বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

ভৌতিক গল্প ।। ও কে? ।। মানস দেব

                                       

  কে?

মানস  দেব

 

              গল্পটা ঠিক কিভাবে শুরু করবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। কেন না শুরু করতেই আমার সমস্ত শরীরে একটা শিহরণ জেগে উঠছে শরীরে কাঁটা দেখা দিয়েছে তবু শুরু করছি

  সুশীল বাবু একজন বড় ব্যবসায়ী মানুষ ব্যবসা সূত্রে তাকে সপ্তাহে তিন-চার দিন বাড়ির বাইরে থাকতে হয় দুই সন্তান স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। ব্যবসায়ী হলেও মনটা বেশ বড় বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার সময় পছন্দ মতো  নানা খাবার অন্যান্য জিনিস নিয়ে আসেন স্ত্রী-পুত্র দের জন্য   তিনি ভাবেন ,  তার বাইরে থাকার অপূর্ণতা যেন স্ত্রী সন্তানদের উপর না পরে সন্তানরাও বাবার ফিরে আসার খবর পেলে ভীষণ আনন্দ অনুভব করতে থাকে কেননা তাদের পছন্দের প্রিয় জিনিস গুলো তারা সহজেই পেয়ে যাবে

       সেবার কালীপুজোর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বাজারে পদ্মার ইলিশ মাছের জোয়ার দেখা দিয়েছে সুশীল বাবু মনোস্থির করেছেন যে , কালী পূজার আগে বাড়ি  ফিরতে পারলে স্ত্রীর পছন্দের ইলিশ মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন ইলিশ মাছের ভাপা আর ভাজা মাছের তেল দিয়ে সাদা ভাত খেতে তারা সকলেই ভীষণ ভালোবাসেন

                            সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তার মনের কথা অদৃশ্যে থেকে শুনেছেন তাই কালীপুজোর আগের দিন রাতে তিনি বাড়ি ফেরার সুযোগ পেলেন বাড়িতে আসবার পথে বাজারে গিয়ে একখানা কেজি দেড়েকের ইলিশ মাছ  ১৬০০  টাকা দিয়ে কিনে অখণ্ডিত অবস্থায় ব্যাগে পুরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন

      রাস্তায় আসবার পথে চিরপরিচিত হরিদার চায়ের দোকানে বসে একটি মাটির চায়ের কাপে একটু চা পান করে দু-একজন পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ সেরে আবার বাড়ির পথে রওনা দিলেন

                সুশীল  বাবুর বাড়ি ফেরার পথে একটি বিরাট বড়ো দীঘির মত পুকুর আছে একসময় তিনি ওই পুকুরে অনেক স্নান করেছেন সাঁতার কেটে এপার-ওপার  হয়েছেন ধীরে ধীরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে তিনি একটু পা চালিয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন

       হঠাৎ পুকুর পাড়ের গলিতে দেখতে পান তার সহপাঠী কমলকে সহপাঠীকে দেখতে পেয়ে ভীষণ আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন কমল একজন বড় পুলিশ অফিসার বহুদিন ধরে তাদের দুজনের কোন দেখা নেই তাই দুজনের মধ্যে নানা ভালো-মন্দ গল্প চলতে থাকে অতীতে কত বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিলো এই কমল। কিছুটা দূর এগোনোর পর কমল  "  আসি বন্ধু  "   বলে করমর্দন করে চলে যায়

                      একটু দূর এগোতে সুশীল বাবু দেখতে পান তার সামনে একটি মোটা - সোটা কালো বিড়াল মিউ -  মিউ  করছে বিড়ালটি কখনো সামনে , আবার কখনো পেছনের দিকে মিউ - মিউ করতে থাকে তিনি কয়েক বার  " এই যাঃ... এই যাঃ... " বলে তাড়াবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বিড়ালটি বড়োই  নাছোড়বান্দা  ; কিছুতেই যেতে চায় না   

       সুশীল বাবু বিড়ালটিকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে দ্রুত গতিতে হাঁটতে থাকেন তবে তার মনে হলো ,  কে যেন  তার মাছের ব্যাগ  ধরে টানছে। তিনি ব্যাগ টি  সামনের দিকে নিয়ে চলতে শুরু করেন

                    এরপর বাড়িতে প্রবেশ করে স্ত্রী মিতালীকে দেখে বলেন  -  "  কি গো কোথায় তুমি ? এই দ্যাখো ব্যাগের মধ্যে একটি বড়ো  ইলিশ মাছ এনেছি ভালো করে ইলিশ ভাপা রান্না করবে আর একটু মাছের তেলে রেখো সাদা ভাত দিয়ে মেখে খাবার জন্য "

      স্ত্রী মিতালী তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে স্বামীর হাত থেকে ব্যাগটা নিলেন আর স্বামীকে বললেন  -  "  তুমি বাথরুমে যাও ,  ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি চা করবো। "

                       কিন্তু স্ত্রী মিতালী ব্যাগটি খুলে মাছ বের করতে গিয়ে দেখলেন ,  তাতে তো কিছুই নেই  শুধু কিছু রক্তমাখা কাগজ পড়ে আছে। তৎক্ষণাৎ মিতালী চেঁচিয়ে বললেন  - " কই মাছ কোথায়? শুধু তো রক্তমাখা কাগজ পড়ে আছে ব্যাগে "

  একথা শুনে সুশীলবাবু বাথরুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেরিয়ে এসে রক্তমাখা কাগজ দেখে জ্ঞান হারালেন স্ত্রী তাড়াতাড়ি তার চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে দিলে জ্ঞান ফিরে আসে সুশীল বাবুর মনে পড়ে যায় , তার বন্ধু কমল তো বছর পাঁচেক আগে নিজের রিভলভারের গুলিতে আত্মঘাতী হয়েছিল তবে পুকুর পাড়ে কার সাথে তিনি গল্প করলেন ?

                    আজ তো ভূত চতুর্দশী তাহলে কমল -   কি  ছদ্দবেশী কালো বিড়াল ! ছলনাময়ী ভূত ! তা না হলে কে ?

 ------------------------

 

[  মানস দেব, বালুরঘাট,   দক্ষিন দিনাজপুর , পশ্চিমবঙ্গ  ]

 


 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.