Click the image to explore all Offers

গল্প।। ডাকনাম।। প্রতীক মিত্র

 




বৃষ্টি তখনও শুরু হয়নি। ওষুধের দোকানে প্রচুর ভীড়। সঙ্গে ছাতাও নেই। শ্রেয়া হাঁটা লাগালো।ওষুধ রোজের ব্যাপার।কাল নিয়ে নেবে। নিজে বেরোতে পারবেই কিনা নিশ্চয়তা নেই। না হয় কাজের মাসীকে দিয়েই...টোটোতে উঠতে পারতো।ভাবলো হেঁটেই ফিরবে।কতদিন বেরোনো হয় না। মফঃস্বল আর যেন আগের মতনটি নেই।যেখানে বস্তি ছিল সব খালি।কনস্ট্রাকশনের কিছু হবে নির্ঘাত।যেখানে সুন্দর দুটো দোতলা বাড়ি ছিল পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে যমজ বোনের মতন সেই দুটোকেই ভেঙে ফেলা হয়েছে।না এ মফঃস্বলকে সত্যিই চেনা যায় না।বিয়ের পর তাও ওর নেই নেই করে এখানে পনের বছর হতে চললো।আগে যেটুকু বা যোগাযোগ আশপাশের সাথে হয়েছিল এইসব নতুন বাড়ি হওয়ার পর,পিলপিল করে লোক আসার পর, শপিংমল, অফিস ইত্যাদি তৈরি হওয়ার পর আবারো কেমন যেন সব অজানা ঠেকে।অজানা ঠেকে দু'পা হেঁটে গেলে পাওয়া বাসিন্দাদেরও। বছর বছর মুখ বদলে যায়। ফলে রাস্তায় শ্রেয়া হাঁটলেও এই ভেবে হাঁটে না যে কারো দেখা পাবেই। এ হাঁটা এমনিই...হাঁটার জন্য হাঁটা।

সেই আনমনে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে ফোনে কথা বলার সময় প্রথমবার তাই খেয়াল হয় না, যখন কেউ ওর নাম ধরে ডাকে, তাও ডাকনাম।খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ব্যাপারটা মাথায় এলে, ফোনটা রেখে ও পিছিয়ে আসে।যেই মানুষটি ওকে ওর ডাকনামে ডেকেছে তাকে ও মোটেই চিনতে পারে না।তারপর ব্যস্ততার মধ্যেও দু'দন্ড দাঁড়িয়ে কথোপকথনে সময় দেয় শ্রেয়া।রাস্তায় গাড়ি-যানজটে কিছু শুনতে পাওয়া দায়।শ্রেয়ার মুখে বিস্ময় এবং হাসি থেকে আন্দাজ করা যায় ও বেশ খুশি।নিমেষেই শ্রেয়া লোকটার হাতটা ধরে সামনের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলে বোঝা যায় লোকটা ওর পরিচিত।বিশেষ পরিচিত।রেস্টুরেন্টের উলটো দিকে ঘড়ির দোকানে বিচিত্র সব ঘড়ি সমাহার।হরেক রকমের সময় প্রদর্শন করে তারা যে কার খিল্লি ওড়াচ্ছে কে জানে।রেস্টুরেন্টের বন্ধ কাঁচের এসি ঘরে শ্রেয়া তখন তার অতীতকে খুঁজে পেয়েছে।সামনে বসা মানুষটা তার ছোটোবেলার বন্ধু।একসময় একসাথে দু'জনে কম লুডো আর লুকোচুরি খেলেনি।চুল আর দাড়ি পেকে গেছে তাই নইলে লোকটার বয়স শ্রেয়ারই মতন।প্রিয়ম ওর নাম। আর শ্রেয়া সেটা খালি ভুল করে বলতো প্রিতম।শ্রেয়ার বিয়ের সময় প্রিয়ম ছিল না।শ্রেয়ার খুব খারাপ লেগেছিল প্রিয়ম ওর বিয়েতে থাকতে না পারার জন্য।প্রিয়মের নাকি নতুন তখন চাকরি।ভিন রাজ্যে।ফিরতে পারেনি।এখন এখানে কেন জিজ্ঞেস করাতে বলে, একটা বেসরকারী ব্যাংকের ম্যানেজার হয়ে এসেছে।ও জানতোও না যে শ্রেয়া এখানে থাকে।ব্যাঙ্কে এক কাস্টমারের থেকে শ্রেয়ার স্বামীর ব্যাপারে শুনলো।স্বামীর খুব নামডাক।কিন্তু এইসব অসুস্থতা ইত্যাদি শুনে ওর খুব খারাপ লাগলো।শ্রেয়া বললো, ওইসব ওর সয়ে গেছে।টানা কত বছর হয়ে গেল।ওষুধ আর ওষুধ।বিজ্ঞান এত এগিয়েছে তবু নিউরোর এইসব মারপ্যাঁচ এখনো সামলে উঠতে পারছে না। লোকটা শুয়েই থাকে।অমন হাসিখুশি মানুষটা।অন্যের সাহায্য ছাড়া উঠতে পর্যন্ত পারে না।কিছুক্ষণ নীরবতা।শ্রেয়া জোর করে মুখে একটা হাসি আনলে প্রিয়ম একটু স্বস্তি পায়।সেও হেসে ওঠে।শ্রেয়াকে বলে দ্বিধা না করে বলতে যদি কোনোভাবে ও কোনো সাহায্য করতে পারে। ওরা যে নিঃসন্তান সেটা ওই ব্যাঙ্কেই শুনেছে।ফলে সেই বিষয়ে কোনো কথা আর তোলে না সে। খালি, কফিটার শেষটুকু চুমুক দিয়ে রেস্টুরেন্ট ছেড়ে যাওয়ার আগে বলে যায়, শ্রেয়ার বিয়ের দিন ও চাইলেই ফিরতে পারতো, ফেরেনি কেননা ও এটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি।শ্রেয়াও উঠে পড়ে।বাড়িতে কত কাজ।রোজের মতন। একই ছকে বাঁধা।বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।যাক ভালো তাতে কেউ বুঝতে পারবে না ওর চোখের কোণের জলটা। কাজের মাসিটার খুব গোয়ন্দাগিরি করার স্বভাব। প্রিয়ম তো নিজের অংশটাই বলে গেল।শুনলো না তো।ওর কেমন লেগেছিল এই বিয়েটা?ওর ওপর চাপিয়ে দেওয়া বিয়েটা? প্রচুর শব্দ করে ক্লান্তিহীনভাবে ঝরে পড়া এই বৃষ্টি আদৌ কি আর থামবে?আর যদি কখনও প্রিয়ম শ্রেয়ার ডাকনামটা ধরে ডাকেও, ও শুনতে পাবে কি?
 
                                              -----------------------------  

 


প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ























































































Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.