প্রানধন বাবু আজ তেরো দিন হলো হসপিটালে ভর্তি। ডাক্তারবাবু বলেছেন আর কয়েকটা দিন থাকতে হবে। দোতালায় নির্দিষ্ট বেডে বসে জানালা দিয়ে দেখছে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা।মনটা আজ প্রসন্নতায় ভরে উঠেছে।
হঠাৎ আর্তস্বর কানে আসলো,ডাক্তারবাবু আমার ছেলেকে বাঁচান, আমার একমাত্র নয়নের মনি। প্রানধনবাবু উঁকি- ঝুঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করলেন। বুঝলেন নিচের তলা থেকে শব্দ আসছে। তিনি মাক্স পরে গুটি- গুটি পায়ে নিচে নেমে গেলেন। দেখলেন একটা বছর তিরিশের সুদর্শন যুবক মুমূর্ষু যন্ত্রণাকাতর মুখ। তাঁর বাবা-মা ডাক্তারবাবুকে অনুরোধ করছেন আমার একমাত্র ছেলেকে বাঁচান এ ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই । ডাক্তার বলছেন একটিও বেড খালি নেই, আমি নিরুপায় আপনারা অন্যত্র চেষ্টা করুন।
এলাকার একমাত্র কোভিড হসপিটাল এই সময় কোথায় নিয়ে যাবে ছেলেটিকে? প্রানধন বাবু ভাবলেন আমার তো গোধূলি অপরাহ্ন । ছেলেটির সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।ওকে নিয়ে মা- বাবার কত স্বপ্ন।ওর বাঁচাটা একান্ত জরুরি।
প্রানধনবাবু ডাক্তারবাবুকে অনুরোধ করলেন ঐ ছেলেটিকে আমার বেডে ভর্তি করে নিন,আর আমার ছুটি করে দিন,কারন আমি এখন সুস্থ।
প্রানধনবাবুর পরিবারের সদস্যরা চাইছিলেন না, কিন্তু প্রানধন বাবু র দৃঢ়তার কাছে সবাই মেনে নিতে বধ্য হলেন। এবং তাকে ছুটি দিয়ে ছেলেটিকে ভর্তি করে নিলেন ডাক্তারবাবু।
যুবকটি এ যাত্রায় বেঁচে যায় প্রানধন বাবুর বদান্যতায়।
ইতিমধ্যে প্রানধনবাবু ঘরে ফিরে আসার পর শরীরটা ক্রমশঃ খারাপ হতে থাকে। কিন্তু মনে- মনে স্বস্তির হাসি হাসতে থাকে। মনে মনে বলতে থাকে মৃত্যুর আগে অন্তত একটা ভাল কাজ করে গেলাম, একটা প্রানবন্ত জীবনকে স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিতে পারলাম। অসহায় পিতা- মাতার নয়নের মনিকে ফিরিয়ে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে।
আস্তে- আস্তে গোধূলির সূর্যটা ঢলে পড়লো পশ্চিমাকাশে। নিঃশব্দে ঘন অন্ধকার গ্রাস করল প্রানধনবাবুকে। মানবতার অবিশ্বাস্য দৃষ্টান্ত স্হাপন করে প্রানধনবাবু চলে গেলেন মহাসিন্ধু পারে।
----------------------------
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া,
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত