স্বপ্নে আজ তোদের বাড়িটা দেখলাম । দক্ষিণ-দুয়ারি দু'কামরা ঘর, ডানদিকের বারান্দাকে মুলিবাঁশের দরমা দিয়ে ঘিরে একটি আড়াল-কক্ষ। বাঁদিকের কামরাটি মাটির । সর্বসাকুল্যে দুখানি ঘর একখানি ইটের অন্যটি মাটির। ছাউনি টালির । সামনে একচিলতে উঠোন ।
আগে রাঙচিতার বেড়া দিয়ে ঘেরা তোদের চৌহদ্দিতে ঢুকলে, ডানহাতের ঠিক নিচে একটি পুষ্করিণী শুয়ে থাকত। পরে মাটি খাইয়ে খাইয়ে তার খিদে জন্মের মতো পূরণ করা হয় । পরিবর্তে অঙ্গনে শিকড় চারায় একটি বিজাতীয় যন্ত্র । তার দ্বারা কাজ চলে যায় তবে সে মাছ বিয়োয় না। চৌহদ্দির তিন পাশে সুপুরি গাছের সারি। কেবল ভদ্রাসনের ঠিক পিছনে ছয়টি মাদি খেজুরগাছ । তার পরেই মাঠের বিস্তার। তোদের মাটির কামরাটি আমার ও আমাদের কৈশোরের দিন-রাতগুলি এখনও কি জমিয়ে রেখেছে? জমায় যদি সে এখন কোথায়?
কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি। আজ দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ স্বপ্নে তোদের বাড়িটা দেখে জেগে উঠি। দেখি বালিশটা ভিজে গেছে। বিশ্বাস কর বাবা চলে যাওয়ার অনেকদিন পর অন্য এক শোকে আমি গোপনে এতটা কাঁদলাম। অথচ তোদের বাড়িটা এখনও আছে। সেই মাটির নিভৃত কামরাটি আর নেই,নেই মুলিবাঁশের দরমা। এখন দ্বিতলের উপর ত্রিতলের চড়ার অপেক্ষা শুধু। আর তুই নেই বলে তোদের বাড়িটাও আসলে নেই...
-----------------------------
চন্দন মিত্র
ভগবান পুর ( হরিণডাঙা ),
ডায়মন্ড হারবার,
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা