Click the image to explore all Offers

গল্প।। মদন ।। অঙ্কিতা পাল

 

 


সন্ধ্যে হল বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে আর চতুর্দিকে প্যাচপ্যাচে কাদা। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আজ প্রায় দুদিন হল তাই ঘরে ঘরে কারুর বা হারিকেন কেউ মোমবাতি কেউবা লম্ফ জ্বালিয়ে জীবন কাটায়। গ্রামের নাম গোপালপুর সেখানে মদন নামে একজন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘরে বৃদ্ধা মা বউ দুটো ছোট ছোট ছেলে মেয়ে মিলে মোট পাঁচ জনের সংসার। মদনের  দিন আনে দিন খায় আবার কখনো বা নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থা। আজ মদন দূরে রেল স্টেশনে ডাক্তারবাবুকে পৌঁছে দিতে গিয়েছিল তাই তিনি খুশি হয়ে তাকে দুটি টাকা বেশি দেন। মদন মনে মনে খুব খুশী হয় এবং সে ছেলেমেয়েদের জন্য মাংস আনতে স্টেশনের ওপারের বাজারে যায়। মদন বেরিয়েছে প্রায় দুঘন্টা  তিন ঘন্টা কেটে গেছে সেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে মদনের বউ লক্ষী পুকুরে গা ধুয়ে চাল ধুয়ে এনে তাদের ভাঙ্গা বারান্দা র এককোনে হাঁড়িতে ভাত বসায় এবং উনুনে জ্বাল দিতে দিতে হাঁক দেয় - অ   পুটি কোথায় গেলি? কিরে তোর বাপ এলেগা।  ডাক শুনে পুটি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে উত্তর দেয় -  না মা বাবা এখনো আসেনি। তার মা গদগজ করতে করতে বলতে থাকে - কি যে নোলা তোদের দুপুরে গিলতে বসে মাংস খাবো মাংস খাবো। ওমনি মানুষটা ও গদগদ হয়ে ছুটে চলে গেলো; আর ফেরার নাম নেই আঁধার ঘনিয়ে এলো। ওদিকে শাশুড়ি বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিৎকার দেয় - ও বৌ কিরে খোকা এলো? মদনের বউ চুপ করে থাকে সে  আবার উনুনে জ্বাল দিতে থাকে। বুড়ি আবার চিৎকার করতে থাকে খোকা খোকা কৈ রে  মদনের বউ বুড়ির এইসব চিৎকার শুনে গজ গজ করতে থাকে। অবশেষে তার ভাত রান্না হয়ে যায়।  কিন্তু মদন তখনো বাড়ি আসে না। মদনের বৌউএর খুব চিন্তা হয়  সে মাটির বারান্দায় মাথায় হাত দিয়ে  পিড়ি পেতে বসে থাকে। সে কোন রকমের শাশুড়ি, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ফেনা ভাত খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে পাশে মাস্টারদার বাড়িতে মদনের খোঁজ করার জন্য যায়; হাঁক দেয় - ও মাষ্টারদা মাস্টারদা বাড়িতে আছেন? কিছুক্ষণ পরে তপন মাস্টার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে এবং কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে - কি ব্যাপার লক্ষীদি এত রাতে? সঙ্গে সঙ্গে তার বউ ও ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলে -কি গো লক্ষ্মীদি কি হলো? লক্ষ্মী অর্থাৎ মদনের বউ হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে এবং থাপড়িয়ে তাদের উঠোনে বসে বলে - জানেন তো মাস্টারদা মানুষটা আসে কখন বেরিয়েছে এখনো ঘরে ফেরেনি,  দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল বিকেল গড়িয়ে রাত্রি হয়ে গেল। মাস্টার সেই  রাতেল লক্ষীকে নিয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল স্টেশন এর উদ্দেশ্যে........... গিয়ে স্টেশন চত্বর ভালো করে খোঁজাখুঁজি করা হলো রাতে স্টেশনে থাকা পাহারাদার ও পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো কিন্তু কোথাও মদন কে খুঁজে পাওয়া গেল না। তারা ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এলো। পরদিন খুব ভোরে উঠে লক্ষী মাস্টার ও অন্যান্য পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। দু চারদিন পর মদনের বউকে শহরের একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে মদনের মৃতদেহ লক্ষ্মীকে দেখানো হয়, লক্ষ্মী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তার চোখ মুখে আঁধার নেমে আসে সে মাথা চাপড়াতে থাকে ও মনে মনে ভাবে আমি ওই বৃদ্ধ মা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে কি করবো কোথায় যাবো এই চিন্তায় সে মদনের মৃতদেহ কে জড়িয়ে ধরে মাথা ঠুকে কাঁদতে থাকে। ময়নাতদন্তের পর জানা যায় মদন সেদিন রেল লাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারায়। 
========== 


 
ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.