আরে বিতান দা তুমি ! ও মাই গড ! বলে প্রায় আবেগে চিৎকার করে উঠলো পৌষালী। বিতান তাকিয়ে দেখলো সামনে একটি মেয়ে , লম্বা ,ফর্সা সাদা চুড়িদার পড়া,মেয়েটির লাল সিঁথি বলে দেয় বিবাহিতা । এক ঝলক দেখে বুঝতে পারলো না । মেয়েটি বলে আরে আমায় চিনতে পারছনা? আমি পৌষালী। পলি । রূপশালী মানে রুপুদির পিসতুতো বোন।
রূপশালী ...! বুকের রক্ত চলকে ওঠে বিতানের । মুহূর্তে সামলে নিয়ে বলে ওঠে ! আরে সত্যি চিনতে পারিনি ,বিয়ের পর কত চেঞ্জ হয়ে গেছিস । সরি পলি । কতদিন দেখা হয়নি বলতো ! তা প্রায় ১৬/১৭ বছর হলো কি বলিস ? যাও । একটু অভিমান দেখায় পৌষালী, বলে ভুলেই গেছো সেটা বলো ।আরে নারে ! ভুলিনি ।ভোলার মতো তোরা কি ! শুধু অনেকদিন দেখিনি চেহারার পরিবর্তনে প্রথম বার একটু ..একটু মোটা হয়েছিস ! .বলে হাসলো বিতান । এলো মেলো চুল ।চোখে সানগ্লাস। গরমে হালকা কচিকলাপাতা রঙের পাঞ্জাবি আর জিন্স। হালকা দাড়ি । শ্যামলা রং এর পুরুষালী মুখ । মাঝারি দোহারা চেহারা । তুমি কিন্তু একই আছো বিতান দা । তাই এক দেখাতেই চিনতে পেরেছি । হাসলো পৌষালী। বিতান এক ঝলক তাকালো ।হাসলে সেই টোল ওর! রুপু, পলি দুই কাজিনের মুখের মিল আছে । দুজনেই বেশ লম্বা ,মিষ্টি মুখের দুজনের রং যদিও একটু আলাদা । রুপুর রং কিছুটা শ্যামলা ,তুলনায় পলি ফর্সা বেশি ।বিতান রুমাল বার করে ঘাম মুছতে মুছতে বললো তুই এই রোদে কি করছিস? কর্তা কই? পৌষালী হাতের জিনিস ঠিক করতে করতে বলে কর্তা নেই । একাই এসেছি বাজারে । কিছু কেনাকাটা আর মেয়ের বই পত্র কিছু কেনার ছিল । একটা স্কলারশিপের পরীক্ষা আছে ।
ওহ! দেখতে দেখতে কত গুলো দিন পেরিয়ে গেলো !তোর মেয়ে কিসে পড়ছে পলি ? ক্লাস নাইন । তোর মেয়ে ক্লাস নাইন? আরে তোকেই তো যখন প্রথম দেখি রুপুর সাথে তুই তো তখন নাইনে পড়তিস।
হাসলো পৌষালী আবার ,বললো সেই ! দাঁড়া বাইক টা ওদিকে রাখি ,ছায়া আছে ওখানে ,চল ঐদিকে কথা বলি ।তার পর বলো বিতান দা তুমি কি সেই এখনও পার্টি পলিটিক্স নিয়ে মেতে আছো ? না অন্য কিছু প্রফেশনে আছো ? নীল ওড়না দিয়ে মুখ টা মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসা করে পৌষালী। নাহ ! আমার লক্ষ্য তো তুই জানিস । হাসলো বিতান । তুমি কি ভালো স্টুডেন্ট ছিলে গো ।ইচ্ছে করলেই যেকোনো প্রফেশনে তুমি নাম করতে পারতে ! তুমি তো কেমেস্ট্রি নিয়ে রিসার্চ করতে পারতে বিতান দা ? পৌষালী বলে , ওসব করার অনেক লোক আছে রে । তুই বল তুই কি করছিস ? বর কি করে ? বিয়েতে তো একটা নেমতন্ন ও করলি না । বিতান বলে । তুমি আসতে ? পৌষালী তাকায় চোখ তুলে । রুপুদির মুখোমুখি তুমি হতে ? বিতান অন্য দিকে তাকায় তার খবর কি? ভালো । পৌষালী মৃদু উত্তর দেয় ।
তোর কেনা কাটা হয়ে গেছে ? বসবি কোথাও ? না বসলে হটাৎ করে শ্বশুর বাড়ির কেউ দেখলে বা তোর বর দেখলে আমায় আবার তোর প্রেমিক ভাববে নাতো ? বিতান হেসে বললো । পৌষালী চোখ নাচায় ।কৌতুকের স্বরে বলে তা ভাবতেও পারে । সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই ! বাড়িতে তুলকালাম হয়ে যেতে পারে । তাহলে আর কি থাক! বিতান হতাশ হয় । আরে চলো কোথায় বসবে । কিন্তু তার আগে বই গুলো নিয়ে নিই । কেনো আমার কি কোনো আত্মীয় এর সাথে দেখা হতে পারে না? বসতে পারিনা ? ক্লাস এর ছেলে বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যেতে পারেনা রাস্তায় কোথাও ? সবাই কি প্রেমিক আমার ? আমার প্রেমিক ছিলো না কেউ হাসলো পৌষালী। কেনো সেই যে কি নাম? ইউনিভার্সিটি তে পড়ত ,এস এফ আই এর জি এস ছিল ,কি যেনো নাম ..সৈকত বসু কি ? রুপুর ক্লাস মেট ছিল । সেই আমাদের সবার সিনেমার দেখতে যাবার কথা মনে আছে ? আমায় বলেছিল প্লিজ পৌষালীর পাশের সিট টা আমায় দিও । ভ্রু নাচায় বিতান ।আর সেটায় বসেছিল সুস্মিতা , নিশ্চয় বেচারি কে অনেক গাল খেতে হয়েছিল সেদিন ! মোটেও সৈকত দা আমার প্রেমিক ছিল না কোনোদিন । পৌষালী ঠোঁট ওল্টায়, আমি অন্তত ভাবিনি । মরণ দশা আর কি ! ওকে কোনোদিন পৌষালী লাহিড়ী পাত্তা দেয় নি । দত্ত সেন্টারের ভিতরে ওরা কথা বলছিল , রোদ বেশ চড়েছে । তবু চৈত্র সেলের ভিড় ও আছে । একটা ফোন এলো বিতানের । পৌষালী কে বললো তুই বই গুলো কিনে নিয়ে আয় ।আমি এখানে রয়েছি ।কথা বলে নিই একটু , দিয়ে কোথাও বসি ।
পৌষালী চলে গেলো ।কথা বলা শেষে একটা সিগারেট ধরালো বিতান । পলি র সাথে আজ তার কতদিন পর দেখা । আর রুপুর সাথে ! দীর্ঘশ্বাস ফেললো বিতান । অথচ একটা সময় ছিল চেষ্টা করত রুপুর সাথে অন্তত এক ঘন্টা ও সময় কাটানোর ! ইউনিভার্সিটি , গোলাপ বাগ ,কৃষ্ণ সায়ের ,রবীন্দ্র সদন ,রাজবাড়ীর ভাঙা একদিকের ছায়া মাখা অলিন্দে ...বইমেলা তে ..কলকাতা ,এমন কি দিল্লীর সেই দিন গুলো তে ..! সোনালী ছায়া পড়ে স্মৃতির ধুলো মাখা বারান্দায় ! এক পারিবারিক বিবাহ সূত্রে রুপুদের ফ্যামিলি দের সাথে আলাপ । সেখানে জানা যায় তার বাবা আর রুপুর বাবা পূর্ব পরিচিত , এক সময় ,একসাথে মেসে থাকতো । তারপর সেটা আবার নতুন করে রং নেয় ।আসা যাওয়া গড়ে ওঠে ।একসাথে বেড়াতে যেতো দুই পরিবার মাঝে মাঝে। আত্মীয়তা ছিল রুপুর মায়ের বাপের বাড়ির দিকে একটু দূর সম্পর্কের । কিন্তু সম্পর্ক ছিল কাছের আত্মীয়র মত । রুপুর সাথে সেও যেত মাঝে মাঝে তার আত্মীয়র বাড়িতে , রুপুও যেতো । আর রুপুর প্রতিটা কাজে সে থাকতো ! রুপুর যখন ক্লাস টুয়েলভ সেই তখন থেকে তাকে চেনা ,সে তখন সদ্য এম এস সি তে ভর্তি হয়েছে ! আর সেই সময় তার ১৮ বছরের জন্মদিনে ছোট ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পলি কে প্রথম দ্যাখে ।ওর তখন ক্লাস নাইন। ওদের একটা টিম গড়ে ওঠে সে , রুপু ,পলি ,রুপুর ভাই রুকু , পলি র বোন বুলবুল , দিব্যেন্দু , সুদীপ্ত, রুপুর বান্ধবী সুস্মিতা তার ক্লাসমেট ও বয়ফ্রেন্ড অমিত আরো কজন ...,রুদ্র, বিশ্ব ,...! বিতান এর দিদি বৃতিও এদের জানতো। একটা ছেলে আর মেয়ে কোনোদিন নর্মাল বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে না ,আবেগ চলে আসবেই, আসবে অধিকার বোধ ,অভিমান আর আস্তে আস্তে ভালোবাসা! কিন্তু কি আশ্চর্য্য! সে আর রুপু কোনোদিন পরস্পর কে বলেনি একদিন ও... তোমায় আমি ভালোবাসি ! যখন সে দিল্লি চলে যায় এম এস সি করতে ,সেই তাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে হাত নেড়ে বিদায় নিয়েছিল যখন স্মিত হাসি হেসে বিতান ,তখন তার বুক টা মোচড় দিয়ে উঠেছিল , মনে হয়েছিল সে বলে তুই প্লিজ রুপু তুই বর্ধমানেই পড়।বিকালের ছায়া মাখা পথ দিয়ে তুই যখন আসিস ওই মুহূর্ত টুকু দেখার জন্য আমি বাইক নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে আসি ।
আমার ক্লান্তি উধাও হয়ে যায় তোর ওই স্নিগ্ধ ,শ্যামলা , মায়াবী কাজল নয়নার আর ছোট কালো টিপের মাঝে । আমার বিকাল গুলো শূন্য হয়ে যাবে ।খুব মিস করবো । কিন্তু সে কিছুই বলেনি ...! রুপুর দুই চোখে স্বপ্ন অনেক ! সে অনেক টপ এ উঠবে ... ঘাড় ঘুরিয়ে শুধু একঝলক দেখেছিল বিতান , গেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুপুর মুখ কেমন ঝাপসা লাগছিল !
এক্সকিউজ মী ...চমক ভাঙে বিতানের । কেউ একজন পিছন থেকে যেতে চায় সামনে ,বিতান সরে দাঁড়ায় । হাতঘড়ি ওল্টায় সে । প্রায় ১২ টা । সূর্য মধ্য গগনে। লোকজনের চলাচল । নানা রঙের আর নানারকমের পসরা। চলছে বিকিকিনি । গরম পড়েছে । একটু বৃষ্টি এলে ভালো হয় । সামনে তাকাতেই পলি কে দেখতে পেলো । দূর থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো । মেয়েটা হাসি খুশি বরাবর । মিশুকে, মিষ্টি স্বভাবের । এসে বললো চলো বিতান দা কোথায় বসবে । তার আগে কিছু খাবো । আমি কিন্তু ভাত খেয়ে আসিনি ।বাড়িতে বলেই ছিলাম আমি খেয়ে যাবো । বিতান বলল আমিও সেটায় বলবো ভাবছিলাম ।আমারও খিদে খিদে পাচ্ছে । চল আজ কোথাও বসে একটু আড্ডা দিই । তোর জন্য কাজ ক্যানসেল করলাম । বিতান হাসে । ওহ্ কি ভাগ্য আমার ! আমাদের ভবিষ্যতের সিএম আমায় সময় দিচ্ছেন । পৌষালী হাসে । মারবো এক চড়। ঘামটা মোছ মুখ থেকে ।বস বাইকের পিছনে ,চল কোথাও ।বিরিয়ানি খাবি ? বিতান জানতে চায় । নো প্রব্লেম । কোথায় যাবে ? চিপ অ্যান্ড বেস্ট এ? পৌষালী জিজ্ঞাসা করে ঘাম মুছতে মুছতে। চল দেখি ওখানে ফাঁকা আছে নাকি নাহলে অন্য কোথাও যাবো । তার আগে চল রামপ্রসাদের লস্যি খাই কার্জন গেটে। বিতান সানগ্লাস টা খোলে। চলো চলো ।আহা বর্ধমান এসে ওটা না খেলে মনে হয় যেনো কি খাইনি বোতল থেকে জল খায় পৌষালী। ওর খাওয়া হলে বিতান ও গলায় ঢালে । পিপাসা পেয়েছে বড্ড।
বিরিয়ানির অর্ডার দিয়ে ওরা বসে । বিতান বলে তার পর তোর শ্বশুর বাড়ি টা কোথায় ? কি করে হাসব্যান্ড ? মেমারী । বর রসুলপুর স্কুল এর ম্যাথের টিচার । আমিও পড়াই মেমারিতেই একটা প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে । মৃদু হাসে পৌষালী। বিতান ফোন দেখতে দেখতে বলে কেনো সরকারি লাগাতে পারলি না? তোর তো ইংলিশ ছিল তাইনা ? ল পড়ার প্রস্তুতি নিলি দিয়ে পড়লি না ? ইচ্ছে তো ছিল কিন্তু বি এ পাশ করতে না করতেই বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিল । হোস্টেলে থেকে শ্বশুর বাড়িতে পড়ার অনুমতি পেলাম না । অগত্যা এম এ তেই ভর্তি হই । আমার মা বাবা বুঝলো না ! সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিল , দীর্ঘশ্বাস ফেলে পৌষালী। চাকরির কোচিং ও নিইনি। ওই যেটুকু বাড়ি তে পড়ে , সংসারে নানা ঝামেলায় আর পড়ায় মন বসেনি । এস এস সিতে পেলাম না । পরে কাছাকাছি ওই স্কুলে পাই যেখানে এখন করি । পৌষালী এক টানা বলে এবার থামে । তাকায় বিতানের দিকে তোমার কথা বলো বিতান দা ।বিয়ে করেছ ? বিতান হাসে ! বেশ আছি। ভুতের কিল খাবার ইচ্ছা নেই ! আহা ! সবাই বুঝি কিল খায়? পৌষালী মেনু কার্ড টা দিয়ে বিতানের হাতে একটা মৃদু আঘাত করে । তার পর সোজা চোখে দ্যাখে বিতান কে ,তোমার সাথে রূপুদির কি হয়েছিল বিতান দা ? বিতান ফোন থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে পরক্ষনেই নামিয়ে নেয়, তোকে রুপু কিছু বলেনি ? বিরিয়ানি চলে আসে । চিকেন বিরিয়ানি পলি পছন্দ করে । তার সাথে দুটো চিকেন চাপ আর কোল্ড ড্রিঙ্কস এর অর্ডার করেছিল বিতান ।
খেতে খেতে কথা চালায় টুকটাক ওরা । বিতান খোঁজ নেয় বুলবুল আর রুকুর কথা । পৌষালী বলে বুলবুল কে মনে আছে তোমার ? হ্যাঁ কেনো না ।কি যেনো ভালো নামটা ছিল? বিতান জিজ্ঞাসা করে, বৈশালী । সে এখন মুম্বাই এ । ওর বর ভাবা রিসার্চ সেন্টারে আছে । উত্তর দেয় পৌষালী। বাহ । আর আমাদের রূপঙ্কর তিনি কোথায় ? আমি একদিন হটাৎ দেখি রাজবাড়ীর মোড়ে ! একাই ছিল । বিতান কামড় দেয় চিকেন লেগ পিসে ।রুকু অ্যাক্সিস ব্যাংকে আছে । এখানেই থাকে । বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখী পুরুষ । পৌষালী একটু কোল্ড ড্রিঙ্কস নেয়। একথা ওকথা তে খাওয়া শেষ করে বাইরে আসে ওরা । আকাশে হটাৎ কালো মেঘের ছায়া । বিতান বলে তুই কি এখনই যাবি বাড়ি না আর কোথাও যাবি ? তুমি না থাকলে যেতাম এখন ইচ্ছে করছে কথা বলি ! বসবে কোথাও ? স্টেশনে যাবে চলো ।আমার তো বাস ,ট্রেন যাহোক হলেই হলো ।মেন কর্ড এর প্রব্লেম নেই । আজ তাহলে ট্রেন দিয়ে যাই । ৩:১৫ এর ট্রেন টা ধরবো তাহলে বা তার পরের টা টেও অসুবিধা নেই ।দুটো তো মোটে স্টেশন । ঠিক আছে তেমন হলে তোকে বাড়ি দিয়ে আসবো । এটা তোর শ্বশুর বাড়ি না যে ভাববে কেরে বাবা ছেলেটা। তোদের বাড়ি বহুবার গেছি । বিতান বাইকে স্টার্ট দিলো।
টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্ম এর একটা নির্জন দিক দেখে ওরা বসলো । বিতান কাগজ কিনলো সেদিনের একটা , সকালে পড়ার সময় হয়নি ! বসতে বসতে বলে পৌষালী ,তোমরা কেনো বিয়ে করলে না বিতান দা? বিতান অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে । সেতো আমায় কোনোদিন কিছু বলেনি। সেও তো বলতে পারতো বিতান আই নিড ইউ। তার বলার স্বরে বেশ কিছু টা অভিমান ঝরে পড়ে । আকাশের কালো মেঘ টা আর ভারী হয়ে থাকতে পারলো না । হটাৎ করে তুমুল হয়ে নামলো। বহুদিনের জমানো ব্যথার মত মেঘ গুলো নিঃশব্দে কান্না হয়ে ঝরে পড়তে লাগলো কারো গহীনে । এই বিতান দা বৃষ্টি নামলো তো! বিতান তখনও অন্য দিকে চেয়ে । নিমেষে বৃষ্টি এসে একাকার চারিদিকে । ট্রেন গুলো ঝাপসা লাগছে সেই সেবারের মত ,দিল্লীর সেই পড়ন্ত বেলায় । হোস্টেলে গেটে রুপু দাঁড়িয়ে । ভাগ্যিস বৃষ্টি এলো । বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে শরীর , মুখ গাল আর চোখ ! গুমগুম শব্দে মেঘ ডাকতে লাগলো থেকে থেকে ! পৌষালীর খুব ভাল লাগছিল এই বৃষ্টি । তার ওপরে বিতান দার সঙ্গ । সে তাকালো বিতান এর দিকে ,বিতানের চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি ফোঁটা !
রুপু কোথায় এখন ? মুখ খোলে বিতান ।বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টির শব্দ । তুমি জানো না ? বিতান চক্রবর্ত্তী জানে না এমন কোনো খবর আছে ? বিশেষ করে রুপশালী রায় এর খবর ? পৌষালী তেরছা তাকায় । না সত্যি জানিনা ।বিতান মুখ ঘোরায় ওর দিকে । শান্তিনিকেতনে। পৌষালী উত্তর দেয় ।তাই ? শুনিনি তো !কবে থেকে আছে ? আমি এত বোলপুর শান্তিনিকেতন যাই পার্টির কাজে ,কোনোদিন চোখে পড়েনি তো ! বিতান একটু অবাক হয়ে বলে দিল্লী থেকে চলে এসেছে ? হ্যাঁ ! তুমি ওর খবর কোনোদিন জানার চেষ্টা করোনি ? সুদীপ্ত দা বা সুস্মিতা দি ? পৌষালী জিজ্ঞেস করে । আমার কারো সাথে কন্টাক্ট নেই আর ।ইচ্ছে করেই রাখিনি । শুধু সুদীপ্ত র সাথে আছে মাঝে মাঝে। ওর কাছেই শুনেছিলাম একবার ও দিল্লিতে । বিতান বলে ।
তুমি ওকে সার্চ করেছো ফেসবুকে কোনোদিন । পৌষালী জানতে চায় । হ্যাঁ ! বাট আমার মূল আইডি থেকে পাইনি । আমায় ব্লক রেখেছে মনে হয় । অন্য নামের আইডি থেকে দেখেছিলাম ,কিন্তু ওর আইডি লক । যদিও লক খুলে দেখার টেকনিক আমার জানা আছে বাট আমি আর তেমন খুলিনি কারণ আমার কাজের চাপে আমি খুব একটা ফেসবুকে/ টুইটারে থাকিনা । বিতান ধীরে ধীরে বলে । দেখবে ? দাঁড়াও নেটওয়ার্ক আছে নাকি দেখি ! পৌষালী ফেসবুক ওপেন করে । বিতান দ্যাখে ডিপি তে নীল শাড়ি পড়া ,লম্বা চুলের রুপু । ভীষণ ই সুন্দর লাগছে ।৪২ এও ২৫ /২৬ এর তরুণী যেনো ! কভার এর দিকে তাকালো । একটি বছর ১০ / ১২ মেয়ের সাথে ছবি। বিতান মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে ।মেয়ে ? তোমার ভাগ্নী । খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে পৌষালী। এক্স রা একসময় পূর্ব প্রেমিকা দের বাচ্চাদের মামা হয়ে যায় । ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আজ বাবা হতে ওর । বিতান হাসে । ছবি গুলো দেখতে থাকে । বরের ছবি নেই যে ? বিয়ে করলে তো! পৌষালী বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে । মানে? বিতান একটু অবাক ! কেনো সুদীপ্ত দার কাছে কিছু শোনো নি? পৌষালী ছোট একটি কৌটো থেকে লবঙ্গ বার করে মুখে দেয় । বিতানের হাতেও দেয় । আমার সুদীপ্তর সাথে বহুদিন কথা হয়নি ।বেশ ক বছর ।লাস্ট শুনেছিলাম ওর কোনো জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেটা বোধায় কোনো কারণে হয়নি ! ভেবেছি তার পর হয়তো অন্য কোথাও হয়েছে ।ভালো আছে সে । তার অনেক স্বপ্ন অনেক দূর যাবার নিশ্চয় তেমন কোনো সঙ্গী পেয়েছে । যে ওকে অনেক সাপোর্ট করে । ও বোধায় সুদীপ্তর সাথেও আর কন্ট্যাক্ট রাখে না ।তাহলে সুদীপ্ত বলতো । সত্যি শুনবি আমি পারতপক্ষে ওর খবর এড়িয়ে যাই । আমি এই কারণেই সুদীপ্তর সাথে কন্ট্যাক্ট করিনা পাছে ও রুপুর খবর বলে আমায় ! কি হবে জেনে! আমাদের পথ তো আলাদা ! চাইলেই কি সব পাওয়া যায় পলি ? কিছু জিনিসের বাস্তবতা মানতে হয় ।জীবন এমনই বহমান ! বিতান থামে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ! পথ আলাদা কিন্তু সে তো কাজের বিতান দা ।মনের পথে কি এখনও প্রতীক্ষা নেই ?যদিও সেই প্রতীক্ষা দুজনের অজানা ! একজন একজনের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু অপর জন জানে না । পৌষালী উসাস স্বরে বলে ! বিতান জিজ্ঞাসা করে, তো বাচ্চাটা ? ডিভোর্স কেস? নাহ !দত্তক নিয়েছে । তা আজ ৭/৮ বছর হয়ে গেল । পৌষালী হাতের ওপরে মাথা রাখে । সুযোগ আছে এখোনো , যাও গো । আমাদের পার্টি ক্ষমতায় এলে ওয়েস্ট বেঙ্গল এর অর্থমন্ত্রী টা ওকে কোরো । হেসে বলে সে , তুমি ভালই জানো ইকোনমিক্স এ তার দুর্দান্ত রেজাল্ট । রাজনীতি তে না নামলেও কোনোদিন, আমাদের দল কে সে সাপোর্ট করতো । বিতান একটু রিল্যাক্স মুডে বসে হাতের ওপরে মাথা রেখে পায়ের ওপরে পা তুলে ।ওর নাম্বার টা দে ।কি করবে ? মেয়ের বাবা হবার প্রস্তাব দেবে ? পৌষালী হাসতে হাসতে বলল, বিতান বলে তেলের দাম চাইবো । সাত বছর ওকে নিয়ে আমার বাইকে ,গাড়িতে অনেক ঘুরেছি ।দাম টা এখন দরকার । এখন ওর অনেক টাকা । বিশ্বভারতীর প্রফেসর । আর না হলে তুই ওকে ফোন করে বলে বিতান দা তেলের দাম চায়ছে সাত বছর এর ।এখানকার মূল্যে যেনো দেয় । হাহাহা.. পৌষালী হেসে ওঠে । সত্যি বলো ,বিয়ে ভাঙার চিঠি কে দিয়েছিল তুমি না রুপুদি নিজে ? মানে ? দাঁড়া! দাঁড়া! বিতান অবাক হয় ! ওর বিয়ে কি এই কারণেই ভেঙেছে ? আরে আমি কেনো দেবো ? আমি সত্যি জানিনা এসব । এই প্রথম শুনছি । হ্যাঁ সুদীপ্ত বলেছিল এইটুকু ছেলেটা খুব ভালো । কলেজের প্রফেসর । কলকাতা তে থাকে । সম্ভবত কালনা তে ঠিক হয়েছিল বিয়ে , আমি সত্যি কোনো চিঠি দিয়ে ভাঙায় নি । আমি সেই সময় বেশ কিছুদিন সব থেকে দূরে ছিলাম । খুব কষ্ট হতো কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না ! কিছুদিন পন্ডিচেরি তে কাটিয়েছিলাম তখন ! পার্টি থেকেও দূরে ছিলাম ! কিন্তু ওদের ধারণা তোমার কাজ । তোমার পরিচিতি আর পরিচিত প্রচুর । আমাদের অন্য কাজিন থাকলেও আমি রুপু দি পরস্পরের ভীষণ কাছের ।কিন্তু এই ব্যাপারে ও আমার কাছে মুখে কুলুপ এঁটে ছিল । আমিও যেচে খুব বেশি জানতে চাইনি । খুব অবাক হয়েছিলাম ।আত্মীয় রা অনেকেই মনে করতো তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা আছে ।বিয়ে করবে । পৌষালী চুপ করলো কথা গুলো বলে , বিতান বলে বিয়ে করলেই কি আমরা সুখী হতাম ? আমি তো পার্টি পলিটিক্স ছাড়তাম না । অন্য জব এ যেতাম না । ওর আমার থেকে ভালো রেজাল্ট । ওকি পরিচয় দিতে পারতো আমার? যে কিছু করেনা রাজনীতি ছাড়া ! ও যেমন জায়গায় যেতে চেয়েছিল ! ইগো কাজ করতো তাইনা ! কি বলো তুমি বিতান দা ! হতে পারে তুমি পলিটিক্স করো আর এখনও আমাদের পার্টি পশ্চিম বঙ্গে ক্ষমতায় আসেনি তাই হয়তো সেই পজিশন নেই বাট আমরা সবাই জানি তুমি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলে। তোমার রেজাল্ট ও ভালো ।হয়তো ওর থেকে নাম্বার কম আছে । আর তোমাদের ফ্যামিলি উচ্চ শিক্ষিত আমাদের মতই । তোমাদের ভালো পারিবারিক বিজনেস ও আছে আয়ের উৎস হিসাবে , তোমার দিদি ও অন্য কাজিন রাও উচ্চ পদে সার্ভিস করে । তোমরা দুজন দুজনকে কোনো দিন বললেই না কিছু শুধু নিজের নিজের মনে অনেক কিছু ভেবে নিয়ে পথ আলাদা করে দিলে ! বিতান বলে একেবারে কোনোদিন ইঙ্গিত পরস্পর কে দিইনি তা না , আমি কোনো কথাতে একবার ক্লিয়ার বলেছিলাম আমি কোনোদিন পার্টি পলিটিক্স ছাড়বো না । অন্য প্রফেশন আমার পোষাবে না । ও হয়তো পেশায় সিকিউরিটি চায় তো ! আর সবার মত সুখী গৃহকোণ।বাট তুই জানিস পলি এসব সুখী সুখী পুরুষ সেজে থাকা আমার হবে না । তুইও করেছিস এককালে রাজনীতি ,আমি এখনও করি ।আমাদের কষ্টের লড়াই ,অনেক সত্যের উদ্ঘাটন করতে হয় অনেক রিসার্চ করে । পৃথিবী জুড়ে,দেশ জুড়ে যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র হয়েছে হচ্ছে তার মোকাবিলা করে দেশ কে নিরাপত্তা দেওয়া কাজ । সবাই বর্ডার এর যুদ্ধে যোগ দেয়না ।ভিতরেও লড়তে হয় ।আর এই দেশের ভিতরে লড়াই টা বেশি কঠিন কারণ এখানে তোকে বহু প্রতারক দের সাথে লড়তে হয় । বর্ডার এ তো শত্রু তবু চেনা যায় ;কাদের সাথে লড়তে হবে ,কিন্তু ভিতরে ? লোলুপ দৃষ্টিতে হায়নার দল চেয়ে আছে দেশ টুকরো করতে , তাকে ভাঙতে ,তার সংস্কৃতি ঐতিহ্য কে নষ্ট করতে ।তাকে উপহাস করতে , একটা জাতি কে দমিয়ে রাখতে , আমাদের যুদ্ধ যে তাদের সাথে পলি ! দেশের চেয়ে বড় কি হতে পারে ! আমি কিভাবে সব দায় এড়িয়ে সুখী পুরুষ হয়ে মাছে ভাতে বাঙালি সেজে বসে থাকি ! এক টানা বলে গেলো বিতান ।পৌষালী চুপ করে থাকে! এখনো বৃষ্টি পড়ছে । একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অনুভূতি । বিতান পেপার টা নিয়ে নৌকা বানাচ্ছে ! এই আমায় একটা পেপার দাও আমিও বানাই ।দেখি কার টা ভালো হয় ! বিতান ওর হাতে বাকি পেপার দিয়ে দিল ।বললো চা খাবি পলি ? ওকে! নিয়ে এসো ।এই দাম টা তো অন্তত আমায় দিতে দাও বিতান দা ! পৌষালী বলে ঘাড় ঘুরিয়ে , বিতান আড়মোড়া ভাঙে , আরে তোর ওখানে যাবো একদিন পেট ভরে খেয়ে আসবো।কর্তার সাথে ফোনে একদিন পরিচয় করিয়ে দিস।
চা খেতে খেতে বিতান বলে তারপর বহুদিন তো রাজনীতি থেকে বিরতি নিলি, আবার কবে জয়েন করছিস ? জেলা পরিষদের নির্বাচনে তোর নাম সুপারিশ করি । দায়িত্ব নে এবার তোদের দিকের এলাকার । পৌষালী বলে ইচ্ছে তো আছে ফেরার কিন্তু এই মুহূর্তে সরাসরি মাঠে নামবো না ।মেয়েটা মাধ্যমিক টা দিক , উচ্চ মাধ্যমিক অব্দি আমার দায়িত্ব তার পর ... ও বাবা ! এত ওয়েট করাবি? তোদের মত সচেতন মেয়েরা না এলে কি হয় ! খালি কি বসে সাজবি আর সিরিয়াল দেখবি ? মোটেও আমি তেমন না । কপট রাগ দেখায় পৌষালী। নোস বলেই তো দায়িত্ব নিতে বলছি । বিতান বলে; ঠিক আছে ওর সাথে কথা বলি । মেয়েটার মাধ্যমিক টা হয়ে যাক । আসলে সত্যিকারের রাজনীতি ধ্যান জ্ঞান তারা পুরোটাই পার্টিকে দেয় । তাদের ব্যক্তিগত আরাম কিছু থাকে না আর । এতেই সব সময় চলে যায়। তখন আবার সংসারে আমাকেই দোষ দেবে বলবে কিছু করিনা । স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনো কাজে সাপোর্ট করে যদি সাথ দেয় সেই কাজ ঠিক হয় ।অন্য জন কে কি বললো কিছু আসেনা । পৌষালী একটু উদাস যেনো! বিতান বলে , সেই ! ঠিক আছে চিন্তা ভাবনা করিস । আমি সব সময় তোর পাশে আছি । থাকবো ।ভরসা রাখতে পারিস । বিতান ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। তার পর বলে আমার হোয়াটস নাম্বার টা রাখ ।রুপুর কিছু ছবি দিস আমায় । আমার ফোন থেকে পাবো না । ঠিক আছে বাড়ি গিয়ে বেছে বেছে কিছু পিকস দেবো । দাও নাম্বার টা তোমার । আর তোমার ফেসবুক আইডি তে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলাম অ্যাকসেপ্ট করো। আর কত গুলো আইডি আছে লিংক দিও পরে,সব গুলো কেই অ্যাড করবো ।বলে পৌষালী বিতানের নাম্বার সেভ করলো। একটা ফোন এলো বিতানের ।কথা বলতে লাগলো সে । পৌষালী ফোন দেখলো কথায় কথায় আড়াইটা হয়ে গেছে । মাঝে মাঝেই ফোন আসছিল বিতানের টুকটাক ! মোবাইল ফোন সে প্রথম দেখেছিল বিতান দার কাছে , টুকরো টুকরো নানা ছবি ভেসে উঠল তার স্মৃতি পটে। একবার তারা বেলুড় মঠ গেছিলো । গঙ্গার ধারে অনেক ক্ষন বসে গল্প করেছিল সে , রুপু দি ,বিতান দা , সুদীপ্ত দা ।ওখানে সুদীপ্ত দার মামার বাড়ি । খুব খাতির যত্ন পেয়েছিল তারা ওর মামার বাড়ীতে । কে জানে সুদীপ্ত দার কি খবর ? রুপু দির সাথে বোধায় আর তেমন যোগাযোগ নেই । মানুষ গুলো হারিয়ে যায় একদিন কিন্তু তাদের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো কি দারুন সত্যি হয়ে থাকে !
কথা বলা হয়ে গেলে বিতান বলে তুই একটু বস পলি এবার একটু বাথরুম না গেলেই না ! ঠিক আছে যাও বলে পৌষালী ফোন ঘাঁটতে লাগলো । বিতান ফিরে এসে বললো একটা সিগারেট ধরাতে পারি ম্যাডাম , ওকে ওকে নো প্রব্লেম ।পৌষালী না তাকিয়েই বললো , ধোঁয়া ছেড়ে বিতান বলে এই সিগারেট খাওয়া নিয়ে তোর দিদির সাথে কি ঝগড়া হতো ,সারাদিন বেঁধে দিয়েছিল সিগারেট খাওয়া । মুখ না তুলেই পৌষালী বললো তাই ! তুই কি করছিস বলতো ?বিতান জানতে চায় , তোমার হোয়াটস অ্যাপ টা খোলো একবার পৌষালী অনুরোধ করে , বিতান খুলতেই হুড়মুড়িয়ে মেসেজ আর নোটিফিকেশন ঢোকে , অনেক গুলো ছবি সেন্ড করেছে পলি ,দ্যাখে বিতান । তোমার এক্স এর বর্তমান ছবি দিলাম আরেকটা আমাদের তিনজনের মানে আমি ,বর মেয়ে। পরে রুকু দের ,বুলবুলের সবার ছবি দেবো দেখো , বিতানের দিকে তাকিয়ে পৌষালী বলে হাসলো। বৃষ্টি থেমে গেছে এখন । ট্রেন ঢুকছে । লোক জন ওঠা নামা করছে সাবধানে । শীতল হাওয়া । এক জায়গায় জমা হলে কাগজের নৌকা দুটো ভাসিয়ে দিল পৌষালী । সিটে বসে জানালা দিয়ে তাকালো সে ।বিতান দা দাঁড়িয়ে জানালার এদিকে । ফোন কোরো মাঝে মাঝে ! তারপর বললো আর কি তোমরা এক হতে পারো না বিতান দা ? খুব কি কঠিন ? এত শান্তিনিকেতন যাও তুমি , একদিন দেখা করো দুজনে , বিতান এর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে মিলিয়ে গেল ! অনেক দেরী হয়ে গেছে পলি! এতদিনে হয়তো তার পছন্দ ও পাল্টে যেতে পারে ! শুধু শুধু বলা মানে সেই তো হার! আর যদি জিৎ হয় ? একবার কথা বলো দুজনে ,ভেঙে দাও ইগো , জমে থাকা অভিমান গলে যাক ! রুপু দির নাম্বার তোমায় মেসেজ করে দিয়েছি । সাত বছর এর তেলের দাম বাকি আছে তোমার ।পৌষালীর শেষ কোথায় বিতান হেসে ফেলে । ট্রেন ছেড়ে দেয় ... দূরে সরে যেতে থাকে বিতান দা । এবার ঝাপসা লাগে পৌষালীর দৃষ্টি । দ্রুত মুছে চোখ দুটো চেষ্টা করে দেখতে নৌকা দুটোকে , ভাসছে ভাসছে ,আসছে যাচ্ছে ,কাছে... আবার দূরে সরে যাচ্ছে ।বহমান জীবন ..যেমন ! কোনো কিছু শেষ হয়না । বৃষ্টির মতো আবার ফিরে আসে জীবনে । আর সেই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে কবে কখন ভিজেছিলাম !
------------------------------
জয়শ্রী ব্যানার্জী
বর্ধমান
💐🌻🌼🌷🌺🥀🌹
উত্তরমুছুন