মানস দেব
প্রকাশ বাবু একটু হন্তদন্ত করে হাঁটতে হাঁটতে এ. টি. এম- এর কাছে এলেন টাকা তোলার জন্য । অফিসে আজকে কাজের ভীষণ চাপ রয়েছে । কোনভাবেই দেরি করা সম্ভব নয় তার পক্ষে ।
কিন্তু এ. টি. এম - এ ঢোকার গেটে একজন বয়স্ক ব্যক্তি তাকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন - " বাবা , আমাকে একটু টাকা তুলে দেবে ? " একথা বলেই তিনি এ.টি. এম কার্ডটি এগিয়ে দিলেন । আর একটি চিরকূট বের করে হাতে দিয়ে বললেন - " এতে সব লেখা আছ। "
প্রকাশ বাবু একটু বিরক্ত হলেও বৃদ্ধের কথা অমান্য করতে পারলেন না । জিজ্ঞাসা করলেন - " কত টাকা তুলবেন ? " বৃদ্ধ বললেন - " দুই হাজার টাকা। "
টাকাটা তুলে বৃদ্ধের হাতে দিয়ে বললেন - " দিনকাল ভাল নয় ; এভাবে সবাইকে সব কিছু দেবেন না । কার মনে কি থাকে, কে জানে ! "
- " কি করবো বাবা, আমাদের মত মূর্খ লোকেরা কি বোঝে ? বর্তমানে সঙ্গে তাল মেলানো কি আমাদের সম্ভব ? বিশ্বাস তো রাখতেই হবে বাবা। "
- " তা বুঝলাম , কিন্তু বাড়িতে কি কেউ নেই যে টাকাটা তুলে দেবে ? "
- " না বাবা । আমার জীবনসঙ্গীনী দু'বছর আগে চলে গেছে । এখন বড়ো একা । "
- " ছেলে - মেয়ে কেউ নেই ? "
- " এক ছেলে ছিলো । সে বিয়ের পর বউ নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে । খোঁজও নেয় না। "
হঠাৎ ফোনের আওয়াজ পেতেই বৃদ্ধ পকেট থেকে ফোন বের করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন - " হ্যাঁ , বাবা টাকা তুললাম । " প্রকাশ বাবু শুনতে পেলেন কে যেন বলছেন - " এবার একটা টোটো করে সোজা বাড়ি চলে যাবে । আমি পূজোতে তোমার সঙ্গে দেখা করবো । তোমার জন্য ধুতি - পাঞ্জাবি কিনেছি । "
- " কার ফোন এসেছিলো , ছেলের ?
- " না বাবা , ও আমার ঠিক ছেলে নয় , কিন্তু ছেলে থেকেও বেশি । "
- " তবে উনি কে ? "
বৃদ্ধ বলতে শুরু করলেন - " যখন আমার যুবক বয়স তখন ওর বাবার দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে যায় । আমার প্রতিবেশী বলে আমি একটি দিয়ে ওর বাবার প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলাম । সেদিন ওরা আমাকে অনেক টাকা দিতে চেয়েছিল । কিন্তু আমি নেইনি। কিন্তু যেদিন আমার নিজের ছেলে আমাদের ছেড়ে চলে যায় সেদিন থেকে আমাদের বুড়ো - বুড়ির ভীষণ খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। খবরটা পেয়ে এই গণেশ আমাদের ভার গ্রহণ করে । প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে পাঠায় । টাকা তুললেই ওর মোবাইলে খবর যায় , আর ও ফোন করে । "
কথায় বলে , যার কেউ নেই তার ভগবান আছে । কথাটা মিথ্যে নয় বাবা । ও আমার ভগবান ।
প্রকাশ বাবুর অফিসে পৌঁছাতে দেরি হলেও বাস্তব সত্যকে সম্মুখে দেখতে পেলেন ।
-----------------
[ বালুরঘাট , দক্ষিন দিনাজপুর , পশ্চিমবঙ্গ ]