এপ্রিল ফুল
অশোক দাশ
অলকেশ লাহিড়ী নামজাদা উকিল। যার দাপটে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায় ।এখন অবশ্য সে দাপট আর নেই ,বয়স বেড়েছে ওকালতি করেন নি ।এক ছেলে এক মেয়ে। মেধা যোগ্যতায় তারা বিদেশে কর্মরত। ছেলে থাকে জার্মানিতে আর মেয়ে ক্যালিফোর্নিয়াতে। তারা সেখানেই পাকাপাকি সংসার পেতেছে।
অলকেশ বাবু আর তার স্ত্রীকে ছেলেমেয়েরা অনেক অনুরোধ করেছেন, তাদের কাছে নিয়ে যেতে ।কিন্তু অলকেশ বাবু জন্মভূমির মাটি কিছুতেই ছাড়তে চান না ।আজন্ম যে মাটি তাঁকে লালন পালন করেছে, বড় করে তুলেছে সম্মানিত করেছে, সে মাটির মায়া ত্যাগ করে অন্যত্র গিয়ে শান্তি পাবে না। যে পাড়া-প্রতিবেশীর ভালোবাসায়, সুখে-দুখে তাদের ভাগীদার হয়েছে, তাদের ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে যেতে তার মন চায় না।
আজ প্রায় এক বছর হল অলকেশ বাবুর স্ত্রী রমলা দেবিও মারা গেছেন। কিন্তু ছেলেমেয়েদের শত অনুরোধেও জন্মভিটে ছেড়ে যাননি।
তার রক্ত ঘাম জল করা পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়া বাড়িতে একাই থাকেন। কাজের লোক আছে, রান্নার মাসি আছে, বাগানের মালি আছে, আর আছে পাড়ার যত কচিকাঁচা ছেলে মেয়ে ।তাদের নিয়ে অলকেশ বাবুর আনন্দে দিন কেটে যায়। প্রাণোচ্ছল মানুষ ।বয়স সত্তর পার করে দিব্যি আছেন। তিনি বলেন বয়সটা সংখ্যা মাত্র, মনটা যদি সবুজ থাকে কোন কাজেই উদ্দীপনার অভাব থাকে না।
সময় পেলেই কচি-কাঁচার দল ছুটে আসে অলকেশ দাদুর কাছে, দাদু তাদের কত গল্প শোনায় ,লজেন্স বিস্কুট দেয় ।বাগানের ফলমূলে তাদের অবাধ অধিকার।
নিষ্পাপ সরল শিশুরা দাদুর কাছে রাগ- অভিমান, হাসি-কান্না, ব্যথা -বেদনা, বাড়িতে কে কি রকম আচরণ করে, কে সব থেকে তাকে ভালোবাসে সব অকপটে নির্দ্বিধায় বলে ফেলে।
প্রতিদিন বিকালে খেলার মাঠে যায় কচিকাঁচাদের সঙ্গে মজার খেলা খেলে। পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেয়। এ তার নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
অলকেশ বাবু প্রতিবছর মজার ছলে তাদের ঠকিয়ে এপ্রিলফুল করে। কোন বছরে দাদুকে তারা ঠকাতে পারে নি। তাই কচিকাঁচার দল এবারে প্ল্যান করেছে দাদুকে তারা ঠকাবেই।
দেখতে দেখতে এসে যায় সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
কচিকাঁচার দল পূর্ব পরিকল্পনা মতো মাঠের চারদিকে ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। আগেই অলকেশ বাবুকে ফোন করে জানিয়ে দেয়,দাদু যেন তাড়াতাড়ি মাঠে চলে আসে।কারণ ভোম্বল খেলতে খেলতে ঠ্যাং ভেঙে ফেলেছে। কারণ এই কথা বললে দাদু আর স্থির থাকতে পারবে না ,ঠিক চলে আসবে।
অনেক সময় অতিবাহিত হল তবুও দাদুর দেখা নেই, এমন সময় হ্যাবল কাকা দাদুর বাগানের মালি, হন্তদন্ত হয়ে মাঠের দিকে আসে , এবং হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে , দাদু আর নেই। সকলে সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে। হ্যাবল কাকা বলতে থাকে আজ সকালে বাথরুমে পড়ে গিয়ে হার্টফেল করে মারা গেছেন।
সকলে বাকরুদ্ধ স্তম্ভিত হয়ে যায়। তারা দাদুর বাড়ির দিকে দৌড় লাগায়। দাদু শুয়ে আছে খাটে। দাদু যেন তাদের দিকে চেয়ে বলছে, কিরে তোরা আমাকে ঠকানোর প্ল্যান করেছিলিস, পারলিনা তো! আমি তোদের এপ্রিলফুল করে চির বিদায় নিলাম । সকলের অজান্তে চোখ থেকে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু অশ্রুকণা দাদুর চরণে।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
-----------------------------------------
অশোক দাশ
ভোজান,রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোবাইল নম্বর:-৮৩৪৮৭২৫৩৩৩