লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কিছু কথা
ড:রমলা মুখার্জী
আমার প্রিয় লেখিকাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য। তাঁর গল্প, উপন্যাস, ছোটদের গল্প ও গোয়েন্দাকাহিনিগুলির প্রত্যেকটিই অসাধারণ।
সুচিত্রা ভট্টাচার্য ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ১০ই জানুয়ারি বিহারের ভাগলপুরে তাঁর মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিত্রালয় ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে। কলকাতায় তাঁর স্কুল ও কলেজ জীবন কাটে। তিনি কলকাতার যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে স্নাতক হন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তাঁর বিবাহ হয়। বিভিন্ন স্থানে চাকরি করার পর তিনি সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন। ৫৪বছর বয়সে তিনি যখন খ্যাতির মধ্য গগনে তখন তিনি লেখার জগতে পরিপূর্ণ ভাবে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দেন।
সুচিত্রাদির লেখনীতে নারীদের দুঃখ-দুর্দশা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, নৈতিক মূল্যবোধ ইত্যাদি চমৎকারভাবে সমকালীন সমাজ-দর্পণ হয়ে পাঠকের মনে সুচারুভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি মহিলা গোয়েন্দা মিতিন মাসি; কিশোর উপন্যাসগুলি পড়েও আমি মুগ্ধ হয়েছি। তিনি বহু ছোট-বড় গল্প লেখার পাশাপাশি চব্বিশটি বিখ্যাত উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর দহন উপন্যাসটি নিয়ে বিখ্যাত সিনেমা তৈরি হয়েছে, যাতে মেয়েদের অসম্মানে মেয়েদের রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা আছে। তাঁর "হেমন্তের পাখি" উপন্যাসে বেশি বয়সে অদিতির প্রতিভা-স্ফুরণে পারিবারিক বাধাপ্রাপ্তি পুরুষতান্ত্রিক সমাজকেই কটাক্ষপাত করেছে। তাঁর "কাচের দেওয়াল","পরবাস" "অন্যবসন্ত" ইত্যাদি প্রায় সব উপন্যাসই অনবদ্য। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে তারাশঙ্কর, ভুবনমোহিনী সৈলজানন্দ স্মৃতি, মতি নন্দী, সাহিত্য সেতু প্রভৃতি বহু পুরস্কার।
নিজের নারী বলে সুচিত্রা ভট্টাচার্য নারী মনের গহনে ডুব দিয়ে মুক্ত আনতে পেরেছিলেন।শহরের মধ্যবিত্ত নারী-মনের কথা, নারীর কামনা-বাসনা, দাম্পত্য সংকট ইত্যাদিতে ভরপুর তাঁর লেখনি-সম্ভার। আধুনিক যুগের প্রেক্ষাপটে তাঁর বাস্তব জীবনের জলছবিগুলি পাঠকের মনে কখন যেন নিজেদের ছবি হয়ে ভাসতে থাকে।
২০১৫ সালের ১২ই মে ঢাকুরিয়ার বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুচিত্রা ভট্টাচার্য পরপারে যাত্রা করেন। কিন্তু কথাশিল্পীরা তাঁদের লেখনীতেই অমরত্ব লাভ করেন। তাই সুচিত্রা ভট্টাচার্যও পাঠকের হৃদয়ে চিরঅম্লান থাকবেন তাঁর অনবদ্য সৃজন-সম্ভারের মধ্যে দিয়ে।
===========
ডঃ রমলা মুখার্জী,
বৈঁচী, বিবেকানন্দপল্লী,
জেলা হুগলী, পিন ৭১২১৩৪
মোঃ ৭০০৩৫৫০৫৯৫