গল্প।। বাঁশের বাঁশরি ও একটি শপিং প্লাজা ।। সুদীপ ঘোষাল
অনুপ আর রমার বিয়ে হয়েছে বৈশাখ মাসে। বিয়ের পরে তারা হানিমুনে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গার খবর নিল। তারপরে ভেবে ভেবে তারা ঠিক করল তারা বৃন্দাবনে যাবে। অনুপ আর রমার পরিচয় আগে ছিল না। তারাই বিবাহসূত্রে পরিচিত হয়েছে।এখনো পরিচয়পর্ব অনেক বাকি আছে। কেউ কাউকে চিনত না।বাড়ি থেকে দেখাশোনা করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।এবার নিজেদের মধ্যে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য তারা বিভিন্ন সময় গল্প-গুজব করে।
সময় কাটাতে আবার কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেড়াতে যাওয়ার কথাও চিন্তা করত। ঠিক ভেবে ভেবে তাদের সময় পেরিয়ে বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় শ্রাবণ, ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিন মাস হল।পুজোর ছুটিতে তারা ঠিক করল বৃন্দাবনে যাবে। শুরু হল তোড়জোড়। প্রয়োজনের কিছু জিনিস নিল তারা। বাকিটা কিনে নেওয়া যাবে। অনুপ জানে নগদ টাকা পয়সার সঙ্গে এ টি এম কার্ডটাও রাখতে হবে।
কলকাতা থেকে দিল্লি আগ্রা হাইওয়ে ধরে 135 কিলোমিটার দক্ষিনে গেলেই বৃন্দাবন।অনুপ খবর নিল বৃন্দাবনের। সব খবর সংগ্রহ করা শক্ত ব্যাপার। মোটামুটি একটা ধারণা প্রয়োজন।অনুপ জানে, রমাও শিক্ষিত মেয়ে। মেয়েদের তৃতীয় নয়ন তীক্ষ্ণ। বৃন্দাবনও মথুরায় মন্দির কমকরে হলেও ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার প্রায়মন্দিরগুলি যার বেশিরভাগই কৃষ্ণ, রাধা কৃষ্ণ র সঙ্গে কোন না কোন ভাবে সম্পর্কিত।বৃন্দাবনে গিয়ে তারা প্রথমে ঠিক করল বাসা। একটি লজ পছন্দ হয়েছে। লজের নাম রাধা ভবন।
সেই রাধা ভবনে তারা আশ্রয় নিল।ভাড়া মিটিয়ে চাবি নিয়ে ঘরে ঢুকল। এখানে নিরামিষ খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। রমা ও অনুপের পছন্দের খাবার এখানে আছে। লজের সামনে একটা বেশ সুন্দর রাধাকৃষ্ণের ছবি,আর কৃষ্ণের হাতে বাঁশি। স্বয়ং কৃষ্ণ যেন সাক্ষাৎ দাঁড়িয়ে একদম বাঁশি বাজাচ্ছেন। অনুপ আর রমা খুব সুন্দর ভাবে খাওয়া দাওয়া করার পর দুপুরের দিকে বেরিয়ে পড়ল বৃন্দাবন ঘোরার জন্য। বেড়াতে এসে তো আর শুয়ে পড়ে সময় কাটানো ভালো লাগে না। তাই তারা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল একটার পর একটা মন্দিরে মন্দিরের অভাব নেই। এখানে এখানে এসে এখনো মনে হয় যার মনে হয় যেন হাজার বছর আগে থেমে আছে।উত্তরপ্রদেশের এই প্রাচীন ভূখণ্ডটি শহর হয়ে ওঠে।শহরে নেই পাঁচতারা হোটেলের ঝলক।শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত শপিং প্লাজার স্মার্টনেস কিংবা মাল্টিপ্লেক্সের উত্তরাধুনিকতা কিছুই যেন ছুঁয়ে যায়নি ব্রজ ভূমিকে।এঅনুপ বলল, সরু গলি কাচা-পাকা রাস্তা সাইকেল রিকশা মলিন স্কুল ইউনিফর্ম পরা দল মন মাতিয়ে চলে।রাস্তায় কেবলই গেরুয়া বসন ধারীর সংকীর্তন ধ্বনি। কেমন লাগছে তোমার রমা।অনুপ বলল। রমা বলল, সব দেখে খুব ভালো লাগছে। দেখো কুমোরপাড়ায় মাটির কারুকাজ।এদের আর কোন আলাদা ইষ্ট নেই, শ্রীকৃষ্ণ চরণের এই ভূমিতে।মাটির তৈরী রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ বিস্ময় জাগায় অনুপের মনে প্রাণে। এখানে একটা দোকানে শ্রীকৃষ্ণের প্রচুর ছবি বিক্রি হচ্ছে।
সেই ছবি বিক্রি করছে একজন সুন্দরী মহিলা। তার বিয়ে হয়নি কি বিধবা বুঝতে পারছে না অনুপ। কেবল তার ডাগর রূপ মনে এক অদ্ভুত সুর তোলে ক্ষণে ক্ষণে। অনুপ ভাবে, ভাগ্যিস মনের রূপ দেখা যায় না চোখে। তা না হলে কত হৃদয় যে ভেঙ্গে যেত মুহূর্ত প্রেমে। সে এতো সুন্দরী যে তাকে তাকে দেখতে মনে হয় অনেক বার। বারবার ঘুরে ফিরে তার দিকে চোখ দিয়ে ফেলছে।
স্ত্রী রাগ করে বলছে তুমি ওদিকে বারবার তাকাচ্ছ কেন। কী মনে করবেন উনি। অনুপ কিন্তু দৃষ্টি সংযম করতে পারছে না । সুন্দরী মেয়েটি বলল, নিন বাবু দুটো ছবি নিন শ্রীকৃষ্ণের ছবি বাড়িতে থাকা খুব মঙ্গলের। এই ছবি থাকলে কোন বিপদ-আপদ আপনাদের জীবনে নেমে আসবে না। রোজ দুবেলা এই শ্রীকৃষ্ণের ছবিতে ধূপ দেখাবেন। বাতি দেখাবেন। তাহলে দেখবেন কোন বিপদ আপনাকে ছুঁতে পারবে না।
অনুপ বলল দুটো নয়, আমাদের চারটে ছবি দিন। আমরা চারটে ঘরে চারটে ছবি টাঙিয়ে রাখবো।আর মনে মনে ভাবল তোমার স্মৃতি ও এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে।
দাও চারটে শ্রীকৃষ্ণের ছবি দাও । রমা বললো চারটে প্রয়োজন নেই। একটাই নাও।
--- না একটা নিলেই তো হয় না।
---ঠিকমতো ধুপ বাতি দেখালেই তো একটা ফটোতে ভক্তি হবে।
ভক্তি দেখানোর জন্য অত ছবি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
অনুপ বলল,তুমি বাধা দিও না প্লিজ। না চারটিই থাক।
অনুপ সুন্দরী মেয়েটিকে বলল, আপনাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?
সুন্দরী মেয়েটি বলল হ্যাঁ নিশ্চয়ই পারেন।
অনুপ বলল আপনার নাম কি জানতে পারি। মেয়েটি বলল হ্যাঁ নিশ্চয়ই, আমার নাম লেখা।
----আপনি এখানে আপনি এখানে এলেন কি করে।
মেয়েটি বলল আমি বিধবা হওয়ার পর এখানে এসেছি।
তারপরে আমি নিঃসন্তান।
তাই একাই আমি এই ব্যবসা করি আর বৃন্দাবন ধামের প্রসাদ গ্রহণ করি। এই ভাবেই আমার জীবন চলে যায় রাধামাধবের দয়ায়। জয় রাধে জয় রাধে।
রমার মনে এইবার মায়া জেগে উঠলো সে বললো আহা এত অল্প বয়সে তুমি বিধবা হয়ে গেছো আমি শুনে খুব দুঃখ পেলাম।জয় রাধে।
অনুপ বলল এই বৃন্দাবনে বেড়াতে আসার উৎকৃষ্ট সময় কোনটা বলতে পারেন?
লেখা বলল, বৃন্দাবনে বেড়াতে আসতে হলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ সময়।সে আরও বলল,
বৃন্দাবনে গোবিন্দজী মন্দির টি অসাধারণ দেখবেন। দেখবেন পুরোটা লাল পাথরে তৈরি। প্রায় হাজারখানেক কারিগর নাকি পাঁচ বছর ধরে মূর্তি তৈরি করেন।
আমরা শুনেছি তবে এই বিষয়ে একটা কথা বলা ভালো আপনার বিশ্বাস থাক আর না থাক বেড়াতে গিয়ে সমস্ত সন্দেহ সরিয়ে রাখবেন। আপনার সন্দহ জড়িয়ে না থাকাই রাখাই ভালো।
রমা এবার বলল আপনাকে দেখে তো শিক্ষিত মনে হচ্ছে আপনি তো অনেক খবর রাখেন লেখা বলল হ্যাঁ আমি নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি।পড়াশুনা করি বৃন্দাবনের ইতিহাস নিয়ে। অনেক বই পাবেন বাংলা, হিন্দী বা ইংরাজীতে লেখা। এই বৃন্দাবনের পৌরাণিক ইতিহাস।
লেখাও বলল, আমার বরাবরই এই বৃন্দাবন ধামের প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল।
ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ যেন আমার সেই আশাই পূর্ণ করে দিয়েছেন। জয় রাধে।
অনুপ বললো তাহলে আপনার দেবতা কৃষ্ণ। শুধু কৃষ্ণ। আহারে কৃষ্ণ প্রেমের কারণে আপনি এখানে এসেছেন।
লেখা বলল, হ্যাঁ ঠিক তাই। ঠিক তাই। ঠিকই ধরেছেন আপনি। এই একটাই দেবতাকে ভজনা করি। তবে শুধু কৃষ্ণ প্রেমের কারণে নয় ভাস্কর্যশিল্পের দিক থেকেও মথুরা অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
অনুপ বলল তাহলে কৃষ্ণ প্রেমই আপনাকেই বৃন্দাবনে টেনে এনেছে।আর তার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে।
লেখা বলল হ্যাঁ এটা বলতে পারেন। আমার জীবনে ইচ্ছে ছিল এই শ্রীবৃন্দাবনে এসে শেষ দিন কাটানো। ঈশ্বর যেন সেই আশাই পূর্ণ করলেন।
আবার বলল লেখা, তবে শুধু কৃষ্ণ প্রেমের কারণে নয় ভাস্কর শিল্পের দিক থেকেও দেখবেন এই কাছের মথুরা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। মিউজিয়ামে প্রায় 2000 বছর আগে বুদ্ধের মূর্তি অপূর্ব সুন্দর দেখবেন।
আপনারা থাকুন কিছুদিন এখানে। শুধু পাথরের মূর্তি সংগ্রহ প্রায় 5 হাজারের মত।ভাল লাগবে দেখে।
রমা বললো দুদিন দোকান বন্ধ রেখে আমাদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করুন না।
আপনাকে নিয়ে দেখলে সব কিছু জানা যাবে। আপনার আর্থিক কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা আপনাকে পারিশ্রমিক দিয়ে দেব।
লেখা বলল, ঠিক আছে আমার আপত্তি নেই। আমি আপনাদের এই কৌতুহল মেটাতে রাজি। অনুপ ভাবল, মানুষ অজান্তে খাল কেটে কুমির আনে জীবনে। হয়ত এটাই ভবিতব্য।
তারপরের দিন থেকে লেখাকে নিয়ে শুরু হলো মথুরা ভ্রমণ।
মথুরা জুড়ে 2525টি ঘাট আছে। বিশ্রাম ঘাটের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। লেখা কথাগুলো বলে চলেছে আমরা শুনে চলেছি।
লেখা আরো বলছে, কথিত আছে কংস বধের পরে শ্রীকৃষ্ণদেব এই ঘাটে বিশ্রামে ছিলেন। এই ঘাটে তাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য মন্দির।
বিশ্রাম ঘাটে সন্ধারতি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। কোন পর্যটক এটা মিস করেন না।
লেখা বলল, আমাদের বিয়ের পরও আমরা প্রথম হানিমুনে বৃন্দাবনে এসেছিলাম। আমার মনে পড়ে আমরা ওই লজেই থেকেছি। আপনারাও রাধা ভবনে আছেন।
ওই রাধা ভবনে যে আমরাও ছিলাম আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। কিন্তু আমাদের বিবাহ জীবন সুখের হলো না। স্বামী এক পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। জয় রাধে।
আমার স্বামী ছিলেন কবি,বাউল। সংসারে তার মনযোগ ছিল না। মালিহা গ্রামে তাদের বাড়ি ছিল। খুব আনন্দে থাকত আমার স্বামী। সে আমাকে তার জীবনের গল্প বলেছিল। স্বামীর নাম ছিল সন্তু। আসুন আমরা বিশ্রামঘাটে বসে তার গল্প বলি।
কানি নদীর পাড়ে মালিহা গ্রাম। হারুদাদু বলতেন,এই গ্রামে পাঁচশো বছর আগে এক রাজা এসে বড় অট্টালিকা করেছিলেন এক সুন্দরীকে ভালোবেসে।সেইসব আর নাই।কালের প্রবাহে ভেসে গেছে।গ্রামে দুইশত পরিবারের বাস।বেশিরভাগই মাটির বাড়ি।সন্তুদেরও মাটির বাড়ি। চারচালা টিনের চাল।
সন্তু ছোটো থেকেই মায়ের নেওটা। মা ছাড়া সে কিছু বোঝে না,চেনে না। ফলে মায়ের স্নেহছায়া একটু বেশি পেতো সে। মা জানতেন এই ছেলে আমার, অবর্তমানে অন্য ছেলেমেয়েদের দেখবে। সন্তুর বাবা ছিলেন সরকারী কর্মচারী। তিন ছেলে আর দুই মেয়েকে পড়াশোনা শেখাতে সমস্ত ব্যবস্থা করেছেন। খাওয়া পরার কোনো অসুবিধা নেই। বেশ চলছিলো বটগাছের ছায়ায় সাতটি জীবন। কিন্তু মহাকালের বিচার মানতেই হবে। হঠাৎ মারা গেলেন সন্তুর বাবা। তখন সন্তুর বয়স একুশ। মেট্রিক পাশ করে আই,টি,আই এ ভর্তি হয়েছিলো। কিন্তু অর্ধপথে পড়া থেমে গেলো। সংসারের সমস্ত দায়ীত্ব কাঁধে তুলে নিলো সন্তু। বাবার চাকরীটা সরকার বাহাদুর দিলেন সন্তুকে। এবার ভাই, বোনদের পড়াশোনা, মাকে যত্ন করা সব অই সন্তুর সামান্য মাইনের টাকায়। নতুন চাকরী তাই মাইনে কম। ট্রান্সফারেবল্ জব। আজ হাওড়া তো কাল শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি থাকাকালীন ছুটির দিনে ঘুরতো সন্তু একা। একবার দার্জিলিং গিয়েছিলো। পাহাড় তাকে ডাকতো। ভালোবাসা ধরে রাখতো সবুজ প্রকৃতির মাঝে।
রমা বলল,তাহলে আপনার স্বামী চাকরি করতেন ভাল। লেখা বলল,এই চাকরিসূত্রেই তার এখানে আসা।
সে সমতলের ছেলে। আর পাহাড়ি ছবি তার মনে শান্তি আনতো। মন খারাপ হলেই পাহাড়ের ডাকে বেরিয়ে পরতো বারে বারে।
একরাতে বাসা বাড়িতে খাবার নেই। মাইনের টাকা গ্রামে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। সামান্য কটা টাকা আছে। সন্তু জানে মাস চালাতে হবে। রাত বেশি হওয়ায় দোকানগুলো বন্ধ। একগ্লাস জল ঢকঢক করে পান করলো। অমৃতের স্বাদ। কিন্তু পোড়া পেট মানে না বারণ। চুঁই চুঁই করছে। তবু লেপ মুরি দিয়ে শুয়ে পরলো। গুরুর জপ শেষ করে ঘুমোয় সন্তু। জপ করার সময় শুনতে পেলো ঠক ঠক আওয়াজ। তাড়াতাড়ি জপ শেষ করে বললো,কে?
----আমি, দরজাটা খুলুন।
-----জগতে সবাই তো আমি। নাম বলুন।
-----আমি পাপিয়া,আপনার বাড়িওলার একমাত্র মেয়ে।
------এত রাতে কেন? কি প্রয়োজন বল?
------আরে খুলুন না ছাই।
দরজা খুলে দেখলো বাড়িওয়ালার সুন্দরী অষ্টাদশী মেয়েটা। হাতে একটা বাটি। বললো,আজকে আমাদের সত্যনারায়ণ পুজো ছিলো, মা তাই প্রসাদ পাঠালেন। খেয়ে জল খাবেন। প্রসাদ খেয়ে জল খেতে হয়। জল খাবেন। এখন কি ঢাকা দিয়ে রেখে দেব।
সন্তু বলল,তাই দাও। আমি পরে খেয়ে নেব।
পাপিয়া বলল, আমি বসব। আপনার সঙ্গে গল্প করব।
--- কিন্তু মেসোমশাই রাগ করবেন। রাতে গল্প।
--- বকবে না। বাবাকে বলে, তারপর এসেছি। বলেছি সন্তুদা প্রসাদ খাবে। তারপর বাটি নিয়ে আসতে দেরী হবে।
--- কত আর দেরী হবে খেতে।
--- কিচ্ছু বলবে না, বলছি না। বাবা আমাকে বকে না। একমাত্র আদরের মেয়ে আমি।
পাপিয়া বলল, এবার তোমার গ্রামের গল্প বলো। আমি কিন্তু তোমাকে, তুমি তুমি বলব সন্তুদা। তুমি বেশে কথা বল না কেন? কথা বলবে এখন। আমি শুনব।
সন্তু বলেছিল, নিশ্চয় বলবো। কথা বলব না কেন? আমি তো একাই থাকি। বল, কি বলবে।
সন্তুর মনেও একটা কোণে পাপিয়া ডাকত।
সে বলেছিল আমাকে, কিন্তু বড় সংসারের দায়ীত্ব তার কাঁধে। মায়া কাটাতে হবে। বাউলের মন হয়ে যায় সন্তুর। সে ভাবে, এসব প্রেমের বিলাসিতা কি আমার সাজে? সন্তু ভাবে,বারবার ভাবে পাপিয়ার কথা। কিন্তু ভালবাসা সহজে কেউ পায় না আর কেউ কেউ বাউল সাধক। মানুষের মাঝেই তাঁর বাসা। উদাস ভালবাসা। হঠাৎ পাপিয়ার ডাকে সন্তু চেতনা ফিরে পেলো। পাপিয়া বলল, তুমি সবসময় বাউল মনে ঘুরে বেড়াও কেন। কোকিলের মত তোমার কি বাসাবোনার ইচ্ছে নেই।
সন্তু উত্তর দেয় না। পাপিয়া আবার বায়না করে, একটা গল্প বলো না সন্তুদা। তোমার গ্রামের গল্প। তোমার মায়ের কথা,বাড়ির কথা, আনন্দের কথা। সব শুনব আমি।
সেই গল্প শোনাতে ভালবাসত আমার স্বামী। পাগলের মত কবির মত সাজিয়ে বলত জীবনের গল্প, লেখা স্মৃতিচারণ করে বারবার।
অনুপ বলল,তোমাকে বড় ভালবাসত সন্তু। তাই তোমাকে খোলামেলা সব গল্প বলেছিল নির্দ্বিধায়। লেখা বলল,হয়ত তাই।তারপর সন্তু গল্প শুনিয়েছিল পাপিয়াকে।
সন্তু বলেছিল,শোনো তাহলে পাপিয়া। বলি তোমাকে শীতকালে মেলা যাওয়ার কথা। আমার আবেগের কথা।গোরুর গাড়ি চেপে উদ্ধারণপুরের মেলা যাচ্ছি। পিছনে বাঁধা রান্না করার সরঞ্জাম। মেলা গিয়ে রান্না হবে। বনভোজন। সঙ্গে মুড়ি আছে। বড়দা বললেন,গিয়ে প্রথমে মেলা ঘোরা হবে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। মা বললেন,তোরা ঘুরবি আমি আর মানা রান্নাবান্না করবো। তারপর দুপুরে মেলা ঘুরবো। গাড়ি চলেছে ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দে। গোপাল কাকা বললেন,আরে, দেখ দেখ জিম চলে এসেছে। বড়দার ভয়ে ব্যাটা গাড়ির তলায় হাঁটছে।
জিম নেড়ি কুকুর হলেও, আমরা ওকে জিম বলেই ডাকি। কুকুর ভাবি না। অনেক মানুষের থেকেও ওর ভব্যতা অনেক বেশি।
পঞ্চাননতলার মেলা যেতে একটা আল রাস্তা ছিলো। আমরা ছোটোবেলায় বারবার ওই রাস্তা ধরে আসা যাওয়া করতাম। দুপাশে কাদা ভরতি ধানের জমি। কি করে কাউকে ওই কাদায় ফেলা যায়, এই কুবুদ্ধি আমাদের মাথায় খেলা করতো। আর তাই হতো। ধপাধপ কাদায় পরে যেতো অনেকেই। আর আমরা কি মজা, কি মজা করে চিৎকার করতাম। মার খেয়েছি খুব। বদ বুদ্ধির জন্য।
গোরুর গাড়ি একবার থামলো। তামালদা আর আমি জমি দিয়ে হেঁটে গেলাম। দেখলাম আখের জমি। বললাম,একটা আখ খাবো। তামালদা বললো, না পরের জমি।
--- একটা তো, কিছু হবে না।
----- যাও, তাড়াতাড়ি আসবা।
তারপর একগাছা সরালো আখ ভেঙ্গে খেতে খেতে চলে এলাম।
গোরুর গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। দিগি দিগি, পা পা, করে গোরুর সঙ্গে কথা বলে চলেছে প্রিয় তামালদা।
মন্থর গতিতে পৌঁছে গেলাম সকালের টাটকা মেলায়। ভোরবেলায় বেরিয়েছি বাড়ি থেকে। প্রায় কুড়ি কিমি রাস্তা চার ঘন্টা লাগলো। তবু ক্লান্তি নেই। মা বললেন,প্রথমে জল এনে এই ড্রাম ভরে ফেল।
জল ভরার পরে আমরা মেলা ঘুরতে চলে গেলাম। কাঁচের চুড়ির দোকান পার করে নাগরদোল্লা। চাপলাম। ভয় নেই। মনে মজা।
তারপর ঘুরে ঘুরে দেখার পালা। একই জিনিস ঘুরে এসে দেখে নতুন লাগছে। চির নতুন। কেউ বিরক্ত নয়। সবাই অনুরক্ত মানুষের ভিড়ে। এই প্রবাহ পুরোনো হবে না কোনোকালে।
বড়দা বললেন,অনেক হয়েছে। এবার খাবে চলো। মায়ের কাছে গিয়ে দেখলাম, মুড়ি, তেলেভাজা, আর রসগোল্লা রেডি। ঘুরে ঘুরে খিদে পেয়েছে। খেয়ে নিলাম। জল খেয়ে ধড়ে প্রাণ এলো। এলো আনন্দ।
মানা পিসি বললেন,চল আমি আর তুই একবার মেলা ঘুরে আসি। পিসি প্রথমেই চিতার কাছে গিয়ে বললেন,সব থেকে সত্য, এই চিতা। পিসি খুব তাড়াতাড়ি এই সত্যের সন্ধান কিছুদিন পরেই পেয়ে গিয়েছিলেন।
তমাল দা মাকে বললো,দিদিমুণি, ত্যাল দিন তো। আর ওই খোলের বাটিটা। গরুগোলাকে খেতে দি ভালো করে। ত্যাল মাকিয়ে দোবো। ওরাও তো মেলায় এয়েচে। অবিচার করলে হবে না।
মা বললেন,যাও, দাও গা। ভালো করে খেতে দাও।
মা রান্না সারার পরে একবার মেলায় গেলেন। আমার ঘুরে ঘুরে পায়ের ডিমিতে লাগছে। তবু মেলা না দেখে মন মানছে না। ক্লান্তি ভুলে অবাক চোখ চালানো সারা মেলা জুড়ে। কোনো কিছু দেখা বাকি থাকলো না তো? তাহলে বন্ধুদের কাছে হেরে যাবো। বন্ধুরা বলবে, কেমন মেলা দেখলি। আমরা সব দেখেছি।
ঘুরে ঘুরে লেখক অবধূতের আবক্ষ মূর্তি দেখলাম। শ্মশান দেখলাম। গঙ্গার ঘাট দেখলাম। আর দেখলাম মানুষের আবেগের রঙীন খেলা। কেউ নাগরদোল্লায়।কেউ খাবার দোকানে। আর অনেকে শুধু ভবঘুরের মতো চরকী পাক খাচ্ছে ভিড়ের মাঝে। মেলায় মিলন মানুষে মানুষে।জাতিতে জাতিতে,বললেন গোপাল কাকা।
এই উদ্ধারণপুরের মেলায় গঙ্গা এক প্রধান আকর্ষণ। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জন্ম মৃত্যুর অনেক ছবি।
আমার ঈশ্বর,আমার অনুভব,ভালোবাসা একান্তই নিজস্ব অনুভূতি। আমার জ্যান্ত ঈশ্বরের পরম করুণাময়ের সঙ্গে মিলিত হবার শেষ আয়োজনের শুরু হয়েছে। মনে পরছে, আমার সামনে থেকেও রকেটের দাগের মতো মিলিয়ে গেলো বন্ধু। গঙ্গার জলে ডুব দিয়ে আর উঠলো না নীলমণি। রোজ আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে জ্বল জ্বল করে আমার অশ্রু আয়নায়। হাওয়ায় ওড়া আমার বেহিসাবী মন আজও দেখতে পায় অনন্ত আকাশে তার বিচরণ।
দুপুর ঠিক দুটোর সময় মা খাওয়ার জন্য ডাকলেন। মা বললেন,থালাগুলো জল বুলিয়ে নিয়ে এসো সবাই।
তারপর গোল হয়ে সবাই বসে পরলাম খেতে। মাটিতে বসে খেতে শুরু করলাম। আমি কলাপাতায় খেতে ভালোবাসি। এতো খাওয়া নয়,স্বপ্ন জগতে বিচরণ। এই ভালোলাগা বার বার আসে না। অকৃত্রিম আনন্দের জগৎ এই মেলা।
সবার খাওয়া হয়ে গেলে মা ও মানা পিসি বসলেন খেতে। সবাইকে প্রথমে খাইয়ে তারপর নিজের খাওয়া। তাই ভারতমাতার সন্তানরা দেশের দশের জন্য সব ত্যাগ করতেও কুন্ঠিত হয় না। মায়ের কাছে এই শিক্ষা তারা পায় ছোটো থেকেই।
তারপর বাড়ি ফেরার পালা। অনেক মৃতদেহ আসছে শ্মশানে। বলো হরি, হরিবোল ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত। তারা ফিরছে আপন ঘরে। আমরা ফিরছি গ্রীনরুমে।
সন্তুর কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিল লেখা। লেখা বলল,আমার মত পাগলির প্রলাপ আপনারা শুনলেন এরজন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আনন্দ দুঃখ মিশ্রিত অভিজ্ঞতা হল আমাদের অনুপ বললো এখনো কিছু ঘোরা বাকি আছে আমরা আপনার সঙ্গে এই কটা দিন ঘুরতে চাই লেখা বলল,হ্যাঁ আপনাদের আমি বাকিদিন কটা সঙ্গ দেবো। আপনারা খুব ভালো মানুষ আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
চলুন আমরা এখন বিশ্রাম ঘাটে গিয়ে একটু বসি ।
তারপর সন্ধ্যায় অনুপ আর রমা ফিরে এলো লেখাকে ছেড়ে লজ রাধা ভবনে। ভবনে এসেই অনুপ বিছানায় বসলো।
র মা চলে গেল বাথরুমে। এখন বিছানায় বসে অনুপ দেখতে পাচ্ছে রাধা কৃষ্ণের মিলন লীলা। যেন এই ঘরের মধ্যেই শুরু হয়েছে লীলা।
সে জোড়হাতে বসে রইল আর শ্রীকৃষ্ণ দর্শনের ইচ্ছা পূর্ণ হল।
সে দেখতে পাচ্ছে এক অপূর্ব জ্যোতি।
রাধার জ্যোতিতে ভেসে যাচ্ছে বিশ্বময় শান্তিবারি।
এই শান্তি বারিতেই যেন বিশ্বের মানুষ ভালোভাবে বেঁচে আছেন। সমস্ত দুঃখ তাপ জন্ম থেকে মুছে গেল মুহূর্তে।
রমা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখল অনুপ জোড়হাতে বিছানায় বসে আছে। রমা জিজ্ঞেস করল কি হল তোমার তুমি কি রাধার রাগে মগ্ন অনুপ বলল হ্যাঁ আমি আমি রাধা ভাবে আচ্ছন্ন। এখন রাধার প্রেমে আমি মাতোয়ারা।
জানো শ্রীকৃষ্ণ রাধা কৃষ্ণের দর্শন আমার এই ঘরে বসেই হয়ে গেল।
অনুপ মগ্ন হয়ে থাকল কিছুক্ষন শ্রীরাধা ভাবে মানবদেহের রাধাভাব এর মধ্যে দেখতে পেল লেখাকে।
লেখার সুন্দর মুখখানি ভেসে উঠেছে। সেই সেই মুখে কোনো ব্যথা নেই যন্ত্রণা নেই শুধু আলো আর আলো।
রহমা অনুপ কদিন এসেছে। কিন্তু এই কদিন এসে তাদের শারীরিক মিলন কিন্তু একবারও হয়নি।
কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়েছে অনুপ। রমা খুব অবাক হল কি হল। সে ভাবল, আমার স্বামীর এ কি হল। সে ভাবল যে শ্রী কৃষ্ণ ভক্তিতে সে হয়তো এগুলো করতে চাইছে না।
এখন বাড়ি গেলে হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে।
পরের দিন আবার শুরু হলো বৃন্দাবনের দর্শনীয় স্থান গুলো দেখার জন্য।লেখা সুন্দরী এসে গেছেন অমোঘ আকর্ষণে।অনুপ মনে মনে ভাবল এই কথা। হয়ত আমাদের ভালবাসা হয়ে গেছে প্রথম দর্শনে।
লেখা বলল-এখানে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই যুগল ঘাঁটি সেবাকুঞ্জ ও কালিয়া ঘাটাল শ্রী কুঞ্জ গোবিন্দ কুণ্ডু শিলঘাটা মদনমোহন বাঁকে বিহারী রাধাবল্লব যুগলকিশোর রাজি দামোদর গোবিন্দ গোবিন্দ।এগুলো আমাদের দেখাও লেখা।
অনুপ বলল আমরা একে একে সব দর্শনীয় স্থান ঘুরবো তবে প্রথমে বৃন্দাবন মন্দির টা একবার দেখাও।
লেখা বলল চলুন আজ আমরা বিদ্যামন্দিরে যাই। সেখানে এক বিরাট আকর্ষণ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
লেখা বলল মদনমোহন মন্দির টি কালীঘাটে র কাছে মথুরা থেকে 15 কিলোমিটার দূরে এই মন্দির গুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে।
রমা জিজ্ঞাসা করল আচ্ছা মুলতানি কাপুর কি এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন?
লেখা বলল, এটিই বৃন্দাবনের সবচেয়ে পুরনো মন্দির। বাঁকে বিহারী মন্দির, জয়পুর মন্দির রাধাবল্লব মন্দির মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল 1876 সালে।
অন্যতম আকর্ষণ রাধাকৃষ্ণের বহু মূল্যবান অলঙ্কারসমূহ। এগুলো ভারতবর্ষের সম্পদ।
অনুপ বলল আপনি এত কিছু জানলেন কি করে?
রমা লেখা বলল আমার এখানে প্রায় দশ বছর থাকা হয়ে গেল।
আর বৃন্দাবন ভ্রমণ বৃত্তান্ত, বইয়ে পাবেন এসব কথা। এখানে বই কিনতেও পারেন।তাছাড়া বাইরের অনেক বই আছে। জানার ইচ্ছেটাই আসল।
রমা ঘুরতে ঘুরতে লেখা আর রমেনের দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।
সে হয়তো অন্য কোথাও ঘুরতে গেছে।
চলে আসবে চিন্তা করবেন না। এখানে চলে আসবে। আর না হলে আমার তো সব জানা জায়গা। আমি খুঁজে নিয়ে আসবো ।
অনুপ বলল এখন ওকে দরকার নেই।
এখন আমার তোমাকে দরকার।তাই আমরা হয়ত সুযোগ পেলাম বিধির বিধানে।
তোমাকে একটা গোপন কথা বলতে চাই।
লেখা বলল, বলুন আমিও বলবো একটা কথা কিন্তু রমেন কি করলো কি, লেখাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ চুম্বনের রত হলো। এটাই চাইছিল লেখা। তার শরীর কেঁপে উঠল। মনে মনে তৃপ্ত হল। এর মধ্যে রমা চলে এসেছে।
তখন রমা দেখল অনুপ আর লেখা গল্প করতেই ব্যস্ত।
অনুপ বলল আমরা সারা জীবন যদি এখানে থাকতে পারতাম তাহলে খুব ভালো হতো। রমা বললো তাহলে ঘর-সংসার ছেলে চলো দুজনেই আমরা এখানে সন্ন্যাসী হয়ে থেকে যাই।
তারপর,আহা তারপর দুজনে মিলে এখানে সারা জীবন কাটিয়ে দিই।
লেখা বলল, তাহলে আজ এই অবধি থাক। এখন রাত্রি নটা বেজে গেছে এখন আপনারা বাড়ি যান। এই বলে লেখা নিজের গন্তব্যের দিকে রওনা দিল।
লজে এসে রহমান নিরামিষ খাওয়া দাওয়া দিয়ে গেল। আহার করে তারা বিছানায় শুয়ে পড়ল। তারপর রমার সঙ্গে সঙ্গমে রত হলো।
আজ এত ভালো লাগছে কেন রমা বুঝতে পারলো না। রমাকে আসলে লেখা ভেবে অনুপ আদর করতে শুরু করলো।
তার মধ্যে লেখার ভাব পরিস্ফুট হতে দেখল। লেখাকে সে আদরে আদরে পাগল করে তুলল।রমা বলল আমি কোনোদিন এতক্ষণ এত আনন্দ পাইনি।
তুমি আজকে আমাকে খুব আনন্দ দিলে।
অনুপ বললো, রমা তুমি কি শুনতে পাচ্ছ চারিদিকে বাঁশির আওয়াজ।
কি মিষ্টি শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির আওয়াজ ভেসে আসছে।
তুমি কি শুনতে পাচ্ছ বাঁশির আওয়াজ।
এই বাঁশির আওয়াজ আমি শুনে এত আনন্দ হচ্ছে কেন।
রমা বলল,কই আমি তো বাঁশির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না পাচ্ছি না। তুমি কি পাগল হয়ে গেলে।
অনুপ বলল আমি বোধহয় ভুল শুনছি নাকি। ঠিক শুনছি। এই তুমি কি পেতে শোনো দেখো বাঁশির আওয়াজ ভেসে আসছে চারিদিক থেকে।
এমন সময় রমার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। এতদিন লেখার সঙ্গে যোগাযোগ রমার সঙ্গে কথাবার্তা সব মোবাইল ফোনেই হয়েছে। লেখার মোবাইল ফোন আছে। সে ফোনে রমাকে জিজ্ঞেস করল রমাকে, আপনি কি বাঁশির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন?
চারিদিক থেকে বাঁশির আওয়াজ ভেসে ভেসে অন্তর ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে প্রেম সুন্দরের কাছে। সুন্দর বাঁশির আওয়াজ ভেসে আসছে আসছে রমাদি। রমাদি আপনি শুনছেন। অনুপদা কি শুনতে পেয়েছেন বাঁশির ইশারা।
রমা নিরুত্তর হয়ে বসে রইল।হারিয়ে যাওয়ার ভয় চেপে ধরল রমার অন্তর। সে বলল,না আর নয়, এবার ফিরতে হবে।
অনুপ বলল,ফিরতে পারব কি? ফেরা যে কঠিন হল মরমিয়া।
রমা অনুপের কথায় হেঁয়ালির সুর খোঁজে। বাঁশির সুর তার কানে বাজে নি। সে জানে না, এখনও এখানে বাঁশি বাজে। সারা পৃথিবী জুড়ে বাঁশির খেলা চলেছে নিশিদিন।
মোবাইলের ও প্রান্ত থেকে শোনা গেল লেখার গলায় বাঁশির করুণ সুর, রমার মোবাইলে সাউন্ড হাই থাকায়। হ্যালো হ্যালো হ্যালো, আমি শুনছি বাঁশির সুর। এসুরে আমি মাতোয়ারা। এ সুর ভালবাসার..
--------------------
সুদীপ ঘোষাল
নন্দনপাড়
খাজুরডিহি