Click the image to explore all Offers

গল্প ।। প্রেতাত্মা ।। ফাতিমা তাবিয়া‌ সুবাহ

 



 

 

ঘড়ির কাঁটা বলে দিচ্ছে রাত প্রায় একটার কাছাকাছি। শহরে এই সময়টায় অনেকেই জেগে থাকে। লাইটের কারণে  শহরে এই সময়ে রাত মনেই হয়না। তবে এই গ্ৰামে সম্পূর্ণই আলাদা। সন্ধ্যা হতেই চারিদিকে আঁধার নেমে আসে। দেখে মনে হয় গভীর রাত। আজকের দিনটায় সন্ধ্যার পর কেউ ভুলেও বের হয়না। প্রিয়া তার চাচাতো বোন নিশার কাছে শুনেছিলো যে বছরের একটা দিনে এই গ্ৰামে রাতের বেলা কেউ বাহিরে বের হয়না। আজই নাকি সেই দিন।এইদিন  নাকি তাদের গ্ৰামে কেউ একজন আত্মহত্যা  করেছিলো।আর প্রতি বছর এই দিনে  গ্ৰামে প্রেতাত্মা ঘুরাঘুরি করে। তাই প্রতি  বছরের এই দিনটায় কেউ ঘরের বাইরে বের হয়না। প্রিয়া শহরে থাকে।



আজ  গ্ৰামে এসেছে। সাথে তার পরিবার। অনেকদিন থাকার পরিকল্পনা করে এসেছিলো তারা। তবে আজ বিকেলে  তার বাবার অফিস থেকে ফোন করে বললো যে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আগামীকালই ফিরতে হবে। যা আগে  তাদের কারোই জানা ছিলোনা। প্রিয়া চেয়েছিলো আজ রাতে বের হতে। কালকে এমনিতেই  চলে যেতে হবে। এরপর তো আর ঘুরতে পারবে না। কিন্তু পারলো না। দাদা, দাদিসহ এই বাসার কেউই যেতে দিলো না। আজ রাতে নাকি এই গ্ৰামে প্রেতাত্মারা ঘুরাঘুরি করে। তাই এই ভয়ে কেউ বের হয় না।


অনেকক্ষণ এভাবে বসে থাকতে প্রিয়ার খুব বিরক্ত লাগছিলো। তার ধারণা, বেড়াতে এসে বাসায় কেন  বসে থাকবো? বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে। শুধু একমাত্র প্রিয়াই এখোনো জেগে আছে। প্রিয়া আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। বাহিরে  না গেলেও অন্তত ছাদে হলেও যাবে সে। ছাদে যেতে হলেও অবশ্য বাহিরে যাওয়া লাগবে তার। কারণ ছাদের সিঁড়ি বাহিরের দিকে।  আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হলো।


এই গ্ৰামে বিদ্যুৎ নতুন এসেছে।তবে তেমন একটা উন্নত নয়। কিছুক্ষণ পরপরই বিদ্যুৎ চলে যায়। যেমনটা এখন হয়েছে। প্রিয়া কখনো হারিকেন ব্যবহার করেনি।চোখে দেখেছেও এই প্রথম। প্রিয়া তার ফোনের টর্চ জ্বালিয়েই তখন এগিয়ে গেল। তবে বাসার সদর দরজার কাছে  আসতেই বিপদে পরে গেল। দরজা তালা দেওয়া। নিশ্চয়ই প্রেতাত্মাদের ভয়ে দরজা তালা দিয়ে রাখে সবাই। চাবি হয়তো দাদির কাছে আছে। তাই এই মূহুর্তে বাহিরে যেতে পারবে না সেটা সে স্পস্ট ভাবে বুঝে গেল। তাই  মন খারাপ করে সে রূমে চলে এলো। হঠাৎ চোখ গেল জানালার দিকে। তারপর এগিয়ে  গিয়ে জানালাটি খুললো।


খোলার সাথে সাথেই এক দমকা হাওয়া এসে মুখে লাগলো তার। চারিদিকে অন্ধকার। দেখে মনে হচ্ছে এলাকাটি কালো চাদরে ঢাকা আছে।  হঠাৎ চোখ পরলো কিছুটা দূরে অবস্থিত  ঝোপঝাড়ের দিকে। সাদা কাপড় পরা এক অবয়ব হাঁটাহাঁটি করছে এখানে। হাঁটাহাঁটি বললেও ভুল হবে। অনেকটা বাতাসের গতিতে একেকবার   যাচ্ছে। চারিদিকে এত অন্ধকারেও তাকে দেখতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।প্রিয়া অবয়বটির চেহারা দেখার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। হঠাৎ তার মাথায় একটি বুদ্ধি এলো।


সে অনেকগুলো কাগজ একত্রে একটি বল বানিয়ে সেটি ছুঁড়ে দিলো সেই  অবয়বটির দিকে। সাথে সাথেই অবয়বটি তার হাঁটাচলা বন্ধ করে দিলো। তবুও পিছন ফিরে তাকালো না। প্রিয়া তখন একই  কাজ আবারো করলো। তারপরেও কিছুইহলোনা।বরং অবয়বটি উধাও হয়ে গেল।

প্রিয়া সেখানেই বসে রইল। হঠাৎ সে শুনলো কেউ একজন তার নাম ধরে ডাকছে।



খুবই চিকন তারকন্ঠস্বর। কিন্তু কে ডাকছে তাকে? কৌতূহল  নিয়ে চারিদিকে তাকালো। কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। বাড়ির কিছুটা দূরেই একটি জঙ্গল। মনে হচ্ছে সেখান থেকেই শব্দটি আসছে। হঠাৎ  তার মাথায় একটি বুদ্ধি এলো। এই বাসায় একটি খুব বড় জানালা আছে যার মধ্যে কোনো গ্ৰিল  নাই।প্রিয়া সেই জানালার কাছে গেল এবং জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। তারপর এগিয়ে গেল জঙ্গলের দিকে। জঙ্গলের যত কাছে আসছে ততই শব্দটা জোড়ে শোনা যাচ্ছে।


হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো প্রিয়া।

একটি সাদা সাড়ি পড়া মেয়ে দাড়িয়ে আছে এখানে। চুল অতিরিক্ত এলোমেলো হওয়ার কারণে মুখ দেখা যাচ্ছে না। প্রিয়া হঠাৎ দেখলো তার আশেপাশে ঠিক সেই মেয়েটির মতো  দেখতে আরো অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ার হঠাৎ ভয় লাগতে শুরু করলো। তাই কোনো কিছু না ভেবেই দৌড়াতে শুরু করলো। তবে সে কোনো দিকে খেয়াল না করেই দৌড়াচ্ছিলো তাই সামনে থাকা কাঁদার উপর পড়ে গেল। সে দেখলো সাদা শাড়ি পড়া মেয়েটি তার দিকেই এগিয়ে আসছে এখান  থেকে উঠে যাওয়া সম্ভব না প্রিয়ার পক্ষে। তাই সে সেখানেই পরে রইলো। আর জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।



জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করলো প্রিয়া। তার পাশে মা বাবা বসে আছে। প্রিয়াকে চোখ খুলতে দেখেই তার মা বাবার মুখে হাসি ফুটে  উঠলো।প্রিয়া তেমন কিছুই মনে করতে  পারছেনা। কি হয়েছিল তার সাথে? সে  এখানে কেন? পরবর্তীতে প্রিয়া জানতে পারলো যে, সেদিন  সকালে তাকে রাস্তার মাঝে পাওয়া যায়। তখনো সে অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো। এরপর তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। তবে  কোনোভাবেই তার জ্ঞান ফিরানো যাচ্ছিলো না। তাই তাকে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গতকাল সারাদিন সে অজ্ঞান অবস্থায়ই ছিলো। আর আজ সকালে তার জ্ঞান ফিরলো।



                কারো ডাকে অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলো প্রিয়া। সামনে তাকিয়ে সে তার কাজিন নিশাকে দেখলো তখন। আজ প্রিয়ারা আবার গ্ৰামে এসেছে। প্রায় দুইবছর  পর। এতক্ষণ আগেরবার গ্ৰামে এসে যা ঘটেছিল তা মনে করছিলো প্রিয়া।

প্রিয়াঃ  নিশা, কত তারিখ আজকে?

নিশাঃ  চৌদ্দ নভেম্বর , কেন?



সাথে সাথেই চমকে উঠলো প্রিয়া। আজকে চৌদ্দ নভেম্বর তা জানা ছিলো না তার। অর্থাৎ আজই সেই দিন, যেদিন প্রতি বছর  গ্ৰামে প্রেতাত্মারা ঘুরাঘুরি করে।  

--------------------

ছবিঋণ- ইন্টারনেট 

 



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.