অণুগল্প ।। কবি ।। চন্দন মিত্র
কবি
চন্দন মিত্র
কবি পরেশ সমাদ্দার এগিয়ে না-এলে আমরা এমন একটা দুরূহ কাজে নেমে পড়ার সাহস পেতাম না। কবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়াই শুধু নয়, আর্থিকভাবেও তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জীবনটাই তিনি কবিতার জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাঁর ঈশান পত্রিকাতে আমার মতো অনেকেরই কবিতা লেখায় হাতেখড়ি হয়েছে। তিনদিনব্যাপী সারা বাংলা কবি সম্মেলন-এর সভাপতি হিসাবে তিনিই আজ প্রদীপ জ্বালিয়ে সম্মেলনের শুভ সূচনা করবেন।
সকাল সকাল আমি স্যারকে আনতে গেলাম। বাইক থামিয়ে কলিংবেলে চাপ দিতে গিয়ে ভিতরের বাকবিতণ্ডা শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম। ভিতরটা একটু শান্ত হতেই কলিংবেলের বোতামে চাপ দিলাম। বেলের বাজনা থামার আগেই ভিতরে একটা ঠং করে আওয়াজ হল। মনে হল গেলাস বা বাটি কিছু একটা মেঝেতে আছড়ে পড়ল। মিনিট খানেক পরে রুমালে মুখ মুছতে মুছতে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন বিশিষ্ট কবি ও অধ্যাপক পরেশ সমাদ্দার। আমি বাইকে স্টার্ট দিলাম উনি পিছনে বসেই বললেন, প্রলয় একটু ডাঃ দাসের নার্সিং হোম হয়ে যাব। আমি বললাম ঠিক আছে স্যার। স্যারের কেউ বোধহয় ভর্তি আছেন। ভাবলাম জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, গেলেই তো দেখতে পাব।
স্যার স্বগতোক্তির মতো বলতে লাগলেন, একটা শুভকাজে যাচ্ছি, বলে কিনা কেজিখানেক খাসির মাংস এনে দাও।
আমি বললাম কে স্যার ?
কে আর তোমাদের ম্যাডাম। মেয়ে জামাই আসছে। ফ্রিজ ভর্তি মাছ। আমি বললাম আজকে না-হয় মাছই হোক। কালকে মাটন নিয়ে আসব। কার কথা কে শোনে ! ও তো না শুনতে অভ্যস্ত নয়। বলে বসল ছুটির দিনেও তোমার ছাইপাঁশ কাজ পড়ে যায়। আমি বললাম ছাইপাঁশ নয় সারা বাংলা কবি সম্মেলন। তাছাড়া মেঘনীলাকে ফোন করে দিলে আসার পথে ওই তো বাজার থেকে মাংসটা নিয়ে আসতে পারে। এই কথা শুনে শ্রীমতী দপ করে জ্বলে উঠে বলল, মেয়েটা আমার এতদিন পরে আসছে তাকে বলব মাংস কিনে বাড়ি ঢুকতে ! বুড়োভাম কোথাকার, কবিতা কবিতা করে তোমার মাথাটাই গেছে। দাঁড়াও তোমার ওই হেঁড়ে মাথাটার ব্যবস্থা আমি করছি। তোমাদের ম্যাডাম চা নিয়ে বসেছিল, স্টিলের বাটিতে ছিল চানাচুর।
কথায় কথায় আমরা নার্সিংহোমের গেটে এসে পড়লাম। আমি বাইক থামাতে স্যার নেমে আমার সামনে এলেন। স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আঁতকে উঠলাম। কপালের উপর চেপে ধরে রাখা রুমালখানা রক্তে জবজব করছে। আঙুলের ফাঁক দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত টপছে। স্যার নির্বিকারভাবে বললেন চলো তাড়াতাড়ি কয়েকটা সেলাই দিয়ে নিই, নাহলে ওদিকে আবার দেরি হয়ে যাবে... =============
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা)
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
সূচক- ৭৪৩৩৩১