" বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে
নিকানো উঠোনে ঝরে
লাগে রৌদ্র...... ...... চন্দন
...... ..... ....... ........
....... .... উত্তাল নদীর ......
....... ..... .....
গো রাখালের ......
....... ...... পুকুরে কলস ভাসে
...... ...... ...... ...... ....... "
গানটা দাদু যতবার শোনে ততবার চোখ দিয়ে ঝরে নোনা পানির ধারা। নিজের
অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করেও পারে না। পুরানো দিনের স্মৃতিগুলো
ডালপালা ছড়ায়।
বুকের ভিতর দলা পাকানো ব্যথাগুলো ধামসা মাদলের মতন বাজতে থাকে। স্মৃতির ধূসর মেঘ সর্বদা আচ্ছন্ন করে রাখে।
ছোটনাতি বাড়ির অমতে খ্রীষ্টান মেয়েকে বিয়ে করায় দাদু ভীষণভাবে
মনমরা হয়ে আছেন। বাড়িতে রীতিমত সাহিত্য চর্চা হয়। বাড়ির আনাচে কানাচে ইটের
দেওয়ালে বাংলা ভাষা , ভাষা আন্দোলন, কবিতা, সাহিত্যের গন্ধ লুকিয়ে আছে।
নতুন বৌমা বাংলা একদমই জানেনা। অথচ বৌমার বাবা মা বাঙালী খ্রীষ্টান।
বিয়ের প্রায় এক বছর কেটে গেছে। নাত বৌমাকে নিয়ে কম অশান্তি হয়নি
সংসারে। নাতবৌমার বাংলা না জানাটাই চরম অসন্তোষের কারণ। দাদুর একটা চাপা
অভিমান ছিল এই কনভেন্ট এডুকেটেড বৌমার প্রতি। বৌমার পোষাক, ইংলিশে ফটর ফটর
করা, কালচার সব কিছুই দাদুকে কষ্ট দিয়েছিল। দাদু মুখে কিছু না বললেও ভিতরে
ভিতরে গুমরে গুমরে মরত। এরজন্য অনেক অপমানও সহ্য করতে হয়েছে ইউনা কে। ইউনা
মুখ বন্ধ করে সব সহ্য করে গেছে। চোখের কোণে জমা জল খেজুর গাছের মত টসটস করে
চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ত। তবে ইউনাও একটা জবাব দেবার জন্য বদ্ধ পরিকর ছিল।
এ বাড়িতে প্রায় সাহিত্য চর্চার আসর বসত। কবিতা, সাহিত্য, ভাষা নিয়ে
অনেক আলোচনা হত। মাঝে মাঝে বসত বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আসর।
অনেক সময় সাহিত্য সংক্রান্ত বিডিন্ন আলোচনা ছাড়াও চলত কবিতা নিয়ে
প্রতিযোগিতা । বাড়ির মহিলারাও এতে অংশগ্রহণ করত। তারাও বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ
করে তুলেছিল এ বাড়ির গৌরব। শুধু ছোট নাতবৌ ব্রাত্য থেকে গেছে।
দাদু একটা ছোট ম্যাগাজিন বার করেছিল - " দুইটি পাতা"। ঐ ম্যাগাজিনে বাড়ির
অনেকেই
লেখালিখি করত।দাদু সকলকে উৎসাহ দিতেন। "দুইটি পাতা " ম্যাগাজিন ছিল দাদুর
প্রাণ, হৃৎস্পন্দন। পরে দাদু অসুস্থ হওয়াতে ঐ ম্যাগাজিনের কাজ অনেকটাই থেমে
গেছে।
ছোট
নাতবৌ ইউনা বুঝতে পেরছিল বাংলা ভাষাটা না জানতে পারাটা শুধু দাদুই নয়
অনেকের কাছেই ক্ষোভের কারণ। তাই পরিবারের মান রাখতে ইউনা যোগা ম্যাডামের
কাছে একটু একটু করে বাংলা শিখতে শুরু করে। প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হলে পরে
আস্তে আস্তে সকল অসুবিধা দূর হয়। ইউনা ভাল গান করত। তাই যোগা ম্যামের কাছে
গানটাও শিখতে শুরু করে। ম্যামও এই রকম একজন ভাল সিরিয়াস ছাত্রী পেয়ে ভীষণ
খুশী।
বেশ
কয়েক মাস নিয়মিত ক্লাস করার পর ইউনা বাংলা ভাষা অনেকটাই রপ্ত করে ফেলেছে।
এখন ও গানটাও ভাল গায়। তবে মাঝে মাঝে ভাষাগত জটিলতার কারণে অনেক সমস্যার
মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সব কিছুকে ভেঙ্গে চুরে নিতে হচ্ছে।
সামনেই একুশে ফেব্রুয়ারী। পাড়ায় ঐদিন দারুণ অনুষ্ঠান হয়। অনেক
নামী দামী কবি সাহিত্যিকদের ভিড় হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও
করা হয়। দাদু তাই ভীষণ ব্যস্ত। অনুষ্ঠানের মূল কাণ্ডারী দাদুই। অনেক লেখকের
ম্যাগাজিন সেদিন প্রকাশ করা হয়। শিরায় শিরায় হিমোগ্লোবিনের বাড়তি সংযোজন
হয় যেন ঐদিন। বাড়ির সকলে ঐদিন নতুন পোষাকে মঞ্চ বা তার আশ পাশ আলো করে বসে।
একুশে ফেব্রুয়ারীর মহিমা সবাই আস্বাদন করে। একটা ছোট করে রক্তদান শিবিরের
আয়োছন করা হয়। প্রচুর লোকের ভিড় হয়।
অনেক সাধনার পর ইউনা বাংলা ভাষাটা আয়ত্ত করে নিয়েছে। অমর একুশের
দিন একটা গান করার সাধ হয়েছে মনে। সেই সাথে বিতর্ক প্রতিযোগিতাকে যোগদান
করার ইচ্ছাও রয়েছে। সব দিক দিয়ে আজ নিজেকে মেলে ধরতে চাই। চোখের কোণে জলটা
টসটস করে উঠল।
আজ একুশে ফেব্রুয়ারী। ভাষা দিবস। সকাল থেকেই অনুষ্ঠান লেগেই আছে।
মঞ্চে বিদগ্ধ লোকেদের ভিড়। দাদুকে খুব ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। জন সমাগম
হয়েছে অনেক। মানুষের শারিরীক ভাষার মধ্যে ভাষা শহীদদের প্রতি সমবেদনা ,
শ্রদ্ধা ফুটে উঠছে। মাইকে বাজছে সুন্দর দেশাত্মবোধক গান। যা আজকের দিনকে
আরো বেশী করে গৌরবাণন্বিত করে তুলছে।
কিন্তু
সমস্যা বাঁধল যিনি উদ্বোধনী সংগীত গাইবেন তিনি অসুস্থতার জন্য আসতে পারেন
নি।দাদু ভীষণ রেগে আছেন। এখন উদ্বোধনী সংগীত কাকে দিয়ে গাওয়ানো যায় সেটাই
চিন্তার বিষয়। ঘড়ির কাঁটা একটু একটু করে এগোচ্ছে। সবাই খুব টেন্সড্।
একটু পরেই মঞ্চে উঠল লাল পাড় শাড়ি পরিহিতা নাতবৌ ইউনা ।একটু দম নিয়েই কডলেশটা হাতে ধরে শুরু করল -
" আমি বাংলায় গান গায়
....... ..... .. .......
..... ..... ...... .......মুখ
...... ...... .........
বাংলায় ভালবাসি
...... ..... ..... বরণ করেছি
..... ....... ......"
গান শেষ হতেই তুমুল হাততালিতে ফেটে পড়ল চারিদিক। ইউনার চোখ দিয়ে টসটস করে নামছে নোনা জলের ক্ষীণ মেঘনা। আবেগে আপ্লুত।
বাংলা না জানা নাতবৌ এর গান শুনে দাদুর সব অভিমান চলে গেল।বৌমা
যে অল্প দিনে বাংলা ভাষা রপ্ত করে ফেলেছেন এটা দাদু বুঝতে পারেন নি। বাড়ির
অন্য সদস্যরাও না।
......... ......... ...........
সেদিন ঘরটা একটু ঝারপোছ করতেই বেশ কিছু পুরানো ম্যাগাজিন ইউনা হাতে
পাই। ম্যাগাজিনের গায়ে ধুলো জমে আছে। " দুইটি পাতা" ম্যাগাজিন ইউনার হাতের
ছোঁয়ায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠল। কাজ সেরে সে "দুইটি পাতা" পত্রিকা নিয়ে বসল।
পত্রিকার পরতে পরতে বাংলা ভাষার, বাংলা মায়ের রূপ লাবণ্য। যত পড়ছে ততই
মনটা বিভোর হয়ে উঠল। অনেক জিনিস সে জানতে পারল। জানতে পারল হারিয়ে যাওয়া
বেশ কিছু স্মৃতি।
ম্যাগাজিনটা বাক্সবন্দী, ধুলো বন্দী হয়ে বড়ই কষ্ট পাচ্ছে। ওরা ডালপালা
ছড়াতে চাই। ইউনা ম্যাগাজিনটা আবার নতুন করে বার করতে চাই। এই ব্যাপারে
দাদুর সাথে কথা বলতেই দাদু খুশীতে চনমন করে উঠল। নাতবৌ এর মাথায় আশীর্বাদের
একটা শীতল স্পর্শ ইউনার কনফিডেন্স লেবেলটা অনেকটাই বাড়িয়ে দিল।
ইউনা এখন দাদুর অনেকবেশী স্নেহভাজন আস্থাভাজন হয়ে উঠেছে।
ম্যাগাজিন নিয়ে অনেক ব্যস্ত।তবে ইদানিং তার এখন হাঁটা চলা করা বারণ। কারণ
পরিবারে নতুন অতিথি আস্তে চলেছে। দাদু খুব খুশী। নাতবৌ এর কোল আলো করে আসছে
সন্তান। তবে তার জন্য লেখার কাজ বা পত্রিকার কাজ থেমে থাকেনি। দু একটা
কবিতাও লিখে ফেলেছে। শুধু সেগুলি প্রকাশের অপেক্ষায়।
তবে সব সমীকরণ বদলে যেতে বেশী সময় লাগেনি। ভাগ্যদেবী হয়ত অন্য কিছু লিখে গিয়েছিলেন।
বেশ কিছু মাস পর ..............
সন্ধ্যের পর পরই দুসংবাদটা আসল। নাতবৌ একটা ছেলের জন্ম দিতে
গিয়ে অকালে চলে গেল।হঠাৎ করে মাল্টি অর্গান ফেলুর হয় ইউনার। নাতবৌ চলে
যেতেই একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানও তার গরিমা হারাল। "দুইটি পাতা" পত্রিকা
হারাল তার প্রকৃত উত্তরসুরী। ম্যাগাজিনের উপর ধুলোর প্রলেপ হল আরো বেশী
চওড়া।
নাতবৌ এর
ছেলেটা ধীরে ধীরে বেশ বড় হয়ে উঠছে। যত বড় হচ্ছে ওর দুষ্টুমি তত বাড়ছে। তবে
পরিবারিক গুণে সব রকম গুণ ও ধারণ করেছে। লেখার হাত খুব ভাল। কবিতাটাও বেশ
ভাল লেখে। আবৃত্তি ভালই করে। দাদুর কাছে গানটা শিখে নিচ্ছে।
একটু বড় হতেই ওর গানের সুখ্যাতি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক দূর
ছাড়িয়ে চলে যায়। আজকাল অনেক অনুষ্ঠানে ওকে গাইতে দেখা যায়। বাংলা ভাষা
নিয়ে ওর আবেগ দেখার মত। মা মরার সকল ব্যথা ও গানের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে চাই।
খুশীর খবরটা যখন দাদু পেল তখন চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি।
নাতির ছেলেকে বুকে জড়িয়ে পরম আদরে ভরিয়ে দিয়েছিল। কয়েকমাস পরেই ঢাকাতে অমর
একুশের বিশাল অনুষ্ঠান। পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন স্কুল থেকে দশ জন ছেলে মেয়ে
সুযোগ পেয়েছে। তার মধ্যে ইউনার ছেলে নৈঋত আছে।
সব শুনে অশক্ত দাদু আবার চলার জন্য নতুন করে শক্তি পেল। আবেগের ভিসুভিয়াস যেন নতুন করে তার লাভা ছড়াচ্ছে।
আজ একযুগের ও বেশী বছর পর চৌধূরী বাড়ির আনাচে কানাচে একুশে
ফেব্রুয়ারী তার ডালপালা মেলছে। বাড়িতে তাই খুশীর সোনা রোদের আলপনা। সবাই
একযোগে মেতে উঠেছে আনন্দে।
........ ....... .......
........ ........ .......
আজ আবার ভাষা দিবস।একুশে ফেব্রুয়ারী ফিরে এসেছে।ইউনার ছবি মালায়
মুড়ে দেওয়া হয়েছে। হালকা শোকের মাঝেও যেন বসন্তের ফাল্গুনী হাওয়া।
আজ বহু বছর পর শোকাচ্ছন্ন দাদুর চোখ টিভিতে।ছোটনাতি ও ইউনার
ছেলে নৈঋত ঢাকা গেছে একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ওদের স্কুল
থেকে ওই শুধু ডাক পেয়েছে।
" আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো
...... ...... ........
....... ....... .....
আমি কি ভুলিতে পারি
....... ...... ..... "
টিভিতে নৈঋতকে দরাজ গলায় গাইতে দেখেই দাদুর চোখ টসটসে করে উঠল।
পনেরো বছর আগের একটা টাটকা স্মৃতি দাদুর হৃদয়ের অলিন্দে "অমর একুশে"র
মাদলের ঝড় তুলল। নাতবৌ বেঁচে আছে নৈঋতের গানে। দাদুর খদ্দরের পাঞ্জাবীটা
যখন চোখের সব জল শুষে নিচ্ছে, তখন পদ্মার ওপারে কলকাতার এক তরুণ তুর্কির
গান যেন বোহেমিয়ান শিহরণ এনেছে।
নৈঋত কথা দিয়ছিল "দুইটি পাতা" আবার নতুন করে বার করবে। তার মা ,
দাদুর স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু পারেনি। কোন কারণে করা হয়নি। তবে সে
অনেকটা কাজ এগিয়ে রেখেছিল তার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।
বারো ক্লাস পাস করার একটু আগেই নৈঋতের বাইক এক্সিডেন্ট হয়।তবে
ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। দুর্ঘটনার তিন বছরের মাথায় নৈঋত
তার মায়ের কাছে ফিরে যায়।
নৈঋতের মৃত্যুর কাছে এই রকম এক আকস্মিক সমর্পণ দাদু কিছুতেই
মেনে নিতে পারেনি। দাদুর শরীরটা আরো বেশী মাত্রায় খারাপ হতে থাকল। " দুইটি
পাতা" তার মহিমা হারিয়ে আগের জায়গায় ফিরে গেল। পেল পুরু জমাট ধুলোর আরো
শক্ত প্রলেপ। বাংলা ভাষার চর্চাটাও কেমন যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেল।
দু দুটো শোক চৌধুরীবাড়ির সব আলো কেড়ে নিয়েছে। দাদু বুঝতে
পেরেছেন তারও যাবার সময় হয়ে গেছে। তবু যাবার আগে একটা অপূর্ণ বাসনা সেরে
যেতে যান।
ছোটনাতিকে যেহেতু ভালবাসতেন, তাই তার সংসারটা আবার ঢেলে সাজাতে চান।শুরু হল
ওর জন্য মেয়ে দেখা। তবে ছোটনাতির বয়সও কম হয়নি। অনেকটাই বেড়ে গেছে।
মাঘের শুরুতেই ঘর আলো করে আসল ছোটনাতির নতুন বৌ। তিনি
রবীন্দ্রবিশারদ। আবার শিক্ষিকাও। বাংলা ভাষা ও তার রূপ রস গন্ধ স্পর্শ ভালই
বোঝেন।
নতুন
নাতবৌ এ বাড়িতে পা রাখায় আবার সব কিছু বাংলা ভাষার চর্চা, কবিতা লেখা নতুন
করে তার গতি ফিরে পেল। দাদুও ভীষণ খুশী।জীবনের শেষ বসন্তে এসে অনেক কিছুই
দেখে যেতে পারছেন।
***********
ছোটনাতি ও নাতবৌ গতকালই শান্তিনিকেতন থেকে ফিরেছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই উঠোনে পা রাখতেই দাদু কেমন যেন অবাক হলেন।
উঠোনে পলাশ ফুল দিয়ে সুন্দর করে লেখা আছে " একুশে ফেব্রুয়ারী"। বাড়ির
অনেকে ভুলেই গিয়েছিল যে আজ ডাষা দিবস। দাদুও বয়সের জোয়ার ভাঁটাতে সব কিছু
মনে রাখতে পারেন না আখের মতন। দাদুর চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল। একটু পরেই
নতুন নাতবৌ এর ঘর থেকে ভেসে আসল সুন্দর গান -
"আমি বাংলায় গান গায়
..... ..... ......
...... ..... ......
........ বাংলার মুখ "
মরচে পড়া জং ধরা টিনের বাক্স থেকে পুরানো জীর্ণ ছেঁড়া "দুইটি
পাতা" এর খণ্ড গুলো নাতবৌ এর হাত ধরে বেরিয়ে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
নাতবৌ ও গুলোতে প্রাণ সঞ্চার করতে চাই।
বেশ কিছু মাস কেটে গেছে। নতুন নাতবৌ নৈঋত আর তার মায়ের "দুইটি
পাতা"র অসমাপ্ত কাজ অনেকটাই গুছিয়ে ফেলেছে। নিজে একজন রবীন্দ্রবিশারদ হওয়ায়
কাজটা করতে বেশ সুবিধাই হয়েছে। নৈঋত আর পুরানো নাতবৌ এর লেখা কবিতা "দুইটি
পাতা" পত্রিকাকে অনেক পল্লবায়িত করেছে। এখন শুধু প্রেসে দেবার অপেক্ষা।
দেখতে দেখতে মাঘ মাস শেষ হয়ে ফাল্গুন মাস পড়ল। বসন্তের ঝিরঝিরে বাতাসে সব কিছুই যেন আগের মতন ফিরে ফিরে আসছে।
আর মাত্র দুদিন পরেই একুশে ফেব্রুয়ারী। " দুইটি পাতা "
পরিমার্জিত হয়ে ছেপে বেরিয়েছে। দাদু ঝাপসা চোখে অনেক কবার চোখ বুলিয়েছেন
পত্রিকার উপর। সুখবরটা নতুন নাতবৌ সকলকে দুপুরেই দিল। বাংলাদেশ সরকারের
আমন্ত্রণে তাকে ঢাকা যেতে হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
******* ******* ************
একুশে ফেব্রয়ারীর দিন ওপার বাংলা মুখরিত হল, আলোড়িত হল নতুন
নাতবৌ এর গানে। শুধু তাই নয়। নতুন নাতবৌ এর হাত ধরে " দুইটি পাতা"
পদ্মাপাড়ের ফাল্গুনের শিশির ভেজা মাটি স্পর্শ করল। যে "দুইটি পাতা" এর
একটি পাতা নৈঋত আর একটি পাতা ইউনা।
দাদু পুরো অনুষ্ঠানটাই টিভিতে দেখেছে। দাদুর দুচোখ বেয়ে নেমে
আসছে নিষ্পাপ জলের ধারা - যার একটি স্রোত নৈঋত আর একটি স্রোত ইউনা। ঠিক
দুটি নদী মেঘনা, যমুনার মতন।
নাতবৌ ইউনার এর হাতে বোনা চাদরটা শরীরে মেখে দাদু কফিতে চুমুক দিয়ে আপণ মনে গুণ গুণ করে ওঠল,
" বাংলা ভাষা .....
... ...... ...... .........
অন্ধ বাউলের ....... ....... ........
..... ....... ........ ..........
চোখে ভেসে ওঠে চেনা ছবি
একুশের প্রভাত ফেরী
...... ....... ........... ....... "
গান করতে করতে দাদু ধীর পদক্ষেপে হেঁটে সোজা ইউনার ঘরে প্রবেশ
করলেন। ঘরে ঢুকেই জানালাগুলো খুলে দিলেন। ফুলের মালা, ধূপকাঠি আগেই আনা
হয়েছিল। ইউনার ছবির পাশে নৈঋতের ছবিও জ্বলজ্বল করছে।
ছবি দুটোতে মালাগুলো চড়িয়ে দাদু ভেজা চোখে ছবির দিকে চেয়ে থাকলেন
কিছুক্ষণ।ছবির ভিতর থেকে দুটো প্রাণ যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। আর সগর্বে
বলছে,"দাদু, তুমি চিন্ত করোনা, আমরা আছি। আর আজীবন থাকব, তোমার, আমার,
আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারীর আবেগকে সফল করার জন্যে। তুমি দেখবে, আমরা ঠিক এসে
গেছি।"
দাদু ধুতির খুঁটে চোখের নোনাপানিটা মুছে চেয়ারে হেলান দিল। বাইরে অমর একুশের গান ভেসে আসছে।
".......... .... .......
...... .... .........
আমি বাংলায় ভালবাসি
আমি বাংলাকে ভালবাসি
আমি......... ........
......... .......... কাছে আসি
........ ...... জল..
.......শেষ চুমুক........"
গানের পারদ যত চড়ছে, মেঘনা, যমুনার ঢেউ তত বাড়ছে। দুই নদীর ঐ
ছোট ছোট ঢেউয়ে "দুইটি পাতা" যেন ভেসে ভেসে যাচ্ছে। এক মাটি থেকে আর এক
মাটিতে। এক মায়ের আঁচল থেকে আর এক মায়ের বর্ণাঢ্য আঁচলে। এক দেশ থেকে
অন্য দেশে।
"আমি বাংলায়.......
........ ......... ........
বাংলা আমার জীবনাননদ.......
........ ............ বার.....
দেখি বাংলার মুখ......."
ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
---------------------------------------------------
Address: 85, Kalibari Road, Nalta
Near Air Port Auto Stand
PO: Italgachha
Kolkata - 28
District 24 parganas
West Bengal
Mobile No: 9073939997/9932958615(wh ap)