Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। ভবঘুরে ছেলে ।। মিনাক্ষী মন্ডল

 

ভবঘুরে ছেলে

মিনাক্ষী মন্ডল 

 


প্রায় দু'ঘণ্টা ধরে বসে,কবিতার একটা লাইনও আজ মাথায় আসছে না ওমের। অথচ ভাগীরথী নদীর ধারে, এই ছয়ষষ্ঠী মন্দিরে বসে সে একের পর এক কবিতা লিখে যায়...

আসলে মনটা যে বড় অশান্ত আজ। সকলে তাকে উদাসীন ভাবলে কি হবে ? ভাইটা তো তার নিজের, তাও আবার যমজ ভাই, মাত্র পাঁচ মিনিটের ছোট ওমের থেকে । তার এতো বড় অসুখের কথা শুনে মনটা কিভাবে শান্ত রাখবে ওম।তার ভাই সোম যে, বাবা-মায়ের বড় আদরের সুপুত্র। 

 মায়ের কাছে শোনা, 'এই ছয়ষষ্ঠি মন্দিরে মানত করেই নাকি তাঁরা যমজ ভাই ওম আর সোম জন্মেছে'। 

একেবারে একরকম দেখতে, একই সাথে খেলাধূলা, একই পরিবারের আদর পেয়ে বেড়ে ওঠা দুটি শিশু অথচ তাদের ভাগ্যচক্র একেবারে আলাদা। 

ছোট থেকেই ওমের উদাসীন মনোভাব, পাড়ায়-ঘরে কারো সাতেপাঁচে থাকে না আর ঝগড়া  তো নৈব নৈব চ। তেমনি পড়াশোনাতেও সে কোনদিনই মনোযোগী ছিলনা। তার একমাত্র মনোযোগ ওই কবিতা লেখায় আর মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া। বাড়িতে থাকলে সূর্য ওঠার আগেই এই ছয় মন্দিরে এসে কবিতা লেখে, যখন মন চায় বাড়ি ফিরে, যা পায় তাই খায়। চাহিদা হীন, বেরোজগেরে ছেলে ওম। এর জন্য বাবার কাছে কম কথা শুনতে হয় না ওকে, কতবার সামনে থেকে ভাতের থালা পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে তার বাবা ভূপতি বিশ্বাস।  তবুও ওম নিজেকে এতোটুকু বদলাতে পারেনি বা কোন প্রকার রোজগারের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি আজও।

অপরদিকে ভাই সোম, কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়ে... বর্তমানে কলকাতার একটা বহুজাতিক সংস্থায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সংসারের পুরো দায়িত্ব সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে । সংসারে তার খুব কদর বিশেষ করে বাবার কাছে। আর হবে নাই বা কেন! সংসারের ভালো-মন্দ সব সিদ্ধান্ত বাবা ওর সাথেই শেয়ার করেন। ঘরের সবচেয়ে ভালো খাবারটাও  বাবা সোমের পাতে দিতে বলেন কারণ ও তো খুব পরিশ্রমী ছেলে তাই উপযুক্ত আহারের প্রয়োজন তো হবেই।  সেই ভায়ের আজ দুটো কিডনি বিকল। কিছু খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না। ডাক্তারের মতে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে নইলে ভাই কে বাঁচানো যাবেনা, এমত অবস্থায় বাবা-মা দুজনেই দিশেহারা, ভাইয়ের নতুন চাকরি, কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে বললেই তো হলো না, তার একটা বিশাল খরচ আছে সেই খরচ বহন করার মতো ক্ষমতা তার পরিবারের নেই কিন্তু কিছু একটা তো ব্যবস্থা করতেই হবে নইলে ভাই কে বাঁচানো যাবেনা।

          কবিতা লেখা আজ আর হবে না বুঝতে পেরে, বাড়ির পথে রওনা দেয় ওম... গিয়ে দেখে মা কাঁদছেন, দাওয়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে বাবা।  বাইরে বেরোনোর জামাকাপড়ের ব্যাগ কাঁধে, ভারাক্রান্ত মন নিয়ে যেই বাড়ি থেকে বেরোতে যাবে ওম- তৎক্ষনাত তার বাবা বলে উঠলেন, ' এই এক ভবঘুরে ছেলে, বাড়ির এমন পরিস্থিতি দেখেও উনি চললেন? বাড়ির প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই তোমার'? কথা না বাড়িয়ে ওম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। বিকেলের ভিজিটিং আওয়ার্সে ছেলেকে দেখে এসে ভূপতি বাবু বাড়িতে সুখবর নিয়ে এলেন। ডাক্তার বলেছেন, একজন  তার ছেলেকে একটি কিডনি দান করতে রাজি হয়েছে। দু'দিন পর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। 

অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে ডাক্তারবাবু বললেন, 'অপারেশন ভালো ভাবে হয়েছে, আর কোন ভয় নেই, এখন নিয়ম মেনে চললেই সোম ভালো থাকবে'।

ভূপতি বাবু ডাক্তারের কাছে এগিয়ে গিয়ে দু'হাত জোর করে বললেন,ডাক্তারবাবু আমার ছেলেকে কিডনি দিয়ে আমার এত বড় উপকার কে করল খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ডাক্তারবাবু বললেন,

"ছেলেটির নাম ভবঘুরে বিশ্বাস"।

 ছবিঋণ- ইন্টারনেট।  

                          ----------------------



   

 

Minakshi Mandal

Po. Bansberia

Dist, Hooghly

9123882176


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.