ফাল্গুনী দে
ছয় তলার ফ্ল্যাটের দক্ষিণের জানলা প্রায় বন্ধই থাকে। হাওয়ার দাপটে খোলার জো নেই। এতো বড়ো ফ্ল্যাটে থাকার লোক কম তাই ব্যবহারও কম। নিরাপদ সেই সুযোগে বেশ কিছুদিন ধরে একটি পাখি নানান খড়কুটো আয়োজন বয়ে এনে সাজিয়ে নিয়েছে একটি ছোট্ট সংসার, সুচিরা একদিন খেয়াল করে। কাঁচের জানলার এমন কায়দা, দিনের বেলা বাইরে থেকে ভেতরের কিছু দেখা যায়না, কিন্তু ভেতর থেকে সব দেখা যায়, আবার রাতের বেলা ঠিক উল্টো। পাখিটা এসে কার্নিশে ঠোঁট পরিষ্কার করে, জানলার কাঁচে ঠোকর মারে, এদিক ওদিক নাচানাচি করে, কর্তা গিন্নি ঠোঁটে ঠোঁট জমিয়ে প্রেম বিনিময় করে, বাসায় ডিম পাড়ে, দিনের পর দিন ডিমে তা দিয়ে বসে থাকে, পালা করে দুজনে পাহারা দেয়, সদ্য ডিম ফোটা বাচ্চাদের মুখে খাবার গুঁজে দেয় আশ্চর্য মমতায়, জানালার ওইপারে সন্তান স্নেহ জাঁকিয়ে বসে শীতকালীন রোদের মতো, সুচিরা সেসব দৃশ্য খুব সাবধানে ক্যামেরাবন্দি করে। খাবারের খোঁজে মা পাখি দূরে উড়ে গেলে সুচিরা জলপাত্র সাজিয়ে দেয় পাশে। ছড়িয়ে দেয় কিছু চাল গমের দানা। কাজের মেয়েটি একদিন আচমকা জানলা খুলে জঞ্জাল বিদায় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে সুচিরা তাকে ধমকে সাবধান করে এবং ব্ল্যাক টেপ লাগিয়ে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেয় জানলা।
বৌদির মানসিক অবস্থার কথা ভেবে মেয়েটি আর উচ্চবাচ্য করে না, বাসন মাজতে মাজতে অস্ফুটে বলে ওঠে -- জানলার এপারে না হোক ওপারে তো একটা ভালো কিছু হলো।
=====================
লেখক পরিচিতি
ফাল্গুনী দে
কবি গল্পকার সহকারী অধ্যাপক
ঝিল রোড, যাদবপুর, কলকাতা
9883226946