Click the image to explore all Offers

গল্প ।। চাঁদু চোর ।। ক্ষুদিরাম নস্কর


 

চাঁদু চোর
ক্ষুদিরাম নস্কর

 


আশ্বিনের আকাশে মেঘেদের আনা-গোনা।আলোক মালায় উদ্ভাসিত নতুন সকাল। ঝরে পড়া শিউলির সম্ভাষণ,আর পদ্মের উপর ভ্রমরের গুঞ্জন। চারিদিকে ঢাকের বাদ্য আর পুজোর গন্ধ দক্ষিনের বাতাস যেন ম ম করছে।কদিন পরে পুজো ।শেষও হয়ে যাবে কদিন পরে।
 সবাই পুজোর ছুটিতে আনন্দ করে। আত্মীয় পরিজনের সাথে খায়-দায় ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু পুলিশদের কপালে সে সুখ থাকে না।
       দারোগা দেবদুলাল বাবু কিছুদিনের জন্য পৈতৃক বাড়ি দার্জিলিং যেতে চায়। তার আর সময় হয়ে ওঠে না। সামনে পুজোর কটা দিন কেটে গেলেই সপরিবারে একবার ঘুরে আসবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ঘরে তালা ঝুলিয়ে পুজোর পরে বেরিয়ে পড়লেন।
জয়নগর থানার জাঁদরেল অফিসার দেবদুলাল বাবু।যার কথায় বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। চোর-পুলিশ মস্তান মাতাল যার চোখে চোখ পড়ে, সেই জোরসে একটা লম্বা সেলাম ঠোকে। মাসোহারা, বখরা কোন কিছুর অভাব নেই ।ফাটা বাঁশের মত গলার আওয়াজ, জয়ঢাক এর মত ভুঁড়ি আর তেল চকচকে টাক।এক বার চেঁচালে আর রক্ষে নেই।
          তার এলাকায় কটা চোর ,চিটিংবাজ, তোলাবাজ, কোথায় কারা কি কাজ করে, তাদের পিছনের লোক লাগানো আছে।তারা সময়মতো সব বলে যায় থানাতে। 
দেবদুলাল বাবু থানায় বসে, সেই মত কলকাঠি নাড়েন।
এমন দারোগা দেবদুলাল বাবু বাড়ি থেকে এসে ডিউটি শুরু করলেন। সংসারের যেমন জিনিস তেমন আছে। আলমারি খুলতে কেবল কিছু টাকার হিসাব পাচ্ছেন না। মাথায় হাত!হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ ঠিক মনে আছে। টাকা তিনি আলমারিতে রেখেছেন। কিন্তু সে তো প্রায় দু- লক্ষ টাকা ।এখানে মাত্র একশ টাকা কেন? টাকার তো আর পাখনা গজাবে না ! যে উড়ে যাবে । ভাবনায় সব ভুল হয়ে যাচ্ছে ।তবে কি তার ঘরে চুরি?
তাড়াতাড়ি এদিক-ওদিক দেখছেন। হঠাৎ মনে হল ঘরের পিছনের জানালাটা খোলা। গিয়ে দেখল,হ্যাঁ সত্যি তো একটা লোহার রড ব্যাঁকানো। নিশ্চয়ই কেউ এখান থেকে ঢুকেছিল।
     এবার ঘরের এটা ওটা সরিয়ে দেখছেন আর কি কোথায় নিয়েছে। লকার হাতড়িয়ে হাতে পড়ল একটা চিঠি। বড় বড় অক্ষরে লেখা পেন্নাম হই দারোগাবাবু । জানতুম আপনি কেপ্পপন। কিন্তু এত বড় কেপ্পন তাতো জানতুম না। ঘরে বউ বাচ্চার জন্য একটু বাড়তি সোনা গয়না রাখতে নেই? এ তো দেখছি আপনার থেকে ভিখারীও ভালো। একশ টাকা নিজের থেকে রেখে এলাম, মিষ্টি খাবেন।
   চিঠি পড়ে দারোগার মাথা গেল গরম হয়ে । চিৎকার করে ডাকলেন সেপাই, সেপাই! সেপাই আসতেই বলল,সেজ বাবুকে বল। আজ রাতের মধ্যে যেখানে যত চোর আছে সবাইকে থানায় চাই। 
যে কথা সেই কাজ।সারা রাতের রেটে চোরেরা সবাই গারদে। কেউ বলছে আমি কিছু করিনি। কেউ বলছে আমি চুরি ছেড়ে দিয়েছি। কেউ বলছে আমি তো মাসোহারা দিই। কেউ বলছেন অকারণে আমাকে কেন তুলে এনেছেন?
    এমন সময় দারোগা একটা লাঠি কয়েকটা সাদা কাগজ আর পেন নিয়ে ঢুকলেন।
 সবাইকে বললেন, যে যার নাম ঠিকানা লেখ। চোরেরা কি আর করে!যে লিখতে পারে লিখল। যারা লিখতে পারেনা তারা টিপসই দিল।যারা লিখল না তারা লাঠির ঘা খেল।
     কিছু সময় পর, থানায় বসে সেই চিঠির সঙ্গে কারো হাতের লেখার মিল আছে কিনা দেখতে থাকলেন। দেখতে দেখতে একজনের সাথে মিলও হয়ে গেল। সবাইকে ছেড়ে তাকে আনা হলো।
দেখতে সে শুকনো শুটকি মাছ।কালো কয়লার মতো রঙ।চুলগুলো ছোট ছোট কাটা।চোখগুলো ঢোকা ।
দারোগা দরাজ গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, কি নাম তোর?
টেবিলের ওপার থেকে উত্তর এলো ---চাঁদু চোর ।
---কোথায় থাকিস?
--নিম পাড়ায়।
---আমার ঘরে চুরি করলি কেন?
----পরোপকারের জন্যে।
---বলিস কিরে? নিজে খেতে পরতে পারিস না, অন্যের উপকার? বুজরুকি কোথায় দিচ্ছিস জানিস চাঁদু?
----না স্যার গরীব বলেই তো গরিবের দুঃখ বুঝি।
-----তা তোর এত সাহস হলো কি করে!চুরি করবি তো কর আমার ঘরে?
----কি যে বলেন স্যার,দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে;বিড়ালেরও সাহস বেড়ে যায়।
----তা বাছা এবার তো সাহস আমি কমিয়ে দেব। তবে তার আগে বল এই চিঠি কেন লিখলি?
---ধরা খাবো বলে।
এবার তো দারোগার কৌতূহল বেড়ে গেল, কেন?কেন ধরা খাবি কেন?
চাঁদু চোর বলল,চুরি তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। তবে একটু ইচ্ছে হলো দেখি আপনি দারোগা  হিসেবে কেমন? তার একটা পরীক্ষা করি।আর গরিবেরও একটা উপকার করি। আর আপনার ঘরে চুরি করার কারণ? কথায় আছে না, মারি তো গণ্ডার আর লুটি তো ভান্ডার। তাই আপনার ঘরে ঢুকে বুঝিয়ে দিলাম, আমারও বিদ্যের বহর কতটা।
না ভাই আমি স্বীকার করছি  এত পুলিশের নাকের ডগা থেকে দারোগার ঘরে চুরি করেছিস, তোর এলেম আছে।তুই পুরস্কারের যোগ্য।
 এবার চাঁদু চোর সলজ্জে বলল, আমাকে পুরস্কার দেবেন স্যার?
দারোগা বলো হ্যাঁ দেব। বল কি পুরস্কার চাস?        
মুখখানা কাচুমাচু করে বললো, আমাকে আজকে ছেড়ে ছেড়ে দিন না স্যার।
 দারোগা বলল কেন?
 ও বলল, যে চোরের জন্য চুরি করেছি, তার মেয়ের আজ বিয়ে। আমার কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব আছে। সত্যি বলছি স্যার কাজ হয়ে গেলে থানায় চলে আসব।
ধমক দিয়ে বলল, আর আমার টাকা? 
---দিয়ে দেবো।যত তাড়াতাড়ি পারি দিয়ে দেবো।         
এবার তার মুখ দেখে হেসে ফেললেন দারোগা বাবু।
 বললেন, টাকা তোদের আর দিতে হবে না। দিলে তো আবার অন্যের চুরি করবি। তাছাড়া আমি তো খুব একটা মানুষের উপকার করতে পারিনা। তোর হাত দিয়ে না হয় আমার পরপোকারের শুরু হোক।
 চাঁদু চোর দারোগার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল, আপনি মানুষ নয়,দেবতা। এতদিন জানতাম পুলিশ শুধু নিতে জানে,দিতে জানে না।কিন্তু আজকের ধারনা'টা বদলে গেল। এভাবে আমাদের পাশে থাকলে আমরাও কথা দিচ্ছি, আগামী দিনে আমার মত অনেকে চুরি ছেড়ে দেবে। এই বলে থানা থেকে চাঁদু চোর মাথা উঁচু করে বেরিয়ে গেল। 
=====================
পশ্চিম মথুরাপুর (প্রান্তিক পল্লী)
সোনারপুর 700150
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.