কাহিনীর মতন
প্রতীক মিত্র
সব গল্পই শুরু থেকে হবে কেন? এটাকে যদি শেষ থেকে শুরু করা যায়? মানে যেদিন(ওই দুর্গাপুজোর মুখে) বিকেলের দিকে কলেজ স্ট্রীটে ওরা দু'জনে(ঠিক দুজনে নয় অবশ্য, শ্রেয়া পুরোপুরিভাবে চায়নি, তা যাগগে) ঠিক করলো আর দেখা তো দুরের কথা, ফোনাফুনিও করবে না।শ্রেয়ার চোখদুটো একটু ঝাপসা ছিল। অনিতের নয়।ও যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার, ঠান্ডা রক্তের জীব। শ্রেয়ার ওর প্রতি দুর্বলতাকে ও প্রশ্রয় দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় শ্রেয়াকে রাজী করিয়ে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সত্বেও ও সেই সুযোগটা নেয়নি।না না এটাকে তা বলে অনিত আলাদা করে মহত্ব্যের আলোয় দেখেনি। শ্রেয়া যেভাবে ওর বাবা, মায়ের সাথে অনিতের আলাপ করিয়েছিল তাতে অনিত বুঝেছিল ওর সাথে সম্পর্কটাতে সম্পূর্ণতা দেওয়াতে শ্রেয়া কতটা প্রস্তুত। অনিত ছিল না।কোনো একটা সম্পর্কে চিরতরে আটকে যাওয়ার মত বিরম্বনা ওর পক্ষে হজম করা ছিল কঠিন।তবে ওই বিকেলের পর তাড়নায় আলে কালে অনিত শ্রেয়াকে ফোন করলেও শ্রেয়া আর ফোন করেনি এবং ফোন ধরেওনি। অনিতের দিশেহারা হওয়াটা রয়েই গেল। তারপর ক্রমে দুজনেই ছাত্রাবস্থা থেকে কর্মজীবনে ঢুকে ব্যস্ততার সাথে বন্ধুত্ব করে যখন সব ভুলতে বসার আয়োজন করছে, তখনই অনিতের জীবনে হাজির প্রথমা। প্রথমা হাবে-ভাবে-স্বভাবে শ্রেয়ার উলটো হলেও অনিতের তাতে মানিয়ে নিতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি।কেননা শ্রেয়ার ভরসাকে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য যা খেসারত সেটাতো তাকে দিতেই হয়েছে।একাকিত্ব।শীতের দীর্ঘ রাতের মতন একাকিত্ব। প্রথমা অনেক অনেক দাম্ভিক, স্বাধীনচেতা, খুঁতখুঁতে হলেও অনিত তবু প্রথমাকে মেনে নিয়েছে এই ভেবে অন্তত কথোপকথনে ঝগড়া হলেও হবে, তবু ঝগড়াটা তো হবে। শেষমেশ প্রথমার সাথে বিয়ে হলে কখনও ঝড় কখনও ঠান্ডা উদারসীনতা আর কখনও কখনও বা শরীরি সমীকরণের হিসেব নিকেশে অনিত মোটের ওপর শান্ত থাকবার বিলাসিতা দেখাতে পারলেও বোরডম ছিল এখানেও উপলব্ধি করার মতন।ও নিজেকে দায়ী করেই ওর মনোযোগের বাঁধন তা সে জৈবিক হোক কিম্বা বৌদ্ধিক এদিক ওদিক যেতে লাগলো ঢিলে করার জন্য। প্রথমার অজান্তেই অনিতের ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেল অন্য মহিলার সাথে এক নয় একাধিক। সেটাও যখন বিস্বাদ ঠেকলো তখনই ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে ওর চোখ গেল শ্রেয়ার প্রোফাইলে।সে যে কাজে উন্নতি করেছে তা অনিত আগেই জানতো।উন্নতি করেছে মানেই ও অতীতকে পাশ কাটাতে পেরেছে।বিষয়টা ওখানে থেমে থাকলে ঠিক ছিল, কিন্তু ততক্ষণে অনিতের চোখে আরো একটা জিনিস পড়লো।শ্রেয়া একটি সম্পর্কে আছে। ছেলেটিকে চেনার চেষ্টা করলো অনিত।চিনতে পারলো না। চিনতে পারার কথাও নয়। ছেলেটির নাম দেখলো সায়ন।তা সায়ন আর শ্রেয়ার কিছু একসাথে তোলা ছবিও চোখে পড়লো ওর।তা ভালো।দেখে তো মনে হচ্ছে দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া দারুণ।থাক যত বেশি বোঝাপড়া থাকবে ততই ভালো।অন্তত সেই কারণেই অতীতের দিকে শ্রেয়াকে আর ঘুরতে হবে না।জ্বালাতন করতে হবে না অনিতকে।যদিও অনিত এটা ভালোই জানতো শ্রেয়া কোনোদিনই অনিতকে সেভাবে জ্বালায়নি।শ্রেয়া নিজের কাজেই ব্যস্ত ছিল।যখনই অনিত ওকে আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে অনিত এই সম্পর্কটা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত তখন থেকেই শ্রেয়া ওর পথ থেকে দুরে অনেক দুরে সরে গেছে। আজ আবার কেন যে শ্রেয়ার কথা মনে পড়ছিল ওর। অথচ কোনো রকমের কোনো দাম্পত্য কলহ ছিল না।ছিল না চাকরিতে কোনো অনিশ্চয়তা।তবু যে কেন…? আবারো প্রায় বছর দশেক পর শ্রেয়াকে শেষমেশ ফোন করেছিল অনিত।মেলেনি। বোধ হয় ফোন নম্বর বদলে গেছিল। শ্রেয়ার সাথে সম্পর্কটা বিয়েতে পরিণতি পেলে আলাদা কি হত? মানে সেও কি প্রথমার মতন ওর এইসব পরকিয়াগুলো নিয়ে উদাসীনই থাকতো?অনিতের এতসব ভাবতে ভালো লাগে না।বাড়িতে ও একটু বিশ্রাম চায় অথচ আজ যে কি ভীষণ শ্রেয়ার কথা মনে আসছে!
=====================
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, হুগলী,পশ্চিমবঙ্গ