Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। চিতায় পোড়ে স্বপ্ন ।। অশোক দাশ


 
দাউ-দাউ করে জ্বলছে চিতার আগুন। লেলিহান অগ্নিশিখায় উঠছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী, কালো ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে একটু একটু করে আকাশের নীল। একরাশ বেদনা বুকে চেপে ভাবছে অর্কের বাল্যবন্ধু অরণ্য। আর পাঁচটা তরুণের মত অর্কর স্বপ্ন ছিল সংসারের সকলের মুখে হাসি ফোটাবে, মা-বাবা ভাই-বোন সকলকে সুখে রাখবে।
     ছোটবেলা থেকে অর্ক মেধাবী ছাত্র ছিল, চরম দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে ,বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি পর্যন্ত অর্জন করেছিল। কিন্তু বাস্তবের কঠিন রুক্ষ মাটিতে তার স্বপ্ন অকালে শুকিয়ে গেল। যে ফুল ফুটে ছিল ধরিত্রীর বুকে দেবতার পায়ে অর্পিত হওয়ার আগেই ঝরে গেল অবেলায়। এইতো সেদিনও অর্ক বলেছিল জানিস অরণ্য, বোনের জন্য একটা ভালো ঘরে সম্বন্ধ এসেছে, মৃত্যুর সময় বাবাকে দেওয়া কথা আমাকে যে কোন মূল্যে রাখতেই হবে । অরণ্য বলে দেখ এই অবস্থায় তা কী করে সম্ভব?  তোর এখনো চাকরিটা হলো না, মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অর্ক বলতে থাকে জানিস অরণ্য ,আমার একমাত্র পিতৃহারা বোন, বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে ওর সুখের জন্য, আমাদের শেষ সম্বল তিন বিঘা জমি টা বিক্রি করতেও পিছপা হব না।
        এখনও কানে বাজে অর্কের বুকফাটা আর্তনাদ। জমি বিক্রি করে বোনের বিয়ের সমস্ত আয়োজন করেছিল। পাত্রপক্ষ কে সন্তুষ্ট করতে তার আদরের বোন কে অলংকারে - অলংকারে মনের মত করে সাজিয়ে ছিল। সানাইয়ের শব্দ আত্মীয় কুটুম্ব এর উপস্থিতিতে, গোটা বাড়িটা গমগম করছিল। লাল বেনারসিতে বোনটাকে লক্ষ্মী প্রতিমার মত দেখাচ্ছিলো। কিন্তু এক নিমেষে সব স্তব্ধ হয়ে যায়, একটিমাত্র সংবাদে পাত্র তার প্রেমিকাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এই ঘটনা নাকি পাত্রের পরিবারের কেউ ঘুনাক্ষরে জানতো না।
     কথাটা শোনামাত্র অর্কের মাথায় যেন বাজ পড়ে, উদভ্রান্তের মত সে মাথার চুল ছিড়তে থাকে, নিভে যায় সমস্ত আশার আলো বন্ধ হয়ে যায় সানাই এর শব্দ, গোটা বাড়িটা নিকষ কালো আঁধারে ঢেকে যায় । অন্ধকার ঘরে হতভাগিনী দুখিনী বোনটা তার লজ্জা ঢাকতে গলায় বেনারসির ফাঁস আটকে  ঝুলে পড়ে সিলিং ফ্যানে ।তার দাদার স্নেহ-মমতার বাঁধন ছিন্ন করে চিরদিনের মত অচেনা লোকে পাড়ি দেয়।
    সেই থেকেই অর্কের শরীর একেবারে ভেঙে পড়েছিল। বোনের শোকের ধাক্কা সে সামলাতে পারছিল না, তবুও এরইমধ্যে অনেকগুলি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছিল, কিন্তু সুখবরের প্রত্যাশার প্রহর গনা ছাড়া তার কিছুই করার ছিল না।
   কয়েক দিনের মধ্যেই অর্ক প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে, হসপিটালে ভর্তি করতে হয়। কিন্তু হসপিটাল থেকে তার জীবন্ত দেহ আর ফিরে আসেনি।
     চিতার লেলিহান অগ্নি শিখার দিকে তাকিয়ে তন্ময় হয়ে ভাবছিল অরণ্য, তার বাল্যবন্ধু অর্কের স্বপ্ন ইচ্ছার কত কথা ।হঠাৎ পিয়নের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় অরণ্য ।অর্কের নামে একটি সরকারী চিঠি ,খামটি খুলে চিঠি পড়তে পড়তে অরণ্যর চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে ফোটা-ফোটা তপ্ত অশ্রু, অস্ফুটে বলতে থাকে এই অসম সমাজ ব্যবস্থার ভয়াবহ বিষময় ফল। এখানে মৃত্যুর পর আসে কাজের সংবাদ!  সরকারি উদাসীনতা অকর্মন্যতা ঢিলেমির জন্য একটা তাজাপ্রাণ অকালে চলে গেল। অর্ক তোকে বাঁচতে দিল না, তোর মত লাখ- লাখ বেকারের স্বপ্ন এভাবেই অকালে নিভে যাচ্ছে । এই ঘুনে ধরা ক্ষয়িষ্ণু সমাজে শিক্ষার মূল্য নিরূপণ হয় টাকার অংকে অথবা সুপারিশের জোরে। এখানে মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কাজ পাওয়া যায় না।
     চিতার আগুন টা আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসছে ,অরণ্য অর্কের নিয়োগপত্রটি কুচি কুচি করে ছড়িয়ে দেয় চিতার আগুনে, লেলিহান অগ্নি শিখা লোলজিহ্বা বিস্তারিত করে উড়িয়ে দেয় যৌবনের স্বপ্ন।
 
------------------------------

অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.