Click the image to explore all Offers

অণুগল্প।। অবৈধপ্রণয়।। মিঠুন মুখার্জী

                                                
           


    অবৈধপ্রণয়
        মিঠুন মুখার্জী


জলজের সামনে রনিতা ও বীরেন্দ্রর সম্পর্ক একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে। দু'চোখে বারিধারা থৈথৈ করে তাঁর। তাঁর মানসপটে ভেসে ওঠে অতীতের তাঁর ও রনিতার দাম্পত্য জীবনের স্মৃতি। জলজের পিতার খুব পছন্দ হয়েছিল রনিতাকে। মারা যাওয়ার আগে রনিতা ও  জলজের চার হাত এক করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। হয়েছিলও তাই। বিয়ের এক মাসের মধ্যে দুরারোগ্য রোগে জলজের পিতা মারা যান। রনিতাকে নিয়ে জলজের মা ও জলজ সুখেই ছিলেন। কিন্তু জলজ বুঝতে পারেননি রনিতা ছাই চাপা আগুন।
  ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ-এর মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় ছিল বীরেন্দ্র ও রনিতার মধ্যে। বিয়ের আগে থেকেই বীরেন্দ্রর সঙ্গে প্রেম ছিল রনিতার। অথচ বিয়ের আগে রনিতা জলজকে বলেছিলেন-- "আমার কারো সাথে কোন সম্পর্ক নেই, আমি এখনকার মেয়েদের মত নই।" রনিতার প্রতি অন্ধবিশ্বাস জলজের জীবনে কাল হয়েছিল।
  জলজ বহু চেষ্টা করেও একটা চাকরি জোটাতে পারেন নি। তাই একটি গার্মেন্টস-এর দোকান দিয়েছিলেন। জলজের আয় ও বাবার পর মায়ের পাওয়া পেনশনে ছোট্ট সংসার চলে যেত। জলজের দোকানে থাকার সময় বীরেন্দ্রর সাথে কথা বলতেন রনিতা। এমনকি ভিডিও চ্যাটিংও করতেন। এক রবিবার রনিতাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলেন জলজ। সেখানে বীরেন্দ্রর সাথে দেখা হয়েছিল তাদের। রনিতা দূর সম্পর্কের দাদা বলে জলজের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন বীরেন্দ্রর । বিষয়টা সেদিন বুঝতে পারেন নি জলজ। কিন্তু আজ তার কাছে সবকিছু একেবারে জলের মত পরিষ্কার।
 পার্কের পরিচয়ের পর বীরেন্দ্র বেশ কয়েকদিন জলজদের বাড়ি এসেছিলেন। জলজের মা জলজকে অনেকবার সাবধান করে দিয়েছিলেন। তিনি জলজকে বলেছিলেন-- "বীরেন্দ্র ও রনিতার সম্পর্কটা আমার কাছে মোটেই ভালো লাগছে না। সন্দেহ হচ্ছে ছেলেটা সত্যি সত্যি রনিতার দাদা তো!" জলজকে খোঁজ নিতে বলেছিলেন তার মা। কিন্তু রনিতার প্রতি অন্ধবিশ্বাসে তিনি বিষয়টি হালকা চালে নিয়েছিলেন। মাকে বলেছিলেন-- "মা, আমার ওসব মনে হয় না। তাছাড়া ও আমাকে মিথ্যে কথা বলবে কেন? আমাদের জন্য ও তো কম করে না।"
জলজের রনিতার প্রতি অন্ধবিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে বেশিদিন লাগে নি। এক শনিবার দুপুর বেলা অত্যন্ত প্রয়োজনে বাড়িতে আসেন জলজ। অন্যদিন বাড়ি আসেন রাত নটায়। সেদিন ঘটল ঘটনাটা।জলজ বাড়িতে ঢুকতেই দেখলেন বাড়ির বাইরে একটি মোটরসাইকেল দাঁড় করানো। সন্দেহ দানা বাঁধে তাঁর মনে। চুপিচুপি গেট খুলে ঘরে ঢুকে জলজ দেখেন, এক ঘরে তাঁর মা ঘুমোচ্ছেন। রনিতার ঘরের দরজা ভেজান। জলজ ধীরে ধীরে দরজাটা খুলে যা দেখলেন, তাতে সেই মুহূর্তে যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। এরপর দরজাটা পুনরায় বন্ধ করে দোকানে চলে গেলেন সে। বীরেন্দ্র ও রনিতা বুঝতেও পারলেন না জলজ তাদের সম্পর্ক জেনে ফেলেছেন।
দোকানে ফিরে গিয়ে কান্নায় ফেটে পড়েন জলজ। এমন দৃশ্য তিনি দেখেছেন, যা কাউকে বলা যাবে না। নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে তিনি মাকে নিয়ে হরিদ্বার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । মায়ের প্রশ্নের জবাবে জলজের দু-চোখে শুধু জল গড়ায়, তিনি চুপ করে থাকেন। মা জলজের চুপ থাকার কারন বুঝে যান। হরিদ্বার যাওয়ার আগে জলজ রনিতার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে যান। তিনি লেখেন--- "প্রিয় রনিতা, তুমি আমাকে এভাবে ঠকাবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। তোমাকে বিয়ে করবার আগে আমি অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমার কারো সাথে সম্পর্ক আছে কিনা। কিন্তু তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি সেরকম মেয়ে নও। তোমাকে মনে প্রানে খুব চেয়েছিলাম, অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আজ তোমার ও বীরেন্দ্রর যে সম্পর্ক আমি দেখলাম, তা কেবল আমি কেন, কোন স্বামীই সহ্য করতে পারবে না। তাই আমি মাকে নিয়ে হরিদ্বারে চললাম। আর কোনদিন ফেরা হবে কিনা জানি না। তবে তুমি বীরেন্দ্রকে নিয়ে সুখী হও।  আর আমাকে যদি তুমি এক দিনের জন্য ভালোবেসে থাকো, তবে আমার একটা কথা রেখো, আমার বাড়ি ও দোকান বিক্রি করে যা টাকা পাবে তার পঞ্চাশ শতাংশ টাকা কোনো অনাথ আশ্রমে দিয়ে দেবে।আমার মার শেষ ইচ্ছা তবে পুরণ হবে। ইতি- তোমার হতভাগ্য স্বামী।"
======================
ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা
পিন-- 743252

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.