরু করে । তারপর থেমে যায় । তারপর কাঁদতে শুরু করে। আমরা সবাই বিস্ময়ে হতবাক। কিছুক্ষণ পরে সে কান্না থামিয়ে স্মিত হেসে বলে, খবরদার এখন কেউ যাবি না, এখন  আমার বাবা আছে। বাবার পরে বউ যখন ফাঁকা থাকবে তারপর তোরা একজন একজন করে যাবি ... 

-------------------                  

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.