ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
ডাউন নৈহাটি লোকাল । অফিস ফেরত এই ট্রেনে করেই আমি বাড়ি ফিরি। ট্রেনে উঠে
রোজকারমত আজও বসার জন্য সিট পেয়ে গেলাম। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। হঠাৎ করে এক ফেরিওয়ালার বিকট চিৎকারে আমার
সাধের ঘুমটা ভেঙে গেল।ঘুম ভাঙার কারণে প্রথমে একটু রাগ হলেও,পরে ভাবলাম,
এতে ওর দোষ কোথায়। রুটিরুজির জন্য এটা তো ওকে করতেই হবে। অতঃপর আড়মোড়া ভেঙে সোজা হয়ে বসে ওর ঝুড়ির দিকে তাকালাম। ইতিমধ্যে বেশ কিছু যাত্রী ওর ঝুড়িতে থাকা লেবু থেকে সেরা লেবুগুলো বাড়ি নিয়ে যেতে বাছাবাছি শুরু করেছে। শেষমেষ খানিক বাদে আমিও এগিয়ে গেলাম ঝুড়ির কাছে। আর একটা মাত্র লেবু পড়ে আছে ঝুড়িতে। কুৎসিত,কদাকার একটা লেবু। লেবুর উদ্দেশে বাড়ানো আমার হাতটা আপনা থেকেই উঠে এল ঝুড়ি থেকে। পরক্ষণেই আমার মনে হল বিমলার কথা। হ্যাঁ,বিমলা আমার বোন।একান্ত আপনার বোন। আজও ওর বিয়ে হয়নি। পাত্রপক্ষ থেকে এযাবৎ যে বা যারা ওকে দেখেছে,অবাছাাই লেবুটির মত ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে।একটা কালো, কুৎসিত মেয়েকে ক'জন আর পছন্দ করে।এ কথা মনে হতেই, ঐ কদাকার লেবুটাকে ঝুড়ি থেকে তুলে নিল আমার হাত।চটপট খোসা ছাড়িয়ে লেবু খেয়ে দেখি--আঃ,কি মিষ্টি সেই কমলা!!এদিকে যারা বাছাই করে লেবু কিনেছিল,তাদের মধ্যে দু-একজন টক বলে চেঁচিয়ে উঠেছে। আমার মনে তখন প্রশান্তির হাসি।সুন্দরি না হলেও,মনের দিক থেকে আমার বোনটিও কিন্তু কুশ্রি ঐ লেবুটির মত অতীব মিষ্টি মনের একটি মেয়ে--উপর থেকে দেখে যেটা বোঝার উপায় নেই।
অনেকদিন বাদে আজ সন্ধ্যেতেই পাত্রপক্ষ থেকে ওকে দেখতে আসার কথা
আছে।আজকের ঘটনায় আমার মনে হল--ওর রূপটা না দেখে ওরা যদি ওর মনটা বোঝার চেষ্টা করে...
যথা সময়ে ট্রেন থেকে নেমে,বেশ একটা খুশিখুশি মনে বাড়ির উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করলাম। সন্ধ্যের আগেই আজ বাড়ি ফিরতে হবে।
-----------------------------
বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত
৬৮/৪০এ,যশোহর রোড
অমরপল্লী,কোলকাতা-৭০০০৭৪
মোঃ৭০৪৪৭৬৭০৯০ (হোয়াটসঅ্যাপ)