Click the image to explore all Offers

ভ্রমণ ।। জঙ্গলে সেই রাতে ।। দীপক পাল


                     

জঙ্গলে সেই রাতে                                        

 দীপক পাল
             

অনেকেই হয়তো জানেন না যে কয়েক বছর আগে বিহারের হাজারীবাগ জেলায় কিছু অংশ বেশ জঙ্গল ময় ছিল শুধু হাজারীবাগ বলি কেন, রাঁচি থেকে হাজারীবাগ আস্তে গিয়ে রাস্তার দু পাশে বেশ ঘন জঙ্গল ছিল রাঁচি - হাজারীবাগ রুটের বাসগুলো ভীষণ বেগে যাতায়াত করতো সারাদিনে হয়তো চারটি বাস চলাচল করতো এই রুটে সেই সময় হাজারীবাগে একটা রিজার্ভ ফরেস্ট ছিল এখনো সেটা আছে কিনা জানি না অবশ্যযতদূর মনে পড়ে সেই ফরেস্টের নাম ছিল হাজারীবাগ ন্যাশনাল ফরেস্ট

              একবার আমি আমার এক বন্ধু সোমেন বিহারের হাজারীবাগ নিকটস্থ কয়েকটি জেলা পরিদর্শন করে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম উদ্দেশ্য জঙ্গল সাফারি করা সেখানে গিয়ে একটা ছোটখাটো হোটেলে উঠলাম রুমে ব্যাগ পত্তর রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে চা টা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম ক্যানারি হিলসের উপর উঠে উপর থেকে শহরের ভিউটা দেখলাম ওখানে কিছুক্ষণ কাটানোর পর নিচে নেমে জঙ্গল সাফারি করার খোঁজ নিলাম তারপর এদিক ওদিক ঘুরে হোটেলে ফিরে লাঞ্চ সারলাম এই অক্টোবরেই এদিকে বেশ ঠান্ডা পরে গেছে একটু জিরিয়ে রেডি হয়ে বেরোলাম একটু তাড়াতাড়িই বেরোলাম, কারণ খোঁজ নিতে গিয়ে মনে হলো খুব বেশী পর্যটক হয়না এই জঙ্গল সাফারির হাঁটতে হাঁটতে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে পৌঁছলাম অনেক কষ্টে এক গাড়ির ড্রাইভারকে রাজী করানো গেলো সে যাবে যদি ছয়জন পর্যটক পায়

অতএব অপেক্ষা বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর আরও চারজন পর্যটক পাওয়া গেলো তার মধ্যে এক জনকে চিনতে পারলাম ইনি আমাদের হোটেলেই আছেন আমাদের সাথেই লাঞ্চ সেরেছেন টালিগঞ্জে থাকেন লম্বা ফরসা চোখে চশমা আমাদের চেয়ে বড় আর তিনজন বন্ধু এসেছে কালীঘাট থেকে খুব হুল্লোড়ে         

গাড়ি ছাড়লো বিকেল পাঁচটার পরে যখন ন্যাশনাল ফরেস্টের গেটে পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যে নেমেছে প্রায় গাড়িটা গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার আর হেল্পার গেলো ভিতরে পারমিশন আনতে  পারমিশন নিয়ে হাতে একটা সার্চলাইট নিয়ে ওরা ফিরলো এদিকে একটা দল জঙ্গল সাফারি করে এসে দাঁড়ালো গেটের ভিতরে ওই গাড়িটার ভিতর থেকে একজন সার্চলাইট হাতে নিয়ে নামতেই ফরেস্ট অফিসার তার হাত থেকে সেটা নিয়ে নিলো তারপর আমাদের দিকে এগিয়ে এসে নির্দেশ দিলেন গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে দিতে আর গাড়ি থেকে না নামতে যে গাড়িটা সাফারি করে ফিরে এলো গেট থেকে বেরোতে বেরোতে তাদের একজন বললো, ' দুর মশাই আমরা কিছুই দেখতে পাই নি, আদপেই কিছু আছে কিনা সন্দেহ দেখুন আপনার যদি কিছু দেখতে পানওদের গাড়ি বেরিয়ে গেলো আমি আর সোমেন বসেছিলাম সামনের বাম দিকে জানালার ধারে ড্রাইভার আর হেল্পারের পাশে ওরা চারজন পেছনের সিটে টালিগঞ্জের ভদ্রলোক বসেছিলেন জানালার ধারে, তাকে সার্চলাইটটা দিয়ে ড্রাইভার বললো, ' এই নিন ধরুন, আপনি সবার থেকে বড়ো আপনিই পারবেন ঠিকঠিক সার্চলাইট তাক করতে আমি যখন বলবো ঠিক তক্ষুনি জানালার কাচটা নামিয়ে সার্চলাইটের আলো ফেলবেন রাস্তাটা কিছুদূর অন্তর অন্তর একটু নিচু হয়েই আবার উপর দিকে উঠে গেছে আর ঠিক ওই নিচু জায়গা দিয়ে জল বয়ে চলে বাঘেরা সন্ধ্যে হলেই ওখানে জল খেতে আসে আমি গাড়ির গতি ওখানে একদম কমিয়ে দেবো আপনিও আলো ফেলবেন বাঘ যদি তাকায় আপনিও বাঘের চোখে আলো ফেলবেন চোখে ডাইরেক্ট আলো পড়লেই বাঘ সরে যাবে কোনো ভয় নেই' গাড়ি ছাড়লো ড্রাইভার ভদ্রলোক কিন্তু জানালার কাঁচ নামাবার কোনো উৎসাহ দেখালো না তিনি ভয় পেয়েছেন বুঝতে পেরে ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতে বললো, ' ঠিক আছে আপনি সার্চলাইটটা আপনার ডান দিকে জানালার পাশে যিনি বসে আছেন তাকে দিনকিন্তু ডান দিকের ছেলেটি বললো, ' আমিও কিন্তু কাচ টাচ নামাতে পারবো না  না নামিয়ে ভিতর থেকে যদি আলো ফেললে হয় তবেই আমি রাজি কেনো এটাতো হেলপারের কাজ' ড্রাইভার এবার রেগে গিয়ে বললো, ' তাহলেতো হেল্পারকে আপনাদের জানালার একটা ধার দিতে হয় কেউ কি ছাড়বে একটা জানালার ধার?' কিন্তু কারোর মুখে কোনো কথা নেই ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে পেছন থেকে সার্চলাইটটা নিয়ে আমার কোলে ফেলে দিয়ে বললো, ' এতো ভয় পেলে জঙ্গল সাফারি করতে আসবেন না' অগত্যা চুপ আমি          

আমি জানালার কাচ নামিয়ে সার্চলাইট বাগিয়ে বসলাম বটে কিন্তু বেশ ভয় ভয় করতে লাগলো লাইট সাধারণত সামনের সিটের বাম দিকে বসে হেল্পার ধরে কিন্তু সেখানে আমরা দুজনে কেউ হেলপারের এত কষ্ট করে বসে থাকার জায়গায় যেতে চাই নি নিকষ কালো অন্ধকার ঠেলে গাড়ি চলতে লাগলো খালি ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে চলেছে একটানা জোনাকিরা আলো জ্বালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক এই কঠিন নিস্তব্ধতা ভেঙে ড্রাইভার বললো, 'সামনে রাস্তাটা কিছুটা নেমে আবার উঠেছে, জলের আওয়াজ পাচ্ছেন তো? আমি গাড়িটা খুব আস্তে চালাচ্ছি আপনি সার্চলাইট তাক করুন' কথাটা ড্রাইভার আমার উদ্দেশ্যে বলেছে আমিও সার্চ লাইট নিয়ে রেডি কেমন যেন একটা ভয় জাগানো রোমাঞ্চ হচ্ছিল সেই সময় গাড়ির চাকায় ছলাত শব্দ কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না মনে মনে অন্য চিন্তাও হচ্ছে বাঘ যা চালাক, হয়তো গাড়ির শব্দ শুনে রাস্তার ধারে জঙ্গলে ওত পেতে থেকে পেছন থেকে গাড়ির উপর এক লাফে উঠে আমার বাম হাতটা কামড়ে নিয়ে যায়, তখন কথাটা সোমেনকে বলতে বললো মাঝে মাঝে সার্চলাইটের আলোটা পেছন দিকেও ফেলতে এইভাবে আমরা আরও কয়েকটা হালকা জলস্রোত পেরিয়ে এলাম পেরিয়ে যেতে যেতে পেছনেও আলো ফেললাম কাকস্য পরিবেদনা, বাঘ তো দূরের কথা কোনো জন্তুও চোখে পড়লো না টালিগঞ্জের ভদ্রলোক নাকি দুটো জ্বলন্ত চোখ দেখতে পেয়েছেন একবার

জঙ্গলে ঢোকার ঠিক আগে একটা কাফেটেরিয়া ছিল সেখানে ঢুকে কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে চা আর কিছু মিছু খেয়ে নিয়ে আবার দ্বিতীয় শেষ দফা যাত্রা শুরু হলো আমাদের কাফেটেরিয়ায় চা খেতে খেতে কালীঘাট থেকে আসা ছেলেরা ড্রাইভারকে ডান দিকের কোন এক রাস্তায় ঢুকতে বললো ড্রাইভার বললো ওই দিকের রাস্তা খুব খারাপ, চাকা ফেঁসে যেতে পারেতাছাড়া গাড়ি ঘোরান
যাবেনা ওই রাস্তায় গাড়ি ছাড়লো ড্রাইভার প্রথম জল পয়েন্ট পেরিয়ে যেতেই কালীঘাটের একটা ছেলে চেচিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললো, ' এবার ডান দিকের রাস্তাটা ধরুন দাদা' ড্রাইভার বললো, ' আপনাকে আবার বলছি ওদিকের রাস্তাটা খারাপ ওদিকে যাওয়া যাবেনা' আর একটা ছেলে বললো, ' সবাই মিলে না বললে যাবেনাcএদিকে এখন আর বাঘ আসেনাড্রাইভার এবার আরও
রেগে গিয়ে বললো, ' এদিকে যদি আপনারা জেনেই থাকেন যে বাঘ আসে না তবে সার্চলাইট নিতে চাইছিলেন না কেনো? তাছাড়া এই অন্ধকারে ওই ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় গাড়ি পাংচার বা ফেঁসে গেলে সারাটা রাত ওখানে পড়ে থাকতে হবে কোনো হেল্প তো পাবার আশা কম, ওদিকে বনদপ্তরে আমাকে হাজারটা জবাবদিহি করতে হবে সে জানেন?' একটু পরে আবার জলের স্রোতের শব্দগাড়ি যথারীতি সেটাও পেরিয়ে গেলো টালিগঞ্জের ভদ্রলোক বললেন, ' চেঁচামেচি শুনে বাঘ আগেই হয়তো পড়েছে সরে' কালীঘাটের সবাই বলে ওঠে,' আরে না না এদিকে রাস্তায় বলছি তো কোনো বাঘ নেই, বেকার' ড্রাইভার এবার গাড়ি চালাতে চালাতে পেছন দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, আপনারা জানেন এই রাস্তায় কোনো বাঘ নেই? তাহলে ফিরে যাবার সময় একবার অফিসে খোঁজ নিয়ে যাবেন তাহলেই বুঝতে পারবেন এখানে কবে কখন আর কত জন এই রাস্তাতেই বাঘ দেখেছে বুঝলেন?'  এদিকে অতি উত্তেজনা বশত গাড়িটা মনে হয় ড্রাইভারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে থাকতে পারে, গাড়িটা বাম দিকে কাত হয়ে থেমে গেলো আর এগোনো গেলো না ড্রাইভার তার হেল্পারকে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ব্যাপারটা দেখতে বললো হেল্পার গাড়িটার  হেডলাইট গুলো সব এখন জ্বালিয়ে রাখতে বললো ড্রাইভার তাই করলো হেল্পার এবার দেখে এসে বললো বাম দিকের গাড়ির চাকাটা ঝুলছে শূন্যে ড্রাইভারও নামলো এবং দেখে এসে বললো সবাইকে গাড়ি থেকে নেমে দাড়াতে ভয়ে কেউ নামতে সাহস পেলনা কারণ পেছনেই জলের ঝির ঝির শব্দ ভেসে আসছে ড্রাইভার বললো, ' দাদারা গাড়ি থেকে না নামলে গাড়িটাকে তোলা যাবে না সারা রাত এখানেই পড়ে থাকতে হবেআমরা সবাই সুর সুর করে নেমে দাড়ালাম এবং গাড়ীর প্রায় গায়ে সার দিয়ে দাড়ালাম আমাকে মধ্যিখানে দাড়াতে হলো হাতে সার্চলাইট নিয়ে যে দিক দিয়ে জলের শব্দ আসছে সেদিকে সার্চলাইট তাক করে রাখলাম একজন বললো মাঝে মাঝে অন্য দিকেও আলো ফেলতে কোথা দিয়ে যে আক্রমণ আসে, তার কোনো ঠিক নেই কিছুক্ষণ পরে ড্রাইভার সার্চলাইট টা নিয়ে গেলো রাস্তা থেকে নেমে গিয়ে বড়ো বড়ো পাথর জোগাড় করে ঝুলন্ত চাকার নিচ পর্য্যন্ত জড়ো করে তুলতে হবে তারপর চেষ্টা করতে হবে গাড়িটাকে রাস্তায় তোলার এদিকে আমরাও ভয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়লাম কি করা যায় আমরা অন্ধকারেই দাড়িয়ে আছি আর পেছনে সার্চলাইটের আলো এদিক সেদিক ঘুরছে আর ড্রাইভার হেলপারের কাজ করার ঠুক্ ঠাক আওয়াজ রাস্তার নিচে সময় গড়াতে লাগলো এক অসহনীয় অবস্থায় ফিস ফিস করে কথা বলছি আমরা আলোচনা করছি, ড্রাইভার হেলপার জঙ্গলে নেমে অতি বিপদের মধ্যে কাজ করছে ওদের কারো ওপর যদি কোনো বন্যা জন্তুর আক্রমণ হয় তাহলে তো গাড়ি ভোর পর্য্যন্ত চলবেই না গাড়িতে ওঠাও চলবে না ভাবতেই শিউরে উঠতে হয় হটাৎ কালীঘাটের একজন গলা ছেড়ে গান গেয়ে উঠলো, ' মনো দিল না বধূ মন নিলো যে শুধু আমি কি নিয়ে  থাকিআর একজন বললো, ' এই ঠিক এই ভাবে যদি, ভয়টা কিছুটা কাটে' বন্ধু সোমেন বললো, ' কিন্তু এর উল্টোটাও হতে পারে বাঘ জল খেতে এসে অযাচিত ভাবে আমাদের হদিস পেয়ে যাবে' আবার সবাই চুপ চাপ হয়ে গেলো সেই দমবন্ধ করা পরিবেশ এক একটা মিনিট যেন এক একটা ঘণ্টা            

ড্রাইভার এক সময় এসে বললো গাড়িটা পেছন থেকে ঠেলতে আমরা উৎসাহের সাথে গাড়ি ঠেলতে লাগলাম ড্রাইভার গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় উঠালো তারপর বললো আপনারা সব এইবার গাড়িতে উঠুন আমরা যেনো বুকে বল পেলাম সবাই যে যার সিটে গিয়ে বসলাম  টালিগঞ্জের ভদ্রলোক বললো, ' যাক বাবা শেষ মেষ বিপদ কাটলো অনেক শিক্ষা হলো, এবার ফিরে চলুন সবাই আর নয় '  সবাই সায় দিল ওনার কথায় ড্রাইভারও গাড়ি ঘুরিয়ে  নিলো

=======================

Address & Mobile No.:-

Dipak Kumar Paul,

DTC Southern Heights, 

Block - 8, Flat - 1B, 

Diamond Harbour Road, 

Kolkata - 700104.

Contact: 9007139853. 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.