Click the image to explore all Offers

কথাকাহিনি # ইভেন্ট ।। মিতার মুক্তি ।। অঙ্কিতা পাল


  মিতার মুক্তি 

 - অঙ্কিতা পাল 


দিনটা আজ বড়ই বিষন্ন প্রকৃতির সূর্যটা যেন আর ঠিক করে আলো দিচ্ছে না। চারিদিক শুধু গুমোট আর নিস্তরঙ্গ বাতাস বইছে না। এমন একটা বিকেলে আমি কানে হেডফোন দিয়ে ছাদে পায়চারি করছি আর গান শুনছি। এরমধ্যে আমার ফোনে একটি কল আসে ফোনটা রিসিভ করতেই আমার বড় মাসি হাউমাউ করে কাঁদছে। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই তাড়াহুড়ো করে কাল থেকে যন্ত্রপাতি খুলে তাকে প্রশ্ন করি - কি হয়েছে মাসি? মাসি কেরে কেরে উত্তর দেয় তোর মিতাবৌদি আর নেই। আমি আবার আচমকাই বলে উঠি, নেই মানে? মাসি বলেন - কাল রাতেই সে বিষ খেয়ে মরেছে। 

মিতা আমার সবচেয়ে প্রিয় বৌদি যাকে আমি খুব ভালোবাসি ও স্নেহ করি। সে আমাকে ফোন করতো মাঝে মাঝে আমিও করতাম বেশ অনেক্ষণ ধরেই কথা হতো আমাদের মধ্যে। সে সংশারের বিভিন্য কোথাও আমাকে বলতো একদিন ফোনে খুব কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল - তোর দাদা আমাকে খুব মেরেছে। প্রথমে কথাটা বিশ্বাস না করলেও পরে অবশ্য উপলব্ধি করি আমার রনি দাদা খুব বদ মেজাজী ও মাসি একটু সেকেলে এবং খিটখিটে। কিন্তু সেটাই আমাদের শেষ কথা হবে কখনোই ভাবিনি'। যাইহোক বৌদির মৃত্যুসংবাদ শুনে মন খারাপ হয়ে চোখে জল এসে গেল। ওপর থেকে শীঘ্রই নিচে নেমে এসে মাকে দুঃসংবাদটা দিলাম, মা আমার কথা শুনে হা করে তাকে মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পরলো। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা একটু জল খাবে? মা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল - আর কি হবে সবই তো শেষ। বারবার তোর বাবা আমি বড়দি রনিকে বোঝাতাম। ওরে  বউটাকে মারিস নে মারিস নি ঘরে বন্দি করিস নে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কি সুন্দর মায়াময় মুখ খানি আহাগো শেষে চলেই গেলি; বলতে বলতেই মায়ের চোখে জল এসে গেল। 

বিকেলের দিকে আমি বাবা মা মাসির বাড়ি পৌছালাম। পাড়া-প্রতিবেশী সব ভিড় করেছে মৃতদেহের সামনে। পুলিশ এসে মাসিও রনি দা কে ধরে নিয়ে চলে গেল। কোন এক প্রতিবেশী কাজল মাসি বললেন - এরা যে এত নিষ্ঠুর বউ তাকে বেরোতে দিত না, কেউ ওদের বাড়িতে গেলে বউটাকে কথা বলতে না দিয়ে বন্দি  করে রেখে দিত সারাক্ষণ। আর লোকের কাছে বলতো ওর নাকি মাথার ব্যারাম। ওদের কাজের বৌ একদিন বলছিল - একদিন খুব মারধর করে ফোন টাকে কেড়ে নিল। গতকাল রাতে প্রচন্ড চেঁচামেচি করে বউটা কাচের জালনা গুলোকে বাড়ি মেরে মেরে ভেঙে ফেললো। খগেন মামু বললেন - আমিতো সেই সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলুম, শুনলাম বৌমা খুব হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি করছে। আমি কোন কিছুই না ভেবে  বিরক্ত হয়ে পাগলের প্রলাপ মনে করেই চলে গেলাম।  

এরকম অত্যাচার কি আর মানুষের সহ্য হয়, যাই হোক সে এবার আসল মুক্তির পথ বেছে নেই।

====================

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.