ছোটগল্প ।। শীতল লাভার ছোঁয়া ।। উত্তম চক্রবর্তী
শীতল লাভার ছোঁয়া
উত্তম চক্রবর্তী
ছেলে বেলায় নাকি দাদাদের সাথে ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়ে মনিষের মাথার পিছন দিকে একটা ডিউজ বল এসে লেগে মাথা ফেটে গেছিল। তখন মনিষের বয়স মাত্র সাত বছর। ওর দাদা আর তার ক্লাবের বন্ধুরা সঙ্গে সঙ্গে ওকে নিয়ে গেছিল কাছেই একটা নার্সিং হোমে। সেবার ওর মাথায় পাঁচটা ষ্টিচ পড়েছিল আর ওকে দশ দন বাড়ি থেকে কোথাও বের হতে দেওয়া হয়নি, এমন কি সে কদিন স্কুলেও যেতে পারেনি মনিষ। কিন্তু সেই থেকেই আপাত ঠাণ্ডা ছেলে মনিষ কথায় কথায় খুব রেগে যেত। ডাক্তার অনেক রকম চেক আপ করে জানিয়েছেন ওর মাথায় একটা শিরায় একটু ড্যামেজ হওয়ায় মনিষ এরকম করে। তবে ভয়ের কিছু নেই, বলেছিলেন ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
এহেন মনিষকে তারপর থেকেই কেউ আর বেশি চটায় না। তবে সেটা শুধু জানাশোনা লোকেরাই মান্য করে। যারা মনিষকে চেনেনা বা ওর সমস্যাটা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয় তাদের সাথে প্রায়ই মনিষের কোন ব্যাপারে একটু রাগারাগি হলেই সে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড বেঁধে যায়। যতক্ষন না মনিষের পরিচিত কেউ এসে ওদের ঝগড়া না থামাবে ততক্ষণ মনিষ রেগে মেগে চিৎকার চেঁচামেচি করে এক হুলুস্থুলু বাধিয়ে দেবে। মনিষের এই ঝট করে রেগে যাবার সমস্যার কথা ওর অফিসের সবাই এখন জেনে গেছে। তারাও আর ওকে তাই ঘাটায় না। তবে বাসে ট্রেনে মনিষের সাথে প্রায়ই এরকম বিভিন্ন লোকের ঝমেলা হয় শুনে প্রবীণ ঘোষাল, মানে মনিষের বাবা ওকে একটা স্কুটার কিনে দিয়েছেন, যাতে অন্তত রাস্তার ঝামেলা গুলি এড়ানো যায়। মনিষ এখন সেই স্কুটারে করেই ওর রাজা বাজারের সাইন্স কলেজে যাতায়াত করে। ও সেখানে সিনিয়র ল্যাব এসিসটেন্ট।
মনিষদের বাড়ি তালতলায়। ওর বাবা প্রবীন ঘোষালের এম জি রোডে লোহা লক্কড়ের বিরাট ব্যবসা। বড় ছেলে প্রশান্ত বাবার সাথে ব্যবসা দেখাশোনা করে, একটাই ছোট বোন রিম্পি এবার বেথুন কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। মনিষের দাদার বিয়ে হয়েছে হাওড়ার মেয়ে ললিতার সাথে। দাদার একটা দুই বছরের মেয়েও আছে। তালতলার দোতলা বাড়ির নিচটা ভাড়া দেওয়া আছে। মনিষরা থাকে দোতলায়।
ওদের এক তলায় দুজন ভাড়াটে থাকে সপরিবারে। তাদের মধ্যে একজন সরকারি চাকুরে। হঠাৎ তিনি বদলি হয়ে চলে গেলেন শিলিগুড়ি। পূজোর ঠিক আগেই নিচতলার একটা সাইড খালি হয়ে গেল। বাড়ির সামনে টু লেট প্ল্যাকার্ড দেখে পূজোর মধ্যেই এক সকালে একজন মহিলা ও তার এক ছেলে ও এক মেয়ে এসে দুই কামরার নিচ তলার ফ্ল্যাটখানা দেখে পছন্দ করে প্রবীণ ঘোষালের সাথে কথা বলে এডভান্স দিয়ে বুক করে জানিয়ে গেলেন যে লক্ষ্মী পূজোর পরেই মাসের এক তারিখ রবিবার ওঁরা এই বাড়িতে শিফট করবেন। প্রবীণ ঘোষাল এতো তাড়াতাড়ি ভাড়া পেয়ে যাবেন ভাবেন নি। বেশি টাকা খরচা করে সেই পূজোর মধ্যেই ঘর বারান্দা দরজা জানালা সব রং করে ফেললেন নতুন ভাড়া বসবার আগেই।
লক্ষ্মী পূজোর পরদিন রবিবার সকাল বারোটা নাগাদ নতুন ভাড়াটের মালপত্র পৌঁছে গেল একটা ম্যাটাডোর ভ্যানে। মনিষ বাড়িতে ছিলনা তখন। ক্লাবের পূজো কমিটির মিটিঙে ব্যস্ত থাকায় ও বেলা দেড়টায় বাড়ি ফেরে।
বাড়ি ফিরে মনিষ শুনল নিচে নতুন ভাড়াটে এসে গেছে। মনিষের বয়স এখন আঠাশ। ওর চেহারাটা বেশ সুন্দর এবং হ্যান্ডসাম। পাড়ার অনেক মেয়েই ওকে পছন্দ করে ওর চেহারার জন্য , কিন্তু ওর ঝগড়া করার সময় উড়ন চণ্ডীর মত চিৎকার চেঁচামেচি করার কথা ভেবে কেউই আর এগোয় না। মনিষের দুই একজন বন্ধুর বিয়ে হয়ে গেলেও মনিষের আর আদৌ কোনদিন বিয়ে হবে কিনা সেই চিন্তাতেই অস্থির ওর মা।
নিচতলার ভাড়াটেদের সাথে মনিষদের কোন দিন কোন ঝামেলা হয়নি। মনিষের মা মীনাক্ষী ঘোষাল বেশ মিশুকে মানুষ। ভাড়াটেদের সাথে সহজেই আলাপ পরিচয় করে মিলে মিশে যান। সোমবার বিকেলে নতুন ভাড়াটে শিউলি মণ্ডল আর তার মেয়ে সীমা এলো বাড়িয়ালির সাথে আলাপ করতে। বাড়িতে তখন শুধু মীনাক্ষী দেবী ও কলেজ ছুটি থাকায় তার মেয়ে স্বর্ণা। বাকিরা অফিসে বা দোকানে। বড় বৌ গেছে বাপের বাড়িতে।
সীমা মেয়েটি ভীষণ শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। এম এ শি পাশ করে বাড়িতেই বসা। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেখতে শুনতে বেশ। গায়ের রং ফর্সা, মাথা ভর্তি কোঁচকানো চুল, চোখ দুটো বড় বড় টানা আর মুখটা অনেকটা দুর্গা প্রতিমার মত মিষ্টি। মীনাক্ষী দেবী ওদের চা মিষ্টি খাইয়ে অভ্যর্থনা করলেন। স্বর্ণা সীমাকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন রকম গল্প গুজব করে কাটালো সময়টা। মীনাক্ষী দেবীর কিন্তু সীমা মেয়েটিকে ভীষণ পছন্দ হয়ে গেল। তবে মুখে কিছুই বললেন না তখন।
সেই রাতেই ঘরের দরজা বন্ধ করে প্রবীণ ঘোষালকে তার স্ত্রী জানালেন সীমার সাথে মনিষের বিয়ের সম্বন্ধ আনবার কথা। এ যেন ঘরের লক্ষ্মী নিজেই এসে আজ ঢুকেছিলেন ওদের বাড়িতে। এখন শুধু তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে সংসারে আহ্বান জানানো বাকি। প্রবীণ ঘোষাল সব শুনে স্ত্রীকে আগে ছেলের সাথে কথা বলে ওর মতামত জেনে তারপর নিচের ভাড়াটে মহিলার সাথে মনিষের ব্যাপারে, ওর ছেলেবেলার মাথা ফেটে যাওয়া এবং পরে ওর অল্পতেই রেগে যাওয়ার কথা সব জানাতে বললেন। তারপরেও যদি তাদের কোন আপত্তি না তাকে তাহলে উনি ওদের সাথে কথা বলবেন। সীমা মেয়েটিকে ওঁর প্রথম দিনে দেখেই ভালো লেগেছিল। যেন একটা মিষ্টি ফুলের সুবাস সাথে করে নিয়ে এসেছিল মেয়েটি।
পরের রবিবার ওপরের ঘরে ওদের দুপুরে খাবার নিমন্ত্রণ করেছে শুনেই সীমা মাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পাড়ে মীনাক্ষী দেবী তার ছেলের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিতে চান। মনিষ ছেলেটি এম এস শি পাশ, সায়েন্স কলেজে খুব ভালো চাকরি করে। মীনাক্ষী দেবী নাকি সীমাকে ছেলের জন্য পছন্দ করেছেনে এবং ছেলে ওকে দেখে তবে মতামত দেবে জানিয়েছে। মনিষের বাবা দাদা বৌদি সবাই নাকি এই ব্যাপারে একমত। ওঁরা চায় সীমার মত মেয়ে ওদের ঘরে বৌ হয়ে আসুক। সীমা এখনো পর্যন্ত এক বার শুধু জানালা দিয়ে মনিষকে বাড়ি থেকে স্কুটার চালিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখেছে। ওর বাবা দাদা আর বৌদি সবাইকে দেখেছে সীমা। মনিষ ছেলেটাও দেখতে বেশ ভালই, কিন্তু কেমন মানুষ আবার কে জানে। সীমা মনে মনে ভাবে আজ পর্যন্ত কোন ছেলেকেই ও কাছে ঘেঁসতে দেয়নি। বাবা হঠাৎ মারা যাবার পর মা বাবার কর্পোরেশনের চাকরিটা পেয়ে ওদের দুই ভাই বোনকে মানুষ করে তুলেছেন। ভাই এখন বি কম করছে। ওর চাকরি হলেই সীমা বিয়ের প্ল্যান করেছিল। সাথে নিজেও চাকরির চেষ্টা চালাচ্ছিল।
মনিষের সেদিন সীমাকে বেশ পছন্দ হয়ে যায় আর দুই মাস পরেই ওদের বিয়ের দিন স্থির হয়ে যায়। তবে শিউলি মণ্ডল জানালেন ওঁরা বিয়ের আগেই অন্য পাড়ায় ভাড়া নিয়ে চলে যাবে। একই বাড়িতে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি হবে সেটা উনি ঠিক চান না। মনিষের বাবা মা দাদা এই ব্যাপারে আর কোন আপত্তি করেনি, কারণ এক দিকে দিয়ে দেখলে ওরাও কিছুটা ছেলের শ্বশুরবাড়ির সাথে একটু অন্তত দুরত্ব হোক সেটা মনে মনে চাইছিল। শিউলি মণ্ডল নিজেই সেই সমস্যার সমাধান করে দেওয়ায় সবাই খুশি।
মনিষের সাথে এরপর একদিন মাত্র সীমা ওর স্কুটারে চেপে ভিক্টোরিয়ার সামনের বাগানে বেড়াতে গেছিল। মনিষ আসলে ইচ্ছা করেই সীমাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে কথা বলতে চেয়েছিল। বাগানের এক পাশের একটা বেঞ্চে একান্তে বসে মনিষ সীমাকে জানাল ওর ছোটবেলার সেই এক্সিডেন্ট এবং তার পর থেকে ওর খুব তাড়াতাড়ি রেগে চিৎকার চেঁচামেচি করা ইত্যদির কথা। সীমা প্রথম দিনই মীনাক্ষী দেবীর মুখে শুনেছিল যে ওঁর ছোট ছেলে নাকি হঠাৎ রাগী, কিন্তু ওর মনটা ভীষণ ভালো। সুতরাং সীমা ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব দিলো না। শুধু একটুকরো হেসে বলল, 'আপনি যেমনই হোন, আমি আপনাকে যখন মেনে নিয়েছি আশা করি আমরা ঠিক সব কিছু ম্যানেজ করে নিতে পারব। একদম ভাববেন না। আমি তো আছি।'
সীমার এই পসিটিভ এটিচুড মনিষের বেশ ভাল লেগেছিল সেদিন। এরপর এক রবিবার সীমারা চলে গেল বেলতলার এক ভাড়া বাড়িতে। ফোনে কথাবার্তা হলেও মনিষের সাথে সীমার পরের সাক্ষাৎ হল বিয়ের রাতে, ওদের বেলতলার নতুন বাড়ির সামনেই অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া করা বিয়ে বাড়িতে। মনিষকে বরের সাজে বেশ মানিয়েছিল। ওদিকে সীমাকেও কণের সাজে যেন কোন সিনেমার নায়িকার মত সুন্দর লাগছিল সেদিন। সানাই বাজিয়ে প্রায় দুশো লোক খাইয়ে মেয়েকে বিয়ে দিলেন শিউলি মণ্ডল। পরদিন সন্ধ্যায় মনিষ সীমাকে নিয়ে ফিরে এলো তালতলায় ওদের পৈতৃক বাড়িতে।
বিয়ের পর মাত্র দিন দশেক বাদেই এক সকালে মনিষের হঠাৎ মাথা গরম হয়ে গেল সীমা ওর ইস্তিরি করা জামা কাপড় আবার আলমারিতে তুলে রেখেছে দেখে। বাথরুম থেকে বেরিয়েই খাটের উপর রাখা জামা প্যান্ট না দেখেই মনিষ রেগে গিয়ে চিৎকার করে ওঠে। বড় জার সাথে কিচেনে টিফিন বানানো ফেলে রেখে দৌড়ে আসে সীমা। মনিষ ঐ জামা প্যান্ট দুটো আজই পরে বের হবে শুনে সাথে সাথে আলমারি থেকে নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল সীমা। মনিষ তখনো বলে চলেছে, 'তোমার কোন বুদ্ধি নেই, দেখছ জামা প্যান্ট দুটো নামানো, তাও তুমি কি করে আবার আলমারিতে তুলে রাখতে গেলে ? মাথায় কি ঘিলু নেই তোমার ?'
সীমা কিন্তু একটাও উত্তর দিলো না। ও ভেবেছিল মনিষ বোধ হয় ঐগুলি আলমারিতে তুলে রাখতে ভুলে গেছে। আসলে সেদিন ছিল সোমবার। রবিবার ভেবে সীমা অন্য মনস্ক ভাবে জামা প্যান্ট দুটো তুলে রেখেছিল। কিন্তু আজ সোমবার, মনিষ অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে তখন, সেটা মনে ছিল না। সীমা চুপ করে থাকায় মনিষ নিজেকে সামলে নিয়ে গজ গজ করতে করতে ড্রেস করে সামনের ঘরের ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল টিফিনের জন্য। অন্য দিনের মত সীমা আজ ইচ্ছা করেই বের হলনা। জানে দিদিভাই দেওরকে খেতে দেবে।
মনিষ অফিসের জন্য বের হবার আগে মানি ব্যাগ নিতে একবার ঘরে ঢুকে দেখে সীমা তখনো মাথা নিচু করে বসে। মনিষ ততক্ষণে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কিন্তু ইগো দ্যাখাতে গিয়ে কিছু না বলেই বের হয়ে গেল অফিসে। সীমা এবার উঠে এসে দিদিভাইয়ের সাথে কিচনের কাজে লেগে যায়। মনে মনে হাসে, আজ খুব শিক্ষা হয়েছে। দেখনা রাতে কী করি, আমিও কোন কথা না বলেই তোমাকে শিক্ষা দিতে জানি।
সেই রাতে সীমা প্রথম থেকেই গম্ভীর রইল। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে সকালের কথা মনে হওয়ায় মনিষ সীমার সাথে দুই একটা কথা বলে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সীমা হু হাঁর বেশি একটাও কথা বলেনি। শেষে রাতে খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় এসে মনিষ সীমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু সীমা ড্রয়িং রুমে বসে টি ভি দেখার ভাণ করে ইচ্ছা করেই অনেক রাত করে ঘরে ঢোকে। ততক্ষনে বিরক্ত হয়ে মনিষ ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে। সীমা মুচকি হেসে চুপ করে গিয়ে পাশ দিয়ে শুয়ে পড়ে। মাঝরাতে মনিষের হাত এসে পড়ে ওর শরীরে, সীমা আস্তে করে সরিয়ে ঘুরে শোয়।
পরদিন আবার মনিষ যথাযথ ভাবে অফিস যাবার জন্য রেডি হয়। সীমা কিন্তু সেই সকাল থেকেই কিচেনে, একবারও মনিষের সামনে আসেনি। এমন কি টিফিন সেরে মনিষ ঘরে এসে রোজকার মত সীমার জন্য একটু অপেক্ষা করে, যদি সীমা একবার ঘরে আসে তো ওকে জড়িয়ে ধরে সরি বলবে ওকে। কিন্তু সীমা এলোই না। বাধ্য হয়ে মনিষ অফিস চলে যায়।
একটু বেলার দিকে সীমার সেলে একটা ইমোজি আসে। তাতে মনিষ জানায় 'আই এম সরি'। সীমা মুচকি হাসে, কিন্তু কোন জবাব দেয় না। এবার বোঝ বাছাধন। আমি তোমাকে এই ভাবেই টাইট দেব, সীমা ভাবে।
কিন্তু বিকেলের আগেই মনিষ বাড়ি ফিরে আসে। হাতে ছিল এক গোছা লাল গোলাপ। মনিষকে দরজা খুলে দেয় ওর বৌদি। মনিষের হাতে গলাপের তোড়া দেখেই বৌদি হেসে ঘরে চলে যায়। মনিষ আস্তে করে দরজা আটকে নিজের ঘরে গিয়ে দেখে সীমা পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমচ্ছে। মনিষ গোলাপের তোড়াটা বালিশের এক পাশে এমন ভাবে রাখে যাতে সীমা চোখ খুললেই সেটা দেখতে পায়। মনিষের ভিতরের আগ্নেয় গিরির লাভা ততক্ষণে শীতল বরফ হয়ে গেছে। ও চলে যায় ছাঁতে। সেখানে একটা ঝোলানো দোলনা আছে। চারিদিকে টবে বিভিন্ন ফুলের গাছের মাঝে ছাঁতের একধারে সেই দোলনায় বসে মনিষ ভাবতে থাকে এখন ও বিবাহিত, ওকে অনেক বদলাতে হবে।
সীমার ঘুম ভেঙ্গে যায় একটু বাদেই। চোখ খুলেই দেখে এক তোড়া লাল গোলাপ রাখা ওর বিছানায়। সীমা বেশ বুঝতে পাড়ে মনিষ চলে এসেছে আর ওকে খুশি করবার জন্য সাথে নিয়ে এসেছে লাল গোলাপের তোড়া। মনিষ জানে সীমার লাল গোলাপ খুব পছন্দ, বিয়ের দিনই সেটা মনিষকে বলেছিল সীমা। আজ মনিষ সেটা মনে রেখে গোলাপ নিয়ে আসায় সীমা খুব খুশি হয়ে একটা ফুলদানিতে সেটা সাজিয়ে রেখে বসবার ঘরে এসে দেখে শাশুড়ি মা আর দিদি ভাই টি ভি দেখতে দেখতে চা খাচ্ছে। সীমা এসে টেবিলে ঢেকে রাখা চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিতে গিয়েই থমকে দাঁড়াল। দেখে দিদিভাই ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ছাঁতের দিকে ইশারা করছে। সীমা মুচকি হেসে উঠে চলে গেল ছাঁতে।
ওদের বিয়ে হয়েছে মাত্র দশদিন হয়েছে। এই কয় দিনেই সীমা ওর রূপ আর যৌবন দিয়ে মনিষকে কাবু করে ফেলেছিল। কিন্তু সীমার এখন একটাই লক্ষ্য, মনিষকে যে ভাবেই হোক শান্ত করে তুলতে হবে। আর তার জন্য ওকেই একদম চুপ করে নিরব প্রতিবাদে মনিষের মনে ঝড় তুলতে হবে। সেই কথায় আছে না যে বোবা গোরুর কোন শত্রু হয়না। সীমা বোবা হয়েই থাকবে। মনিষ কত চেঁচাতে পাড়ে কত বকতে পাড়ে দেখা যাক। একদিন ও নিজেই হাল ছেড়ে দেবে।
মনিষ নিজেও গতকালের ঘটনার জন্য অনুতপ্ত বোধ করছিল। সীমা ছাঁতে গিয়ে ওর পাশে দোলনায় বসে মিষ্টি করে বলে, 'থ্যাংক ইউ। গোলাপের তোড়াটা বেশ সুন্দর হয়েছে। নিচে চল, চা হয়ে গেছে। তুমি চা খাবে না ?'
মনিষ সীমা ওর পাশে এসে বসায় বেশ খুশি হয়েছিল। সীমার একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে তুলে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, 'আমার ব্যবহারের জন্য আই এম ভেরি সরি সীমা। তুমি কিছু মনে রেখনা। আমি আজকাল অনেক শান্ত হয়ে গেছি। দেখো, আমি আরও শান্ত হয়ে যাব। শুধু তোমাকে আমার পাশে থাকতে হবে সীমা। তুমি আমার পাশে আছো তো ? বলনা সোনা।'
সোনা ডাকটা শুনেই সীমা গলে জল হয়ে গেল। মনিষের হাতটা তুলে নিয়ে তাতে একটা চুমু দিয়ে বলল, 'তুমি ছাড়া আমার কি আর কোন অস্তিত্ব আছে গো ? আমি সবসময়েই তোমার সাথে আছি।'
---------শেষ--------
Uttam Chakraborty.
Flat No - A. 208. Nishant Pride Apartment. Kamdhenu Nagar.
B Narayan Pura Main Road.
Bangalore - 560016. Phone - 9650711700.