আমার শপথ
শুভ্রা ভট্টাচার্য
আমি একজন পুত্রের মাতা হিসাবে একটি সুন্দর মননশীল সন্তান গঠনে নিজের কাছে তথা সমগ্র সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। পুত্রের সর্বোত্তম শুভাকাঙ্খী ও শিক্ষাগুরু হিসাবে আমি সর্বপ্রথম তাকে সুচরিত্র ও সুমানসিকতা গঠনের শিক্ষা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি জানি, মাতৃগর্ভে সন্তান ধারণ থেকে জন্মগ্রহণের পরবর্তী পাঁচটি বছর মনোবিজ্ঞানের ভাষায় মন গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সময়; এই সময়ে মায়ের চিন্তা ভাবনা রুচিশীলতা চারিত্রিক গুণাবলী নীতি আদর্শে সন্তান প্রস্ফুটিত পরিচালিত বিকশিত হয় অর্থাৎ মায়ের জীবনবোধেই তৈরি হয় সন্তানের জীবনবোধ। ডাক্তারি পরিভাষায় মা ই যেহেতু সবথেকে বড়ো মনোবিজ্ঞানী, মুখে কিছু বলার আগেই মা আত্মজর শরীর ও মনের কথা বুঝে যায়। তাই মা চাইলে খুব সহজেই পারে মাটির ঢেলার ন্যায় ছোট্ট শিশুকে যথার্থ সুন্দর আকার দিতে। মায়ের ঘনিষ্ঠ স্নেহের পরশে তার প্রাণমন অক্সিটোসিন নামক সুখ হরমোনে পরিপুষ্ট হয় যার কারণে সম্মান ও ভালোবাসা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ে। তাই আমিই তাকে শেখাতে পারবো সমগ্র নারী জাতির প্রতি সম্মান ও সম্ভ্রমবোধ, নারীকে রক্ষা করার শিক্ষা দিয়ে সমাজে নারীর প্রতি যে অন্যায় জোর জুলুম হয় তাকে করবো রোধ। কেবলমাত্র নারীকে আত্মরক্ষা শেখালেই নারী অবমাননার ঘটনা বন্ধ হবে না ও সমাজ সুস্থ সুন্দর সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবে না। কারণ তিনের শিশু বা আশির বৃদ্ধা নিজ সুরক্ষায় অক্ষম অচল। তাইতো মা হিসাবে আমিই পারবো তাকে বোঝাতে "নারী কোনো কামনা বা প্রতিশোধের বস্তু নয়, তাদের অসম্মানে জীবনধারায় ছন্দপতন হয়; নারী হতেই তোমার সৃষ্টি, নারীতেই তোমার মুক্তি; তাদের অসহনীয়তায় ক্ষুব্ধ নারীশক্তি তথা প্রকৃতি তোমাকেই করবে বিলুপ্তি"।
আমরা মায়েরা একত্রে শৃংখলাকারে আরও বলবো "শ্রেষ্ঠত্বের তকমা এঁটে পুরুষ সিংহ হয়ে উঠো না; তুমি মানবিক হও, নমনীয় হও, মায়ামমতাময় হও; মনে রেখো তুমি যতটা দেবে ঠিক ততটাই ফেরত পাবে - তা সে অসম্মান অবহেলা কষ্ট হিংস্রতা যাই হোক"। সুচেতনা আর বিবেকবোধ জাগাতে তাকে আত্মস্থ করাবো স্বামী বিবেকানন্দের সেই কালজয়ী যুগান্তকারী বাণী, "যে সমাজ সংসারে নারীর নেই কোনো যোগ্য সন্মান, শত চেষ্টাতেও হবে না সেথায় যথার্থ উন্নয়ন"। তাহলে নিশ্চয়ই সদ্যজাত পুত্র কোলে আমাদের আর ভাবতে হবে না যে শিব গড়তে গিয়ে আমার সোনাবাবু রাক্ষস হবে না তো! আমি জানি একজন সম্মানীয়া মাতার পুত্র কখনো অন্যকে অসম্মান করে না। আমাদের এই নিখাদ পবিত্র ভালোবাসার বর্ম এ বিশ্বের সকল শুভশক্তির ভাঙনকে করবে রোধ। একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে সুবন্ধনে গড়ে উঠবে নারী পুরুষের পাশাপাশি সৌন্দর্যমন্ডিত সহাবস্থান। এভাবেই সন্তান মনুষ্য থেকে দেবত্বের দিকে উন্নীত হবে আর এই মননশীলতা বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু সামাজিক পরিস্থিতিতে খুবই দরকারী। তাই এ বিশ্বকে সকল নারীর বাসযোগ্য করে যেতে আমি সুমাতা হিসাবে নিজের কাছে নিলাম এক দৃঢ় শপথ - সমগ্র বিশ্বনারীর মানমর্যাদা সম্মান সম্ভ্রম অক্ষুণ্ণ রাখার অঙ্গীকারে দায়বদ্ধ আমি পরম যতনে সাজাবো আমার জীবনরথ, এক মহান পুত্রের মহীয়সী মাতা হওয়ার সদিচ্ছায় আমার সর্বোত্তম ভালোটুকু দিয়ে ফুলে ফুলে ভরাবো পুত্রের জীবনপথ।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
---------------------
শুভ্রা ভট্টাচার্য ( শিক্ষিকা )
বাবুগঞ্জ, শিব তলা, হুগলী।
ফোন নম্বর: ৯৮০৪৬৮৪৮১৮/ ৮৫৮২৯৭৯১৭২