চিঠির পাতা ।। নদীকে চিঠি ।। গোবিন্দ মোদক
নদীকে চিঠি
গোবিন্দ মোদক
ওগো নদী,
তুমি আমার সই হও। কেন না আমার নামও নদী। কেন যে আমার মা-বাবা শখ করে আমার নাম নদী রেখেছিলেন জানি না। কিন্তু আমার দুঃখের শেষ নেই। এই ছোট্ট বয়সেই আমি আমার মা-বাবাকে হারিয়েছি। এ পৃথিবীতে তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমি তোমার দুঃখ বুঝি, জানি না তুমি আমার দুঃখ বোঝো কিনা! আমি এতো কাঁদি, এতো কাঁদি – যে আমার চোখের জলে তৈরি হয় আর এক নদী। শুনেছি তুমিও জনমদুঃখিনী – সভ্যতার সেই কোন অনাদিকাল থেকে তুমি বয়ে চলেছ কুলুকুলু শব্দে … মানুষকে দিয়েছো সভ্যতা, দিয়েছো অগ্রগতি, দিয়েছো তৃষ্ণার জল, চাষের সুগম ব্যবস্থা, চলাচল … আরও কত কি! তুমি তোমার বুক পেতে দিয়েছো মানব সভ্যতার সামনে। তোমার দুই তীরে গড়ে উঠেছে না জানি কতো কতো সভ্যতা। অথচ মানুষ কি তার প্রতিদান দিলো! মানুষ তোমাকে শুধু ব্যবহার করেই গেলো – তোমার বুকে সাঁকো নির্মাণ করলো, বাঁধ নির্মাণ করলো, যত বর্জ্য আবর্জনা সব তোমার বুকে নিক্ষেপ করলো। নিক্ষেপ করলো কীটনাশক, রাসায়নিক সার এবং আরো কতো কতো বর্জ্য! তুমি কোনও প্রতিবাদ করতে পারোনি। পারবে কি করে! তুমিও তো আমার মতোই জনমদুঃখিনী, সব দুঃখ সয়েই গেলে নীরবে! জানি নদী, সবার আড়ালে তুমিও কাঁদো, খুব কাঁদো; তোমার চোখের জলে তৈরি হয় আরো কতো কতো নদী! কিন্তু মানুষ শুধুই সুযোগসন্ধানী, সে তোমার কাছে শুধু সুবিধা নিয়েই গিয়েছে, তোমার এতোটুকু অসুবিধা হচ্ছে চোখ চেয়ে দেখেনি! তোমার দুঃখ সে বুঝবে কেমন করে! জানি, তুমিও একদিন পুরোপুরি মজে যাবে – তোমার নাম হারিয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে – অবশ্য সেজন্য মানুষের কোনও দুঃখ হবে না। কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ "নদীকে বাঁচাও", "নদীর জন্য হাঁটি", "নদীর জন্য কাঁদি" – ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে নদীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু সে চেষ্টাও হাতে গোনা, গুটিকয় মাত্র! জানিনা সে চেষ্টা তোমাকে বাঁচাতে কতোটা সাহায্য করবে!
নদী এসো, আমার সঙ্গে হাত মেলাও। আমার জন্য ভাবার-ও যেমন কেউ নেই, তোমার জন্য ভাবার-ও কেউ নেই। তাই এসো, মরে যাওয়ার আগে আর একবার নতুন করে বাঁচবার স্বপ্ন দেখি।
ইতি –
তোমার সই 'নদী'।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
স্বরচিত মৌলিক অপ্রকাশিত পত্র সাহিত্য।
প্রেরক: গোবিন্দ মোদক।
রাধানগর, ডাক- ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।
পশ্চিমবঙ্গ, ডাকসূচক - 741103