সন্ধ্যে নামলে ও হাঁটতে বেরোয়। শহরের বড় বড় রাস্তাগুলো এড়িয়ে ও গলিগুলো ধরে। সেখানে সব সময় আলো থাকে না। ওর এই আড়ালটা ভালো লাগে। ও সবাইকে না চিনলেও টিভিতে ওইসব রদ্দি ইন্টারভিউগুলোর পর অনেকেই ওকে বেশ চিনে গেছে। ফলে জটলা দেখলেই ও অন্য রাস্তা ধরে।হাঁটতে থাকে।হাঁটতে থাকে যতক্ষণ না ওর সারাদিনের লেখাটাকে বোঝা হিসেবে মনে হওয়াটা বন্ধ না হয়। নামী পত্রিকার কাজটা না ছাড়লেই পারতো।এটা শুধু ওর শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের নয় ওরও মনে হয় আজকাল।পত্নী অধিকাংশ দিন অধ্যাপনার কাজের ভারের অজুহাত দেখিয়ে বাবা-মাএর কাছে রয়ে যায়। আসল কারণটা অবশ্য ও জানে অন্য। তার বই এর কাটতি দুর্বোধ্যতার কারণে কম হলেও সে শেষমেশ তো একজন লেখকই। সে পত্নীর মন বেশ পড়তে পারে। মিসক্যারেজের শোকটা ভুলতেই এই দুরত্ব।ও অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে।পত্নীর তবু ধারণা দোষটা ওর স্বামীর।সরকারি পুরষ্কার প্রত্যাখ্যান করার পর থেকেই ওর সুনাম বা দুর্নামের বৃদ্ধি। সেই সুত্রেই ওইসব ইন্টারভিউ আর ও কিনা ভেবেছিল সেখানে ও ওর সদ্য প্রকাশিত গল্পগুচ্ছের একটু আধটু পাঠ করবে।সরকার পক্ষের নিচু স্তরে যখন ওকে বিরোধী পক্ষের দালা-টালাল ভেবে ধমকানোর পালাও হয়ে গেছে সারা, ও তখনও সন্ধ্যে নামলে হাঁটতে বেরোয়। হাঁটে আর ভাবে কীভাবে পাপবোধের ভার ঝেড়ে ফেলে লিখবে।পারে না। যখনই লেখে তখনই আবেগের সাথে নৈতিকতার চোরা স্রোতে মনটা ক্ষত-বিক্ষত হয়।ও বড় রাস্তাগুলো এড়িয়ে সরু গলি ধরে। সেখানে বদ লোকেরা ওঁত পেতে থাকতে পারে। তবু, ওর এই আড়ালটা ভালো লাগে।
---------------------------
12a, supti mitra sarani, konnagar, hooghly, pin: 712235