অনেকের অনেক বছরের সাধ অন্তত: জীবনে একবার সপরিবারে গঙ্গা সাগর মেলায় যাবেন । কিন্তু রামলাল ঝুনঝুনওয়ালার জীবনে তেমন কোন সাধ কোন দিন ছিল না । তিনি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন গঙ্গা সাগর মেলায় যাবেন । পৌষ মাসের মাঝামাঝি কেরালা থেকে হাওড়া রওনা দিলেন সপরিবারে । তিনি কেরালার কেতু পল্লীর মানুষ । পরিবার বলতে মা বউ আর তিন মেয়ে । বাবা গত দু'বছর পূর্বে মারা গেছেন । বয়স হয়েছিল বিরানব্বুই বছর । মায়ের এখন নব্বুই ।
তিন দিন পরে হাওড়ায় নেমে ঘন্টা দুই বিশ্রাম নিয়ে শিয়ালদহ হাজির হলেন । তার পরে কাকদ্বীপ লোকাল ট্রেন করে কাকদ্বীপ স্টেশনে নামলেন, রাত তখন দেড়টা । চতুর্দিকে আলো আর আলো । অন্ধকার বলে কিচ্ছু নেই । মেলা জমে উঠছে সন্দেহ নেই । সব তীর্থ বার বার গঙ্গা সাগর একবার ! পৃথিবীর সব মানুষ তা বিশ্বাস করেন । অস্বীকার কেউ কোন দিন করতেই পারবেন না ।
লট এইট হয়ে ভেসেল করে মুড়িগঙ্গা পার হয়ে কচুবেড়িয়া দিয়ে বাসে করে একদম কপিলমুনীর মন্দির উপস্থিত হলেন । মূল মেলা শুরু হয়েছে মন্দিরের তিন দিকে, মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে, আর সামনে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বিরাজমান । জল আর জল । ঢেউ আর ঢেউ । শেষ নেই ।
মেলা জমে উঠছে । লাখ লাখ পূর্ণ্যার্থী । পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ ! দোকানপাট কেনাবেচা কোন কিছুর শেষ নেই । মি: ঝুনঝুনওয়ালা সপরিবারে স্নান সেরে মন্দিরে পূজা দিলেন । পূণ্য অর্জন করে ঘটা করে উল্টাপাল্টা মেলায় ঘুরতে লাগলেন । এক সময় সন্ধ্যা নামলো, প্রচন্ড ভীড়ে ঘুরতে ঘুরতে তিনি দেখলেন বউ আর তিন মেয়ে, মা তাদের মধ্যে নেই । কোথায় যেন মা হারিয়ে গেল । নাকি তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে মা কে হারিয়ে ফেললেন, তা ভগবানই জানেন । হঠাৎ বউ কে বলে উঠলেন,
--- তুমি মেয়েদের নিয়ে এখানে থাকো, কোথাও যাবে না । আমি মা কে খুজে নিয়ে আসি ।
--- যাও । দেরী করো না । বলতে বলতে বউয়ে চোখে জল চলে এলো । মেয়েদেরও মন খারাপ ।
ঘন্টা খানেক পরে ফিরে এসে তিনি বললেন,
--- হাজার চেষ্টা করেও মাকে পেলাম না । লাখ লাখ লোকজন, আর সম্ভব নয় মাকে খুজে বার করা । চলো, ফিরতে শুরু করি । মাকে কপিলমুনীই দেখবেন । আশা করি, কোন অসুবিধা হবে না । ঠাকুর ভরসা ।
অগত্যা সবাই কে সব মেনে নিতে হল । তিনি কয়েক দিন পরে সপরিবারে কেরালায় প্রত্যাবর্তন করলেন । মা গঙ্গা সাগর মেলায় পরে রইলেন ।
==================
যোগাযোগ :
Sirajul Islam Dhali
address :
1, Purbayan, Subhasgram,
Sonarpur, Kolkata-700147
.........
11.06.22