গল্প ।। মেয়ের দুস্বপ্নের রোজনামচা ।। সান্ত্বনা চ্যাটার্জি
মেয়ের দুঃস্বপ্নের রোজনামচা
সান্ত্বনা চ্যাটার্জি
প্রায়
অন্ধকার আবছায়া ঘরের মধ্যে একটি মানুষের আকার ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে। বুকের ধ্বক ধ্বক শব্দ ব্যতীত আর কোনও শব্দ কানে আসছেনা ।মেয়েটি সন্তর্পনে পাশে শায়িত শিশু কন্যাকে স্পর্শ করে নিশ্চিন্ত হয়। নাতি ঠিক ঠাক আছে।এটা কি দুঃস্বপ্ন নাকি
সত্য? কে ঐ ছায়া
মানব, কেনই বা তার ঘরে
এসেছে?
অবশেষে
রাত ভাঙ্গা আকাশের তারা সব একে একে
হারিয়ে যায় নতুন ভোরের আলোয় সোনালী আভায়।ঘুম ভেঙ্গে যায় আর তখনই একটি
যুবক কে দেখা যায়।
সে খাট থেকে নেমেই ছুটে তার স্যুবকের বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে।আমাদের নিয়ে চল তোমার বাড়ি ,একা এত ছোট্ট তিতিরকে নিয়ে আমি থাকতে আর পারছি না।
ঠিক আছে চল আজই তোমাদের নিয়ে যাচ্ছি ।….সকাল হয়ে গেছে তবু ধীরে ধীরে চারি পাশ কেমন একটা ধোঁয়া ধোঁয়া অন্ধকারে ঢেকে দেয় চারি দিক।সোনালী সকাল কোথায় গেল।
খুবই ধনী এবং বিশাল আবাসনে থাকেন ছেলের বাবা তেমনি বিশাল এবং সুসজ্জিত তাদের বাসস্থান। মেয়ে কোলে নিয়ে যবু থবু দাঁডিয়ে অপেক্ষা করে দরজার সামনে।
কিছু পরেই একটি লোক ঢোকেন তাঁর পিছনে বিকাশ, হ্যাঁ তো বিকাশ নাম ছেলেটার, এতক্ষন মনে পড়ছিল না।
এই ছেলে কোলে মেয়েটিকে তুই বিয়ে করেছিস।
হ্যাঁ বাবা।
আইনত ?
না বাবা আমরা কালিঘাট মন্দিরে বিয়ে করেছি।
কোনও সাক্ষী ?
পুরোহিত আর মাকালি …
এ বিয়ে আমি মানিনা।
কিন্তু বাবা…
কোনও কিন্তু নেই বিকাশ, এমন বিয়ে সমাজ ও মানে না। তুই আমাদের এক মাত্র সন্তান, তোকে ঘিরে কতো স্বপ্ন তোর মায়ের।
বিকাশের বাবা ধীর পায়ে মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়ান ,
দেখ মেয়ে এ বিয়ে আমি মানি না। তুমি ই বা কেমন মেয়ে, কেমন তোমার পরিবার, বিয়ের আগেই মেয়ে কোলেএখানে চলে এলে। তোমার অভিভাবক এ সব মেনে নিতে পারেন, কিন্তু আমরা এমন ব্যাভিচার ক্ষমা করতেপারিনা। লোকে ছি ছি করবে। এর পরে পকেটে হাত দিয়ে এক তারা একশ টাকার বান্ডিল এগিয় দিলেন, ধরো এটা নিয়ে মেয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাও।
মেয়েটির চোখ বিকাশ কে খোঁজে।
বিকাশ চলে গেছে, আর বিকাশ ও আমার সাথে একমত।তোমাদের মতন স্বস্তা মেয়ে ওর জীবনে অনেকএসেছে।অদ্ভুদ এক নিষ্ঠুর হাসির আভাস বিকাশের বাবার চোখে মুখে।
হত বাক মেয়ে মাথা নিচু করে মেয়ে কোলে বেডিয়ে যায়, আর হ্যাঁ টাকাটা সে হাত পেতে নিয়েছে।তার আর কোনও উপায় নেই।এ টাকায় তিতিরের অধিকার আছে।
হঠাৎ কানে মোবাইলের আওয়াজ। ধর্রমর করে উঠে বসলাম। একি আমি তো স্বপ্ন দেখছিলাম ,এখন ও বুক ঢিপঢিপ করছে। ঘুম ভেঙ্গে গেলে স্বপ্নরা পালিয়ে যায়, পুরো স্বপ্ন কিছুতেই মনে রাখা যায় না। যাই হোক বুঝলাম টেলিফোন নয় আমার সদর দরজার বেল বাজছে।
কলের মিস্ত্রী দিলীপ এসেছে। দিলীপ মন্ডলের আমাদের এলাকায় বেশ নাম ডাক আছে।বাবার পেশা আর ব্যবসা বাড়িয়েছে এবং সে এখন নিজেই পাড়ার বহু ছেলের কর্ম্ম সংস্থান করে।
আমি বললাম কি ব্যাপার, থানায় গেছিলে?
গেলাম তো মাসীমা তবে কোনও কাজ হবে বলে মনে হয় না।
এখানে বলে রাখা ভালো দিলীপের দুটি কন্যা সন্তান, গৌরী আর কালি, দুজনার গায়ের রঙ মিলিয়ে দুজনার নাম দেওয়া হয়েছে।।বড় মেয়ে গৌরী বারো ক্লাস পাশ করে কলেজে ঢুকেছে। সেখানে তার এক প্রাক্তন ছাত্রের সাথে মেলা মেশা,প্রেম ভালোবাসা এবং সহবাস ও সম্পন্ন । এখন সমাজে অবাধ মেলা মেশার চল হয়েছে ।অবশ্যই কোনও অভিভাবক কে না জানিয়েই ।
ফলে গৌরী অন্তসত্ত্বা। এতেও অসুবিধা ছিল না কিন্তু ছেলেটি সমাজের উপর তলার এবং সে জানিয়েছ এ বিয়েতে বাবার মত নেই তাই তার এক সম্ভ্রান্ত রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ের সাথে তার বিয়ে স্থির করেছেন।
মেয়ে এসে মার কাছে কেঁদে পড়ায় সন্তানের মুখ চেয়ে দিলীপ ছেলের বাবার সংগে দেখা করে এবং অত্যন্ত অপমানিত হয়ে ফিরে আসে।
সব শুনে আমি বলেছিলাম এলাকার থানায় একটা ডাইরি করতে। গতকাল দিনের বেলায় যাবার কথা ছিল।
কেন কাজ হবেনা, কি বলল থানায়?
থানার বডবাবু ছেলের সম্পর্কে মামা হন। ছেলের বাবা আগেই থানায় ডাইরি করে এসেছেন আমার বিরুদ্ধে যে আমি মেয়েকে দিয়ে ব্যাবসা করাই আর সময় মতন ছেলের বাড়ি গিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা….
দিলীপের কণ্ঠোরোধ হয়ে যায়। মাথা নিচু করে চোখ মোছে ।
আমি নির্বাক চেয়ে থাকি।কোনটা বেশী কষ্টদায়ক স্বপ্ন না বাস্তব।।
============
Santwana Chatterjee