Click the image to explore all Offers

গল্প।। অসুরবধ ।। রুবি সেনগুপ্ত

 



                                                                   ♦(পর্ব-১)♦


দীপাবলির রাতে আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠেছে রাজস্থান শহরের অলিগলি।মাইকে বাজছে নানা গান।নতুন জামা পরে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা হাতে জ্বলন্ত রঙবেরঙের তারাবাতি এবং রঙমশাল নিয়ে মনের আনন্দে ছুটে চলেছে।

ফোয়ারার মত ছড়িয়ে পড়ছে তুবড়ির আলো। জ্বলন্ত চরকিগুলো প্রচন্ড জোরে ঘুরতে ঘুরতে আলোর বৃত্ত রচনা করছে। ছোটো বড় নানা আকারের রকেটগুলো সোঁ সোঁ শব্দে উড়ে চলছে আকাশের বুকে। আনন্দ এবং উল্লাসে পরিপূর্ণ ভরে গিয়েছে সকলের মন।

এত আনন্দ এবং খুশির মাঝে ঘরের চৌকির মধ্যে বসে রয়েছে আঠারো বছরের শ্যামা সিং।তার সারা শরীরে রয়েছে বহু আঘাতের চিহ্ন।পরনের পোশাক একেবারে ছিন্নভিন্ন।ভয় এবং আতঙ্কে বারবার কেঁপে উঠছে সে।গতরাতে তার নারীত্বকে কলঙ্কিত করেছে তার  পঞ্চান্ন বছরের সুখবিন্দর সিং। সে সম্পর্কে শ্যামার একমাত্র চাচাজি।

মা,দুই যমজ ভাইবোন এবং বাবুজির সাথে দিল্লি শহরের একটা বস্তিতে থাকে শ্যামা।বিগত ষোলো বছর ধরে তারা ওখানকার  বাসিন্দা।শ্যামার মা মৈথিলী সিং এবং বাবুজি পরবিন্দর সিং একটা ফুডস্টল চালিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। শ্যামা লেখাপড়ায় ভীষণ ভালো। তার স্বপ্ন সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে এবং বিনামূল্যে গরীব মানুষদের চিকিৎসা করবে।

মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর শ্যামা তার চাচার বাড়ি রাজস্হানের একটা সওয়াই গ্রামে বেড়াতে এসেছে।চাচা,চাচি এবং তাদের তিন সন্তানের সাথে আনন্দে দিনযাপন করছিল শ্যামা।হঠাৎ তার সুখের জীবনে নেমে এল নিকষকালো অন্ধকার।চাচার লালসা তার জীবনটাকে তছনছ করে দিলো।এতবড় বিপর্যয় নেমে আসবে তা কোনোদিন কল্পনাও করেনি সে।আজ মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর একেবারে মুষড়ে পড়েছে সে।

                                                   ♦(পর্ব-২)♦

সকাল আটটা নাগাদ শ্যামার চাচি দেবিকা সিং পোশাক,গয়না,আচার এবং পাঁপড় বিক্রি করার জন্য রওনা দিয়েছে এক মেলাতে।সঙ্গে গিয়েছে তার তিনসন্তান।তারা ফিরে আসবে পরেরদিন।এক নিমন্ত্রণ বাড়িতে গিয়েছে চাচা সুখবিন্দর সিং।বাড়িতে একা একা বসে টিভি দেখছিল শ্যামা।

দুপুরবেলা দেড়টা নাগাদ দরজায় ঠকঠক শব্দ হওয়ার পর দরজা খুলে দেখে শ্যামা দেখে তার চাচাজি মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসেছে।তিনি বাড়িতে ঢোকা মাত্রই একটা বিচ্ছিরি গন্ধে ঘরটা ম-ম করে উঠে।তিনি শ্যামার থেকে একগ্লাস জল চান।জল আনার জন্য সে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়।কিন্তু সেখান অবধি যেতে পারে না।কারণ তার চাচা বলপূর্বকভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে এবং শিকারী বাঘের মত থাবা মেরে ছিঁড়ে ফেলে তার পরনের চোলি।চিৎকার করে উঠে শ্যামা।সুখবিন্দর সিং তার মুখ চেপে ধরে এবং বলে "চুপ কর তু।চিল্লাইগী নহি।বরনা ম্যায় তুজে মার ডালুংঙ্গা।" 

তারপর বাড়িয়ে দেয় টিভির ভলিউম।সেই শব্দে শ্যামার বুকফাটা আর্তনাদ কেউ শুনতে পাই না।চাচার লালসার শিকার হয় শ্যামা।সারারাত পাশবিক নির্যাতনের ফলে নিদারণ যন্ত্রনায় কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শ্যামা।ভোরবেলা সুখবিন্দর সিং পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন বেলা দশটার সময় শ্যামার চাচি দেবিকা তার সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে ফেরে।তাদের দেখার পর ডুকরে কেঁদে উঠে শ্যামা।
অজানা আশঙ্কায় দেবিকার হৃদয় কেঁপে উঠে এবং তিনি শ্যামাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেন।শ্যামা তাকে জানাই "গতকাল রাতে চাচা আমাকে ধর্ষণ করেছে।যার কোলেপিঠে মানুষ হয়েছি সে যে এত বড় সর্বনাশ করবে আমি ভাবতেও পারিনি।ওই জঘন্য লোকটার উপযুক্ত শাস্তি চাই আমি।"

শ্যামার মুখ থেকে সব শোনার পরে ঘেন্নায়  দেবিকার হৃদয়ের ভেতরটা জর্জরিত হয়ে উঠে।সে তার স্বামীর ঘরে যায় এবং তার চোখেমুখে লঙ্কারগুঁড়ো ছড়িয়ে দেয়।চিৎকার করে উঠে শয়তানটা।তারপর হাত ধরা ব্যাগ  থেকে ছোরা বের করে সুখবিন্দরের বুকের মাঝে বার বার কোপ মারতে থাকে।সে এখন আর শান্তশিষ্ট রমণী নয়।মহিষাসুর নিধনের প্রাক-মুহূর্তে রুদ্রমূর্তি ধারণকারী দেবী পার্বতী।নিদারুণ যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে একটা সময়ের পরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সুখবিন্দর সিং।এইভাবে মহিষরুপী অসুরকে বধ করে এক মহিষাসুরমর্দিনী।
                     ————————————————————


রুবি সেনগুপ্ত
ওয়েস্ট লেক রোড,
 বাই লেন, নিয়ার ওল্ড ইলেকট্রনিক অফিস, 
সুপার মার্কেট, সাহেববাঁধ, পুরুলিয়া,
পশ্চিমবঙ্গ 



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.