ফ্যানভাতের লিটিল ম্যাগাজিন
দেবব্রত রায়
পৃথিবীতে মূল্যহীন বলে যে এক ছটাকও কিছু আছে, বা কোনোকালেই ছিল তা আমার জানা নেই এবং আমি বিশ্বাসও করি না। ভাঙাচোরা এমন কি, ব্যবহারের পর দূর-ছাই জিনিসপত্র- গুলোকেও অবন ঠাকুর শুধুমাত্র, হাতের জাদু দিয়েই তৈরি করেছিলেন কাটুমকুটুম ! আমাদের জীবনদারিতে যার মূল্য অপরিসীম এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা বার্বিডল কিংবা, টেডিকেও যেন হার মানায়। একটা অপরিণত ধ্যান-ধারণা থেকে অন্ধকারের সঙ্গে অনেকেই অসামাজিক, ভয়ংকর অথবা,অপাংক্তেয় ইত্যাদি-ইত্যাদি বিশেষণগুলোকে জুড়ে দেয় কিন্তু, সেই অন্ধকার থেকেই উঠে আসে হীরকখণ্ড,খনিজ সোনা, জ্বালানি এমনকী,আমাদের জীবনীশক্তি অর্থাৎ , H2O !
গাছেরা তাদের শাখাপ্রশাখা আকাশময় ছড়িয়ে দিয়ে মেঘকে আঁকড়ে ধরে আবার, সেই শাখাপ্রশাতেই পরজীবীরা বাসা তৈরি করে এমনকী, এই এনড্রয়েড যুগেও মানুষ প্রখর দাবদাহে গাছের ছায়ায়-ই খোঁজে । সমস্ত পৃথিবী সবুজ হয়ে ওঠে ক্লোরোফিলের ছোঁয়ায় অথচ,গাছের শেকড়বাকড় পৌঁছে যায় গভীর থেকে গভীরতর অন্ধকার পাতালে আর,সেখান থেকেই তারা নিজেদের প্রাণরস শরীরে টেনে নেয় ।
কারোর কারোর ধারণা, লিটিল ম্যাগাজিন, প্যারালাল অথবা, অনলাইন পত্র-পত্রিকাও অন্ধকারের মতোই কোনো এক অবহেলার উঠোনে গড়াগড়ি খেয়েই বেঁচেবর্তে থাকে । আসলে, বেহিসাবি চাহিদা এবং হতাশার থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে না-পারলে জীবনের আসল স্বাদটাই পাওয়া হয় না! ধুলো-বালি -কাদা আর,ফেনভাতের উঠোনে বেড়ে ওঠা লিটিল ম্যাগাজিনের শিরদাঁড়াটা যে আসলে, বজ্র দিয়ে তৈরি সেটা অনেকেই জানেন না !
প্রাগৈতিহাসিক আমানি-হাঁড়ি, স্যাকারিনের লজেঞ্চুস, পাঁচ-দশপয়সার আইসক্রিম, ধুলো-কাদার আত্মীয়তা, এ-সবই বোধহয়,ভাইরাস- আক্রমণের মুখে আমাদের জন্য বরাভয়ের মাল্টিভিটামিন !
প্রাণ ও ভাবনার বিবর্তনে জীবনানন্দই আমাদের মজ্জার ভিতরে এই মেসেজ পৌঁছে দিয়েছিলেন যে শ্রদ্ধা এবং অপমান দুই-ই কবিতা হয়ে ঝরে পড়ে একজন কবির উপর ।
একটা জিনগত রেভোলিউশনে দরিদ্র,নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তশ্রেণী শরীরমণ্ডলে থিক থিকে ডেঙি ম্যালেরিয়া হাম ইনফ্লুয়েঞ্জা-র জীবাণু নিয়েও যেভাবে বেঁচে থাকে ঠিক সেইভাবেই বেঁচে আছে এবং আগামী- দিনগুলোতেও বেঁচে থাকবে গায়েগতরে খড়িফোটা আমাদের ফেনভাতের লিটিল-ম্যাগাজিন ।
----------------