গল্প ।। আঁশবঁটি ।। শ্রীজিৎ জানা
পিচ রাস্তার উপরেই বসে বাবুরহাট। মিশকালো খটখটে পিচ ওই যে ধেইধেই করে নাচতে নাচতে ছুটে গ্যাছে জেলা সদরের দিকে। তার ধার ঘেঁষে পঙ্গত ভোজনের মতো করে সেজে উঠে বাবুরহাট। বাবুরহাটের নাম নিয়ে বয়স্কদের মধ্যে হামেশাই বাকবিতণ্ডা কানে আসে। কেউ বলে রসিকগঞ্জের জমিদার গুঁইবাবুদের জায়গায় হাট বসে বলে নাম হয়েছে বাবুরহাট। অন্যপক্ষ বলে হরিরামপুরের বাবুরাম সামন্তের জায়গার উপর হাট তাই বাবুরহাট। সে যাই হোক,বাবুরহাটের নামডাক বহুদূর অব্দি। সড়কের দু'দিকে সারসার দোকানপাট। যেন হুড়মুড়িয়ে রাস্তা ঝেঁপে জবরদখল করতে মরিয়া।এরই মাঝে গাদাগাদি করে ফি-হপ্তায় শনি-মঙ্গলবার হাটুরেরা পসরা নিয়ে ভীড় করে। দুচারজন ফড়ে-ব্যবসায়ী হাটের মালপত্র কিনে গাড়ি ছুটিয়ে পাঁশকুড়া বাজারের দিকে রওনা দেয়। লঙ্কা উচ্ছে আর কুমড়োর সিজিনে হাটে পা রাখবার জায়গা থাকে না।
তবে বাবুরহাটের সেদিনের চটক-মটক অনেকটাই ফিকে হোয়ে গ্যাছে। এখন সব হাটেরই প্রায় একই দশা। হাট এখন বাজার। চেকনাই এসেছে তার ঠাটবাটে।পুরানো খড়ের চালাগুলো আজকের দিনে বেমানান বলে সবের দূর হটো দশা। আগে চালের হাট,লঙ্কার হাট,কুমড়োর হাট,আনাজের হাট,কুমোর হাট-হাটের ভিতর ছিল কত হাট।সে সবের এখন আর বালাই নেই। এ ওর ঘাড়ে চেপে তালগোল পাকিয়ে গ্যাছে। এ সবই জায়গার অভাবে। তবে হাটের পুব দিকটা একইরকম রযে গ্যাছে। যেদিকে বসে মাছের হাট। আর মাছের হাট মানেই লখি মেছুনী! হাটুরেদের হট টপিক! আধখানা চাঁদের মতো লিকলিকে বিশালাকার বঁটি লখির কোলের কাছে হাঁ করে থাকে। বঁটির গা বেয়ে গড়িযে পড়ে আঁশটে রক্ত! তার কাঠের পাটায় পিঁড়ি চেপে বসে লখি। দ্রুত বেগে হাত চলে তার।ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে সমান সাইজের মাছের পিস কাটা হতে থাকে।তার মাছ কাটার কায়দা দেখতে ভীড় করে অনেকেই। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ তার মাছের খদ্দের। তবে এই সময়ে সবার চোখ থাকে লখির বুকের উপর। আঁচলের কাপড়টা যেখান থেকে সরে গিয়ে স্ফীত বুকের বিভাজিকাকে স্পষ্ট করেছে। লখির সেদিকে নজর দ্যায় না। ছপছপ করে মাছের হাঁড়ি থেকে জল নিয়ে শুয়ে থাকা নিষ্প্রাণ মাছগুলোর উপর ছিটিয়ে দ্যায়। মাছ কাটে,ওজন করে,পলিথিনে ভরে খদ্দেরের দিকে এগিয়ে দ্যায়,হিসেব করে টাকা নেয়। একাই সামলায় সব। এরই সাথে সমান তালে চলতে থাকে মুখ,
---লখির মাছ শুদু দেকলে হবে! খেয়ে দেকতে হবে।তবে বুঝবে সোয়াদ ক্যামন?
আবার কোনোদিন লখির ডায়লগ যাবে বদলে,
---জলের মাছ জলের দাম!কেজি কেজি দুশ। জান্ত লাও,মরা লাও এক দাম।
আঁশবঁটির মতো লখির মুখও ধারালো। রসালো কথার সাথে কাঁচা খিস্তিও ছুঁড়ে দ্যায় সহজে। খদ্দেররা রাগে না,মজা নেয়। কারণ ওই --কথার শেষেই লখি এমন একটা হাসি ছড়িয়ে দ্যায় তাতেই সব কুপোকাত।
লক্ষ্মী কালসার। বাপের বাড়ির পদবি এখনো জুড়ে রেখেছে নামের সাথে। জীবন শুরুর সাতটা বছর তার কাছে মাছের পিত্তর মতো বিদঘুটে তেতো। হাড়-হাভাতের ঘরের মেয়ে লখিকে বিনা পণে বিয়ে করে নিয়ে যায় ওমপ্রকাশ। তখন গ্রামে বিহার থেকে লোক এসে গরিব উদ্ধারের কাজ করতো। আর গ্রামেরই কেউ তাদের এজেন্ট হিসেবে টাকার লোভে মেয়ে খুঁজে বেড়াতো। মেয়ের বাপদের মাথার বোঝা নেমে যাওয়ার এমন সহজ পন্থা আর কী হতে পারে। বিনিময়ে তাদেরও কপালে জুটত দু'চার হাজার। সেই চক্রের চর্কিপাকে লখিকে বার বছর বয়সে বউ সাজতে হয়।
প্রায় চোদ্দ-পনের বছরের ফারাক তাদের বয়সে। ওমপ্রকাশ শুধু শরীর বোঝে। যেমন করে লখি বাজারে দয়ামায়াহীন ভাবে মাছ গুলোকে বঁটিতে কেটে ফালা ফালা করে। ওমপ্রকাশ লখিকে নিয়ে সেভাবেই নির্দয়ের মতো কাটাকুটি করে তার লালসার ধারালো ছুরিতে। ক'বছরেই তিনটি ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়ে লখির যখন প্রায় মন মর অবস্থা,ওমপ্রকাশ আবার বিয়ে করে। পরিজনহীন, বিদেশবিভুঁই লখির কাছে বিভীষিকাময় বলে মনে হয়। বাপের বাড়ির জন্য মন ছটপটিয়ে উঠে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে বুকে ভরসা জুটিয়ে গ্রামে ফেরে লখি।
বাপের ভিটেয় উঠলেও বাপ-মা না থাকলে যা হয়,সেটাই হল লখির জীবনে। ভাইয়েরা মুখ ফেরালো তার থেকে। কোলে তার তিনটে অবোধ সন্তান। জাত পেশাকেই সম্বল করে বঁটি-হাঁড়ি নিয়ে মাছ বেচতে শুরু করলো হাটে হাটে। হাতে পয়সা আসতে থাকে। গায়ে জল-হাওয়া লেগে লখির রূপ খোলতাই হয়। বর্ষার জল পেয়ে মাচার পুঁই যেভাবে সবুজে রাঙা হয়ে হিলহিল করে,লখির শরীরও যেন লাফ খায়। হাটে ঘুরে লখি বুঝে যায় ব্যবসার মারপ্যাঁচ। খদ্দের টানার ছলাকলা।
বাপের বাড়ির লোকেরা নানা রকম কথা বলে। ভাই-বৌয়েরা ঠেস মারে। লখি কারো কথা গায়ে মাখে না। জীবন তাকে শিখিয়েছে বাঁচার অঙ্ক।সেখানে একচুল কেউ কাউকে রেযাত করে না।সে লোক ঠকাচ্ছে না। গতর খাটাচ্ছে। শরীরের ভাঁজে খদ্দের টানা হলে পাপ তার নয়,পাপ খদ্দেরের চোখ আর মনে। লখি শুধু এই অছিলায় মাছ গছিয়ে দ্যায় চড়া দরে। কেউ হাঁ করে চেয়ে থাকলে বলে,
--- ই জিনিস আলাদা।পুরা বিলাসপুর রুই। যেমন গতর,তেমন সোয়াদ। খদ্দের লজ্জায় ভ্যাবাচ্যাকা খায়। লখি হেসে উঠে ঝলমলিয়ে।
ইজ্জত তার কাছে জিওল মাছের চেয়েও দামী। ছিটেবেড়ার ঘরে বাঁশ-পাটার কপাটে সামান্য একটা শিকল।তাতে তালা ঝুলিয়ে রাত কাটায়। ভাইদের সঙ্গে বনিবনা নেই। কোলের কাছে শুয়ে থাকে মেয়ে দুটো আর ছোট ছেলেটা। মাথার গোড়ায় রাখা থাকে ধারালো বঁটি। অনেকেই যে তাকে ছিঁড়ে খাবে বলে ওৎ পেতে থাকে লখি তা জানে।
সেবার ভোর রাতে দাসপুর আড়ত থেকে মাছ আনতে গেলে ঝন্টু মালিক তার হাত ধরে ঘরের ভিতরে টেনে নিয়ে যেতে চায়। তখুনি লখি ঝন্টুর পেচ্ছাপের জায়গায় সজোরে লাথি মারে। নাক মুখ চেপে লুটিয়ে পড়ে ঝন্টু। খবরটা দিনের আলোতে ছড়ায়। সেই থেকে অনেকের ইচ্ছেটিচ্ছে হলেও লখির দিকে এগোতে বুকে সাহস পায় না।
রুখাশুখা মাটি ভাদ্রের জলে ভিজে যেমন দলদলে হয়ে যায়, তেমনি লখির রক্তমাংসের শরীরে জোয়ার ভাটা আসে। ভিজে উঠে মনের আনাচকানাচ। রাতে ঘুম ভেঙে গেলে বিহারের সেই ঘুপচি ঘরের দুর্বিসহ রাতগুলো ভাসে। চোখ ভিজে যায়। বালিশটায় মুখ গুঁজে জড়সড়ো হয়ে ইচ্ছের আগুনটাকে নিভিয়ে দিতে চায় জোরপূর্বক। কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছের চালচলন তার হাতে তো থাকে না।
এক্ষেত্রেও থাকল না। অনেকদিন থেকেই লখি ব্যাপারটা নজর করছিল। একটা লোক প্রতি হাটেই এসে দূর থেকে তাকে দেখে। তবে লোকটার চাহুনি অন্যদের মতো নয়। দেখেও না দেখার ভান করে সে এড়িয়ে যায়। হঠাৎ একদিন হাট ফেরত মাঝ রাস্তায় তার পথ আটকে দাঁড়ায় প্রভাকর মাইতি। দলিল লেখক।
---তমার সঙ্গে একটু কথা ছিল। যাব একদিন তমার ঘর।
অন্য কেউ হলে লখি এতক্ষণ ঝাঁঝিয়ে উঠত আগুনের মতো। এই সময় তার গলা যেন আপনা থেকেই নরম হয়ে গেল, ---কী বলবে এখিনেই বল। মাছের অডার দিবে ঘরের অনুষ্ঠানে?
লখি নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চায়।
---না,তমাকে লিয়ে কথা। ঘরে জেয়ে বোলবো।
--এলে দিনের ভাগে এসবে। নইলে লখির চৌকাঠ মাড়াবেনি।
সেদিনই বিকেলে প্রভাকর পৌঁছায় লখির দরজায়। চৌকিতে অনেকক্ষণ মুখ গুঁজে বসে থাকে। লখি দূরে দাঁড়িয়ে বলে
---কী বোলতে এসছ বল এবার।
---মানে তমাকে আমার ভাল লাগে।
খলখল করে হেসে উঠে লখি। বলে,
---আমাকে না আমার কাতলামাছের মতো গতরকে? গায়ের আঁশ গন্ধে টিকতে পারবে?
কী উত্তর দেবে প্রভাকর খুঁজে পায় না। বয়েস তার চল্লিশ ছুঁয়েছে কবেই। কিন্তু ভাললাগা তো বয়েস বোঝে না। কিছু না বলতে পেরে মরা মাছের মতো অসহায় মুখে তাকিয়ে থাকে লখির দিকে।
---তাই তমাকে ক'হাটে দেকছি লখিকে দেকছ। জান ত লখি জাতে বগ্গখত্তিয়। তমাকে ত দেখে মনে হয়নি মোদের জাতের বলে।
---জাত আবার কী। তমার ঘর করতে ইচ্ছা হয়নি আর?
এবার লখি বোঝে আশেপাশের গ্রামেরই লোক হবে সে। তার সমন্ধে সব জানে। ঘর বাঁধার কথায় বুকের ভেতরটায় ক্যামন যেন মোচড় দিয়ে উঠে। কিন্তু বুঝতে দ্যায় না সে। স্বর ভারী করে বলে,
---ঘরে ছ্যানা-মেইছ্যানারা আছে। তুমি যাও। আমাকে হাঁড়ি মাজতে হবে। ইসব লিয়ে কুনুদিন লখি ভাবেনি।
বলেই ঘরের ভিতরে সোজা চলে যায়। তার একটু পরে প্রভাকরও মাথা নীচু করে সাইকেল ঠেলে হাঁটা দ্যায় ঘরের দিকে।
কেটে গ্যাছে সপ্তাহখানেক সময়। লখি খোঁজ নেয় প্রভাকর সমন্ধে। পাশের একটা গ্রাম ছাড়িয়ে তার বাড়ি। জমিজমার দলিল লেখে। জাতে মাহিষ্য। বউ দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছে। ছেলেপুলে নেই তার। বিষয় আশয় আছে যথেষ্টই। ডাক্তার এক প্রকার জবাব দিয়ে দিয়েছে।
এর মাঝে প্রভাকর আগের মতো সব হাটেই আসে। দূর থেকে দ্যাখে আর কিছুটা সময় পর চলে যায়। লখির ইদানীং মন মাঝেমাঝে আনমনা হয়ে যায়। মেয়ে দুটো বড় হচ্ছে। কত কিছু ভাবে। ভাবে কতদিন তার আঁশবঁটির ধার থাকবে! আঁশবঁটি তার পয়মন্ত লক্ষ্মী। তার ইজ্জত রক্ষার হাতিয়ার। প্রতিদিন সে ভোরে বঁটিটা হাতে নেবার আগে মাথা ঠুকে তাতে। একদিন ঠিকই এই বঁটি ভোঁতা হবে। তখন কী করবে লক্ষ্মী। জীবনে কোন প্রলোভনেই সে ভেসে যাইনি। গায়ের আঁশটে গন্ধ মুছে মৎস্যগন্ধা থেকে পদ্মগন্ধা হবার ইচ্ছে তার সংযমকে টলাতে পারেনি।কিন্তু আজ সে কোন পথে যাবে ঠিক করতে পারে না। প্রভাকরের উপর তার রাগ নাকি মায়া বুঝতে পারে না। যখন সে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বিফল হয়,তখন ছেলেমেয়েদের গালিগালাজ করে অকারণেই।
সেদিন কোন খেয়ালে লখি নিজেও জানেনা,সোজা চলে যায় প্রভাকরের বাড়ি। সময় বুঝেই যায় সে।যাতে প্রভাকর বাড়িতে না থাকে তখন। প্রভাকরের স্ত্রীকে দুয়ারে অসহায়ের মতো বসে থাকতে দেখে বড্ড মায়া হয় তার। লখির সাহস বরাবরই তার আঁশবঁটির মতো ক্ষুরধার। তবু এখানে এসে যেন তার বুকটা ঢিপঢিপ করে। নরম গলায় জিগ্যেস করে,
---লেখকবাবু ঘরে আছে?
ক্ষীণ গলায় উত্তর আসে--না।
লখি কাছে গিয়ে পাশে বসে তার শরীর খারাপ নাকি জানতে চাইতেই বন্যার স্রোতের মতো কথা বেরিয়ে আসে প্রভাকরের স্ত্রীর মুখ থেকে-
---সারাদিন এখন ঘরে থাকে নাকি! ওই কাগজের ব্যাগ সাইকেলে ঝুলিয়ে বেরি যায়। আমি ত যে কুনু দিন মোরবো। ভগমান যা অসুখ দিছে। শুনি নাকি কে একটা মেছানির পতি মজেছে। কী আর কোরবো। মোর গতর কী আর আছে। ছ্যানা-সুখ তাকে কিছু দেইনি বলে রেগে রেগে থাকে। ডাক্তার দেখাচ্ছে চাপে পড়ি। মেয়াটিকে নাকি বিয়া করবে। বলেছি তমার দেওয়া সিঁথায় সিঁদুর থাকতে ইঘরে কাউকে আনোনি। কদিন ত আছি। সিঁদুরটা তুলেই না হয় আনবে।
বলেই হু হু করে কেঁদে উঠে। কিভাবে স্বান্ত্বনা দেবে লখি ভেবে পায় না। তারও চোখের পাতা যেন ভারী হোয়ে উঠে। সামলে নিয়ে বলে,
--অত চিন্তা কোরোনি। মাথার উবরে ঠাকুর আছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সেখানে আর থাকতে না পেরে চলে আসে লখি। ধীর পায়ে হাঁটে আর আকাশপাতাল ভাবে। কখন ঘরের উঠোনে এসেছে খেয়াল করেনি। ছোট ছেলেটা মা মা বলে দৌড়ে এসে জাপটে ধরতেই ঘোর কাটে। বাইরে রোদ যেন কই মাছের মতো তাপের কাঁটা উঁচিয়ে খলবল করছে। দুয়ারটায় বসে এক নিঃশ্বাসে অনেকটা জল খেয়ে নেয়। বুকের ভেতরে তার কেমন যে হচ্ছে থই পায়না সে। শুধু বড় মেয়েটাকে বলে,
---আজকে রাঁদতে মন নাই। তরা সবাই মুড়ি খেয়ে লিবি।
বলে ঘরে ভিতরে তক্তপোশের উপর সেই অবস্থায় শুয়ে পড়ে। চোখে-পাতায় কখন লেগে গ্যাছে জানে না। হঠাৎ একটা গলার স্বর শুনে উঠে বসে সে। দরজার সামনে এসে দেখে দুয়ারে চৌকিতে বসে আছে প্রভাকর। ছোট ছেলেটাকে ডেকে সে চকলেট দিতেই দে দৌড়। প্রভাকরকে দেখেই মাথায় যেন আগুন জ্বলে যায় লখির--
---ক্যানে এসছো ইখিনে। চলে যাও,ভাল মুখে বলিঠি।
---আমি আজকে সহজে যাবনি। তমার মুখের জবাব লিয়েই যাব।
কথাটা বলেই সোজা প্রভাকর দাঁড়ায় লখির মুখোমুখি। লখি দেরি না করে মুহুর্তে দেয়াল গায়ে রাখা আঁশবটি হাতে তুলে নিয়ে রক্তমুখো হয়ে উঠে
---ঘরে একটা বউ থাকতে অন্য মিঁয়ার দিকে নজর দিবার খুব শখ লয়! ক্যানে! অসুখ বলে তার গতরে আর মন ভরেনি। বেরি যাও ঘর থেকে বলিঠি। লিজের বউয়ের কাছে যাও। সংসার ভাঙার জ্বালা লখি জানে। যাও বলিঠি নাইলে লখি বাগ্দীর আঁশবটি কাকেও ডরায়নি।
হাতে আঁশবঁটি,পিঠে ছড়ানো খোলা চুল, শাড়ি এলানো মাটিতে। লখিকে এমন মূর্তিতে দেখে ভয়ে চমকে উঠে প্রভাকর। পিছিয়ে ঘর থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে যায়।
এদিকে তখন লখির রুদ্ররূপের আঁচ চোখের বৃষ্টিতে নিভে ঝাপসা হতে থাকে। ধপাস করে বসে পড়ে সে মাটিতে । তখনো হাতে শক্ত করে ধরা থাকে তার আঁশবটি।
----------------------
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।