বনমহোৎসব
অশোক দাশ
সকাল থেকেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছে ।আকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন ।মাঝে -মাঝে বিদ্যুতের ঝলক আর বজ্রধ্বনির বিকটআওয়াজ। হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটায় ভেসে আসে বনফুলের সুগন্ধ। অনাবিল শান্তিতে মন ভরে যায়। অনিমেষ মনে মনে ভাবে, ফুল তার সৌন্দর্য সৌরভে মানুষকে মুগ্ধ করে। ধূপ নিজে পুড়ে নিঃশেষ করে অপরকে করে মোহিত। সবুজ বনানী প্রতিক্ষণ অক্সিজেন দান করে বাঁচিয়ে রেখেছে মনুষ্য জগত। বিনিময়ে তারা কিছুই চায় না। অথচ মানুষ যারা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বলে দাবি করে, তাদের মধ্যে এত বৈষম্য কেন? তাদের মধ্যে এত হিংসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, পরচর্চা, পরনিন্দা কেন এত প্রকট?
পবিত্র ভালবাসায় কত আনন্দ। সমাজের জন্য কিছু করা তো মানুষের কর্তব্য। এইসব ভাবনায় যখন অনিমেষ ভারাক্রান্ত তখনই তার ছোট্ট ছেলে অরিত্র- র চিৎকারের সম্বিত ফেরে।
বাবা আমাদের স্কুলে আগামীকাল বনমহোৎসব অনুষ্ঠান উদযাপন হবে। হেডমাস্টার মশাই বলেছেন প্রত্যেককে পঁচিশটা করে চারা গাছ দেয়া হবে। তোমাদের নিজ- নিজ দায়িত্বে , নিজেদের এলাকায় ,বন্ধুবান্ধবদের সাথে নিয়ে, অভিভাবক -অভিভাবকাকে পাশে নিয়ে, তোমরা ওই গাছ রোপন করবে, রক্ষণাবেক্ষণ করবে, পরিচর্যা করে বড় করে তুলবে। একটি গাছ একটি প্রাণ তাই না বাবা!
অনিমেষ আনন্দে অরিত্রকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে এখনো সমাজটার কথা ভাববার মানুষ আছে, প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর এই গুরু দায়িত্ব তোমাদেরই কাঁধে তুলে দিতে হবে।
একদল লোভী স্বার্থপর মানুষের জন্য সবুজ ধ্বংস হতে চলেছে, লালসার যূপকাষ্টে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ বলি হচ্ছে অরণ্য সম্পদ। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে সবুজকে বাঁচিয়ে রাখবো আমরা।
অরিত্র বলে ঠিকই বলেছো বাবা, আমাদের বিজ্ঞানের স্যার অমল বাবু বলেন গাছ যেমন বসাতে হবে, তেমন বীজ সংগ্রহ করতে হবে প্রত্যেককে। আম জাম কাঁঠাল খেজুর যে সমস্ত ফল আমরা খাই ,সেই সমস্ত ফলের বীজ সংগ্রহ করে শুখিয়ে জমা করতে হবে। আর সেই বীজ ফাঁকা অনাবাদি ভূমিতে ছড়িয়ে দিতে হবে। বর্ষার জল পেয়ে সেই বীজ থেকে চারাগাছ জন্মাবে, আর সেই গাছ সবুজ বনানী অরণ্য সৃষ্টি করবে। ফুলে ফলে ভরে উঠবে প্রকৃতির অঙ্গন। সেই ফল খেয়ে বাঁচবে পাখ- পাখালির দল।
তোমাদের স্যার একদম সঠিক কথা বলেছেন সভ্যতাকে বাঁচাতে অরণ্য সৃষ্টি ও রক্ষা আমাদের প্রত্যেকের সংকল্প হওয়া উচিত। বনমহোৎসব শুধু আনন্দ উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে হাতে-কলমে রূপায়িত করতে হবে।
সামনেই আমাদের পুরী ভ্রমণ আছে, সংগৃহীত সমস্ত বীজ আমরা সঙ্গে নিয়ে যাব, ফাঁকা জায়গায় অনাবাদি জমিতে আমরা ওই বীজ ছড়িয়ে দেবো, আগামী দিনে ওই বীজ থেকে চারা গাছ জন্ম নেবে। সেই গাছ মহীরুহ হয়ে অরণ্য সৃষ্টি করবে।
অনিমেষের মানস চোখে ভেসে ওঠে আগামী দিনের উজ্জ্বল সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। শত শত কচি হাত বীজ ছড়াচ্ছে, তা থেকে অঙ্কুরিত হচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভিদ, সেই উদ্ভিদ সগৌরবে মাথা দুলিয়ে গাইছে অরণ্যের গান।
===================
অশোক দাশ
ভোজান ,রসপুর ,হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত