এই বছর পনেরো ছেলেটি সবেই তার বাবার মৃতদেহটিকে দাহ করে মাঝরাতে এই পৌষ মাসের কনকনে ঠান্ডায় তাদের গ্রামের বাড়ির মাটির দাওয়ার খোটায় হেলান দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে বসে থাকে, আর মনে মনে ভাবে এই বুঝি তার বাবা ওই জ্বলজ্বলে তারা টি। তার মা তার পাশে বসে আছে আর তার দুটি চোখে জলে ভরা, আর মনে মনে ভাবে - উনি তো চলে গেলেন আমি এই দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কি করবো আর কোথায় বা যাবো। এইসব ভেবে চিন্তে তার দুটি চোখে জল এসে যায়। গরিব মানুষ বলে কোন আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই তাদের ত্যাগ করেছে। যাই হোক ছেলেটি প্রায় বড় হয়েছে একটু বলতে শিখেছে তাই সে নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে এই বয়সে; হঠাৎ করেই সে উঠে দাড়িয়ে তার মাকে বলে - মা বাবা তো আর নেই তাই তোমার আর বোনের দায়িত্ব আজ থেকে আমার, কোন চিন্তা করো না ঈশ্বর আছেন একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আর কদিন পর ছেলেটি তার মা ও বোনকে নিয়ে গ্রামের একটা ছোট্ট মন্দিরে তার বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া কর্ম করে,
তাদের কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। দারিদ্রতা কে সাক্ষী রেখে তাদের তিনজনের মোটামুটি এভাবে বেশ কয়েকটি মাস কেটে যায়। ছেলেটি একদিন সকালে দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়িতে এসে মাকে বলে - জানোতো মা আজ আমি গৌড় দার দোকানে গিয়েছিলাম সেখানে এক শহরের বাবু আমাকে হোটেলে কাজ দিতে চান। মা অত্যন্ত খুশি হয় এবং বলে - ভালোই হয়েছে এতে আমাদের ভাতের কষ্ট হবেনা কিন্তু তোর লেখাপড়া? ছেলেটি তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে - মা আমি সেখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ ও শিখে নেবো, মালিক বলেছেন - আমাকে নতুন বই খাতা সব কিনে দিয়ে সেখানকার ইস্কুলে ভর্তি করে দেবেন। তারপর দু তিনদিন পর ছেলেটি মাকে বিদায় জানিয়ে শহরে চলে যায়, মেধাবী থাকার কারণে তার লেখাপড়া শিখতে কোনো অসুবিধা হয়নি।
এভাবে বেশ কিছু বছর অতিবাহিত হতে থাকে ভগবানের কি ইচ্ছে হোটেলের মালিক হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ছেলেটির হাতে হোটেলের সমস্ত ক্ষমতা এসে পরে। ছেলেটি মালিকের খুব ই বিশ্বস্ত ছিল তাই ছেলেটি কখনো সুযোগের অপব্যবহার করেনি। অসুস্থ অবস্থায় থাকাকালীন হঠাৎই হোটেল মালিক মারা যান এবং ছেলেটির মাথার ওপরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে সে আবার নতুন করেসঅভিভাবক হীন হয়ে পরে। ছেলেটি মনে মনে খুবই কষ্ট পায় সিদু কিন্তু অদম্য জেদ ছিল তার। সবকিছু শূন্য থেকে শুরু করতে চায় সে তাই অনেক কষ্ট করে এই হোটেলের ব্যবসা আবার সুন্দর করে গড়ে তোলে। হোটেল এর নামকরণ হয় মালিকের নামে - শুভম হোটেল। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যায় সে জগৎজোড়া নাম হয় তার
খবরের কাগজে ছেলেটির ছবি বেরোয় এবং বড় বড় অক্ষরে তার নাম লেখা হয় রুপম দাস। গ্রামের লোক আত্বীয় স্বজন পরিজনসবাই অর্থাৎ যারা তাদের ঘৃণার চোখে দেখতো তারা সকলে ছেলেটির বাড়িতে হাজির হয় । তার মা ও বোন তার উত্থানে খুব খুশি হয়।রুপম শহরে একটা মস্ত ফ্ল্যাট কেনে এরং মা ও বোনকে সেখানে নিয়ে চলে যায়,এরপর তারা সুখে-শান্তিতে জীবন কাটায়।
---------------------------
ভাঙ্গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা
দূরাভাষ - ৯৭৪৯৬১৭২২০