Click the image to explore all Offers

গল্প।। শীতের এক ভয়ানক স্মৃতি ।। অমিত কুমার জানা

শীতের এক ভয়ানক স্মৃতি

 অমিত কুমার জানা
 

চেন্নাই এক্সপ্রেস বিজয়ওয়াড়া স্টেশন অতিক্রম করলো। সুভাষের ফোনটা বেজে উঠল। ওদিক থেকে তার গ্ৰামের বাল্যবন্ধু তাপসের কন্ঠস্বর," আমার মা ভীষণ অসুস্থ ,"যদি পারিস একবার আমার বাড়িতে আসিস আজ।" 
সুভাস বললো,"আমার খড়্গপুর পৌঁছাতেই এখনো বারো ঘন্টা লাগবেই।" ফোনটা কেটে গেল। পাশে বসা সুভাসের অসুস্থ দাদা প্রভাস বললো," খড়্গপুর পৌঁছাতে ভোর হয়ে যাবে বোধ হয়। সুভাস এবং প্রভাস দুজনেই চাকরি সূত্রে মেদিনীপুর শহরে থাকে।  প্রভাসের মারাত্মক পেটের সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্য তারা দুজন চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছিল।
একে জানুয়ারি মাসের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা তার উপর অসহ্য পেটের যন্ত্রণায় প্রভাস একেবারে কাবু হয়ে গিয়েছিল। কোনরকমে বাড়িতে পৌঁছাতে পারলেই যেন পরম শান্তি। 

চেন্নাই এক্সপ্রেস যখন খড়্গপুরে পৌঁছালো তখন রাত দুটো।   সুভাষ চারিদিকটা ভালো করে নিরীক্ষণ করে নিল। কিন্তু না, কোন অটোর দেখা পাওয়া গেল না। এই ভোর রাতে অটোর আশা করাটাও অবশ্য মূর্খামি।  তাপসকে ফোন করলো তৎপরতার সঙ্গে। কিন্তু সুইচ অফ দেখাল। সুভাষ শুকনো মুখে রাস্তার পাশে বসে থাকা অসুস্থ দাদার দিকে একবার তাকালো। 

অতঃপর তারা পদব্রজে গন্তব্যে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিল। তখনও এক কিমি.পথ অতিক্রান্ত হয়নি, রাস্তার পাশে বাইক নিয়ে ওটা কে দাঁড়িয়ে আছে? দুই ভাই দ্রুত পদচারণায় বাইকের সামনে পৌঁছালো। সামনে এসে দেখতে পেল বাইকে দুজন বসে আছে। দুজনেরই মুখমণ্ডল মাফলারে এবং সারা দেহ শীতের পোশাকে আবৃত। বাইক আরোহীকে দেখে সুভাষ চিনতে পারলো-ও তো তাপস। হাঁফছেড়ে সে তাপসের উদ্দেশ্যে বললো," তুই এসে গেছিস! বাঁচালি আমাদের। কিন্তু বাইকে তো জোরজবরদস্তি করে তিনজনের বেশি বসতে পারবে না,তাই না? আমার দাদাকে নিয়ে যা,ও অসুস্থ।" তাপস মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। প্রভাস বাইকে চড়ে বসলো। মুহূর্তেই অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাইকটা যেন নিমেষেই অদৃশ্য হলো। 
তাপসের মনে অকস্মাৎ একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো। "তাপসের সঙ্গে যে বসেছিল ও কে?" তাড়াহুড়োতে এটা জিজ্ঞেস করতেও সে ভুলে গেছে।  

এবার সে দ্রুত গতিতে হাঁটা শুরু করলো। প্রায় পাঁচ কিমি.পথ হাঁটার পর সে হরিপুর গ্ৰামে পৌঁছালো। এই গ্ৰামে এই শীতের সময় সে তাপস সহ ছেলেবেলার অন্যান্য বন্ধুর সঙ্গে বহুবার ক্রিকেট খেলতে এসেছে। তাপস তার দাদার খুব প্রিয় বন্ধু ছিল। স্কুলে পড়শোনার ক্ষেত্রে কিংবা ময়দানে খেলার সময় দাদার সব সমস্যাতেই সে দাদার পাশে থাকতো। শীতের সকালে খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর কি যে মজা তা ভেবেই সুভাষের মন যেন সেই শৈশবে ফিরে গেল। তার মনে পড়লো হারানো শৈশবের কত চাপাপড়া মধুর স্মৃতি।

এইসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে সে অনেকটা পথ অতিক্রম করে ফেলেছে তার খেয়ালই ছিল না। মোবাইলের মৃদু আলোতে সে বুঝতে পারলো তাপসের বাড়ি পৌঁছাতে আর দুই থেকে আড়াই কিমি.বাকি।  ফাঁকা মাঠের মাঝে আকাশপানি গাছ বেষ্টিত পিচরাস্তায় এসে সুভাষ কনকনে উত্তরে হাওয়ায় কেঁপে উঠলো।  ঠান্ডায় হাত -পা এবং নাকের অগ্ৰভাগ একেবারে যেন হিমশীতল। সারা শরীরে ঠাণ্ডায় কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে। এইভাবে আরও এক কিমি.পথ অতিক্রান্ত হয়ে গেল। সে দূর থেকে যেন বিরাট অগ্নিকুন্ড দেখতে পেল। হাত পাগুলো আগুনে সেঁকে নেওয়ার প্রবল ইচ্ছায় সে দ্রুত সেখানে পৌঁছালো। কিন্তু গিয়ে দেখলো রাস্তার পাশেই চিতায় শেষ আগুন জ্বলছে। সে থমকে দাড়ালো। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা এবং চিতায় শবদাহের অগ্নিকুন্ড দেখে তার সারা দেহ ছমছম করে উঠলো। নরমাংস ভোজনে বঞ্চিত শেয়ালদের চিৎকারে সে অজ্ঞাত কোন অমঙ্গলের আশঙ্কায় শঙ্কিত হলো। 
এর দশ-পনেরো মিনিট পরে ভোররাতের পর্যুদস্ত পথিক সুভাষ তাপসের বাড়িতে পৌঁছালো। সে খুব বিস্মিত হলো যখন দেখলো তাপসের বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। বাড়ির ভেতর থেকে হাহাকার্ত কান্নার শোরগোল শোনা যাচ্ছে। বাড়িতে প্রবেশ করে তাপসের ফটোটার দিকে তাকিয়ে তার সারা শরীর ভয়ে,বিস্ময়ে পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে গেল। তাপসের মা ফটোটাকে সস্নেহে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কেঁদে যাচ্ছে । তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে তার দাদা প্রভাস।  
সুভাষ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তাপসের কাকা তাকে কিছু কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে বললো," গতকাল দুপুরে বাইকে চড়ে তাপস আর তার বন্ধু তপন হাসপাতালে যাচ্ছিল তাপসের অসুস্থ মায়ের কাছে। হাইরোডে ট্রাকের সঙ্গে মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়।স্পটেই দুজন মারা যায়।"
সুভাষ তার দাদাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো যে সে কিভাবে তাপসের বাড়িতে পৌঁছাল। তাপস তো দুপুরেই মারা গেছে। প্রভাসের কাছ থেকে সুভাষ কোন উত্তরই পেল না।
                       ------
 
 
 
Amit Kumar Jana
Village: Khuntia, Po: Bargokulpur, PS: Khargpur, District: West Midnapore, West Bengal
Pin: 721301


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.