Click the image to explore all Offers

রিভিউ ।। 'প্রেরণা' -- ষাণ্মাসিক পত্রিকা ।। অরবিন্দ পুরকাইত

   পত্রিকা-আলোচনাঃ   'প্রেরণা'

                                                         অরবিন্দ পুরকাইত

 

ষাণ্মাসিক প্রেরণা পত্রিকার উৎসব ও বইমেলা সংখ‍্যা, ১৪২৬ সম্প্রতি হাতে এল যুগ্ম সম্পাদকের অন‍্যতম মানস চক্রবর্তীর সৌজন্যে। অন্য সম্পাদক বসন্ত পরামাণিক। চৌষট্টি পাতার পত্রিকাটিতে স্থান পেয়েছে সাহিত্যের গুটিকয় বিভাগের লেখা। শুরুতে শ্রদ্ধার্ঘ্য বিভাগে বসন্ত পরামাণিকের পদ‍্য 'বিদ‍্যাসাগর' ভালো লাগল। 'চিনেছিল এক এক করে ইংরেজি অক্ষর' লেখা হয়েছে। অক্ষর তো নয়, শিখেছিলেন সংখ্যা। তা হলে, সেইমতো পরের অন্ত‍্যমিল পালটে যাওয়ার কথা।
        প্রবন্ধ বিভাগে এক পাতার 'জীবনানন্দের কাব‍্য বৈশিষ্ট্য'র বিশেষত প্রথম দুটি অনুচ্ছেদে এসব কী বললেন হৃষীকেশ পাল! বিংশ শতাব্দীর ঠিক মাঝখানের বছর চারেকের মধ্যে প্রয়াত হচ্ছেন যে কবি, তাঁর সম্বন্ধে লেখা হচ্ছে, 'কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মধ‍্যভাগে এসে, কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্য সাহিত্যের সেই ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করে, সম্পূর্ণ নিজস্ব ভঙ্গিমায় এবং গদ‍্য ছন্দে আধুনিক বাংলা কবিতা লিখতে শুরু করেন।' দ্বিতীয় অনুচ্ছেদটিতে নিবন্ধকার জীবনানন্দকে নিয়ে তাঁর দায়িত্ববোধের পরিচয় রাখেননি। মানস চক্রবর্তীর 'নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা ও অন‍্যান‍্য প্রসঙ্গ' লেখাটিতে সৃষ্ট টেনিদা ও অকালপ্রয়াত তার স্রষ্টা সম্বন্ধে অনেক তথ‍্য পাবেন পাঠক। টেনিদা-সাহিত্য একটু প্রাধান‍্যের জায়গায় থাকলে আরও মূল‍্যবান হত লেখাটি। যদ্দুর মনে পড়ে লেখাটি বাংলা দৈনিক স্টেটসম‍্যান-এ প্রকাশিত হয়েছিল। তাই যদি হয়, তার উল্লেখ থাকা উচিত ছিল।
       অংশুমান চক্রবর্তীর ব‍্যক্তিগত গদ‍্য 'পাশে থাকুক কবিতা' ঠিক আছে। জগদীশ প্রসাদ সাঁতরার ভ্রমণকাহিনি 'মুর্শিদাবাদে একদিন' ভালোই তবে মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ গাইড জাতীয় পুস্তিকা থেকে তথ্য নেওয়ার সময় পুরোনো বানানও অবিকল তুলে নেওয়ায় তা বেখাপ্পা ঠেকবেই।
       চন্দন চক্রবর্তী, অমিয় দাস, অঞ্জনা গোড়িয়া, শমিত কুমার দাসের গল্প ভালো লেগেছে। অণুগল্পের জগতে সম্ভ্রমজাগানো নাম সঞ্জয় গায়েনের চার, চার ও পাঁচ পঙ্্ক্তির সংলাপনির্ভর তিনটি লেখা অর্থবহ।
       ছড়া ও কবিতা বিভাগে ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, অমিয়কুমার সেনগুপ্ত, স্বপনকুমার বিজলী, অলোক কুমার প্রামাণিক, টুম্পা মিত্র সরকার, সুদীপ্ত বিশ্বাস, জগদীশ মণ্ডল, উৎপলকুমার ধারা, শংকর দেবনাথ, চিত্তরঞ্জন দাস, গোপীনাথ চক্রবর্তী, তৈমুর খান, তিমিরবরণ পাল, শান্তনু গুড়িয়া, রথীন পার্থ মণ্ডল, বি কে স্বপন, শিশিরকুমার নিয়োগী, পরিমল ঘোষ প্রমুখের লেখা ভালো লেগেছে।
       শ‍্যামাচরণ কর্মকারের 'যাচ্ছি উড়ে ছড়ার দেশে' ও উৎপলকুমার ধারার 'কুর্চি কুঁড়ির ভোর' ছড়াগ্রন্থ দুটির শমিত কুমার দাসকৃত সংক্ষিপ্ত আলোচনা মনোগ্রাহী হয়েছে। শ্রী ধারাকৃত একটি ভুল প্রয়োগ আলোচকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। 'ছায়াছবি' ছড়া থেকে যে চারটি চরণ উদ্ধৃত হয়েছে সেখানে 'সখ‍্যতা' ভুল। সেই হিসাবে অন্ত‍্যমিলটিও পুনর্বিবেচনাসাপেক্ষ। বসন্ত পরামাণিকের 'মজায় ভরা ছন্দ ছড়া' বইটির অর্ঘ্য চ‍্যাটার্জীকৃত ও স্বপনকুমার বিজলীর 'ঝুমুর ঝুমুর ছড়ার নূপুর' বইয়ের বসন্ত পরামাণিককৃত আলোচনা ভালো লেগেছে। দৃষ্টান্ত বেশি থাকায়, কবিতাংশ পড়তে পড়তে খুব ভালো লেগে গেল শমিত কুমার দাসের 'বিন্দুজল বাতাসে কাঁপে' কবিতার বইটিকে, বসন্ত পরামাণিকের আলোচনার মাধ্যমে। আলোচনাটি পড়ার সময় মনে হতে লাগল যে এই কবির কবিতা কি আমি পড়েছি আলোচ‍্য পত্রিকাটিতে! কবিতা বিভাগে গিয়ে দেখি, সবচেয়ে ভাললাগা হিসাবে চিহ্নিত করে রেখেছি আমি শ্রী দাসের কবিতাটিকেই!
       বেশ বানানভুল থেকে যাচ্ছে পত্রিকায়, একটু বাড়তি নজর দিতে হবে। প্রচ্ছদ চলনসই।
       পত্রিকা প্রাপ্তিতে ধন্যবাদ আর পত্রিকার যাত্রাপথের প্রতি শুভেচ্ছা।

পত্রিকার নাম : প্রেরণা
সম্পাদকের নাম : মানস চক্রবর্তী ও বসন্ত পরামাণিক
সংখ্যা : উৎসব ও বইমেলা সংখ্যা, ১৪২৬
ঠিকানা : বাওয়ালী, নোদাখালী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, ডাকসূচক – ৭০০ ১৩৭

 মূল‍্য : ৫০ টাকা।

 ---------------------------------                                  

আলোচক:

অরবিন্দ পুরকাইত
গ্রাম ও ডাকঘর – গোকর্ণী,
থানা – মগরাহাট,
জেলা – দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,
ডাকসূচক – ৭৪৩ ৬০১।    

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.