'কই গো ওঠো, বেলা কতখানি গড়িয়ে গেছে দ্যাখো' — রান্নাচালা থেকে ডাক দিলো আশা।
পরেশ একবার পাশ ফিরে নিলো, মুখে রা কাটলো না।
'কাল সন্ধেবেলা মাঠ থেকে ফিরে সেই যে কাঁথা চাপা দিয়ে শুলে, খাবার পর্যন্ত মুখে তুললে না' – বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো আশা। পরেশকে নাড়া দিয়ে বললো — 'উঠে হাত মুখ ধোও, দুটো মুড়ি মুখে দাও।'
'আমার আর খাওয়া! – বলতে বলতে উঠে বসে বাচ্চা ছেলের মতো হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো পরেশ — 'আমার যে সব জলে চলে গেল, আশা। আমি যে ধনে প্রাণে শেষ হয়ে গেলাম।'
— 'ওগো তুমি অমন করো না। শান্ত হও। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।'
— 'আর কী ঠিক হবে? এবার কীকরে আমার সংসার চলবে, কোত্থেকেই বা দেনা শোধ করবো?
— তুমি অত ভেঙে পড়ো না গো, ভেঙে পড়ো না। রাস্তা মোড়ে সবাই বলাবলি করছে নিম্নচাপে চাষের যা ক্ষতি হয়েছে, নিশ্চয় লোন ছাড় হবে।
— ও ছাড় আমাদের জন্যে নয়। ওই ছাড় পাবে জমি মালিকরা।
— এ তুমি কী বলছো! তা কেন হবে?
— ব্যাঙ্ক যে শুধু কাগজ চেনে... জমির কাগজ। ওরা কাগজ দেখে লোন দেয়। আমার মতো ভাগচাষীরা যাদের দুয়ার থেকে ঋণ পাই, সে দেনা বেঁচে থাকতে ছাড় হয় না... ছাড় পাওয়ার একটাই মাত্র পথ, ওটাই এখন আমার শেষ উপায়!
বুকটা কেঁপে উঠলো আশার, ধপ করে বসে পড়ে পরেশের পা দুটো জড়িয়ে ধরে আশা কেঁদে উঠলো — ওগো তুমি চুপ করো। অমন কথা মুখে এনো না। উপরে ভগবান আছে, তার উপর ভরসা রাখো।
— ওর উপর ভরসা রেখেই তো আমরা টিকে ছিলাম। সে'ই নিজে যখন মারতে উদ্যত হয়েছে, তখন কি আর বাঁচার উপায় আছে?
' পরেশ... পরেশ... পরেশ ঘরে আছিস নাকি? '—ডাকতে ডাকতে এমন সময় উঠোনে এসে দাঁড়ালেন সত্যেন মন্ডল।
আশা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মড়া'র উপর একটা আসন পেতে এগিয়ে দিলো। পরেশ বেরিয়ে এসে বললো — বসো সত্যদা, বসো।
—জল থামতে জমি দিয়ে গিয়েছিলি?
পরেশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আশা বললো — আপনার ভাইকে একটু বুঝিয়ে বলুন না, ও একেবারে ভেঙে পড়েছে।
পরেশকে কাছে টেনে নিলেন সত্যেনবাবু। তারপর বুকপকেট থেকে খান কয়েক পাঁচশো টাকার নোট বের করে বললেন — এই টাকাগুলো রাখ, চাষটা তো আবার করতে হবে নাকি?
— কিন্তু আমি যদি শোধ দিতে না পারি?
— চাষটা তুই করবি, আর লোনের ছাড়টা আমি একা ভোগ করবো! সইবে... আমার?
— যদি ছাড় না হয়?
— লাভের অংশ পাবার আশায় তোকে জমি দিয়েছি, তাই বলে ক্ষতির ভাগ নেবো না, তাই কি হয়?
এবার পরেশের পিঠে হাত রেখে সত্যনবাবু বললেন — যা, বীজ জোগাড় কর, আমি আসছি। আমার অফিস বের হবার সময় হয়ে গেল।
ততক্ষণে আকাশের মেঘ সরে গেছে, চারিদিক রোদ ঝলমল করছে।
----------------------
গ্রাম - মুড়াকাটা
পোঃ - মদনমোহনপুর
থানা - কোতুলপুর
জেলা - বাঁকুড়া
পিন - 722141
ফোন নং - 9163104618