খেয়া বয়ে চলা জীবন যার, তার চাহিদা থাকতে নেই। যোগান তার মজুতই নেই। ভাটপাড়ার পুরোহিত পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের ধারক বাহক অচিন্ত্যকুমার মুখার্জী। বাবা যজমানি পুরোহিত ছিলেন। ভিটেমাটি তার বাপের। দিনকাল যা ছিল তাতে দুবেলা পেট ভরতো তবে অবশ্যই মাসের শেষ কটা দিন ধার দেওয়ার লোকের কাছে গিয়ে হাত পাততেই হতো। তবে কোন চাহিদা ছিল না।
যোগান কে দেবে? মজুতভাণ্ডার যে ফাঁকা। হাপিত্যেশ করে কেউ সেদিকে তাকিয়ে থাকতো না। দিন আনি দিন খাই। শুধু ধর্মকে বাঁচাতে হবেই। সেটা কি? সেটা হল ধর্মীয় সংস্কৃতি। সংস্কার আর নিয়মনীতি। জন্ম থেকে মৃত্যু সব এই ধর্ম কেন্দ্রিক এর বাইরে কিছু নেই। ধর্মের জন্যই জীবনজীবিকা।
দিন বদলে গেল। যজমান পুরোহিতদের প্রয়োজন এ যুগে অচল। ধর্ম নিয়ে কারোর মাথাব্যথা নেই। নতুন প্রজন্ম আরও এককাটি বেশি। ওরা এর ধারও ধারে না। ফলে অচিন্ত্যকুমারদের অবস্থা ঢিলে! এ ব্যবসা লাটে উঠে যাওয়ার জোগাড়।
গঙ্গার এপার ওপার খেয়া বওয়া দিয়ে শুরু হলো এই থেমে যাওয়া জীবনরথ।
বড় ছেলে বউ ছেলে নিয়ে কেটে পড়লে, ছিল ততোদিনই যতোদিন তাদের মা বেঁচে ছিল। মা চোখ বুজতেই হাওয়া! তাদের ছেলে তো বড় হয়েই গেছে!
ছোট ছেলে ফাজিল আর মিথ্যাবাদী। কাজ চলে গেছে। মদ নিয়ে ভালোই আছে। ভালো নেই শুধুমাত্র তাদের বাপ - আদ্যিকালের বদ্দিবুড়ো অচিন্ত্যকুমার মুখার্জী!
বয়সের ভার অচিন্ত্যকে ছাড়িয়ে খেয়া'র শরীরেও বিদ্যমান -তলা ফুঁটো -জল ঢোকে -অচিন্ত্যর পা ভিজে যায় - ডুবে যাওয়ার কামনায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভীত হয়ে পড়ে - সে যে সাঁতার জানে - আর অন্যথায় আত্মহত্যা? তাতে আরো ভয় পায়, সেই ধর্মবিশ্বাসে যা তার মগজে ঢুকে আছে - " আত্মহত্যা মহাপাপ! "
---------------------------
প্রদীপ কুমার দে
বিরাটী আবাসন
এল আই জি -৯
এম বি রোড
নিমতা
কোলকাতা।