ডাকবাক্সটা খুঁজে পাইনি
তপতী মণ্ডল
দশমী,
১৭ আশ্বিন১৪১০
প্রিয় অয়নদা,
একটা চিঠি পেয়েছি খুঁজে বাপের বাড়িতে আমার পুরোনো বই-খাতার ফাঁকে। তোমারই হাতের লেখা, ঝাপসা,তবুও বেশ বোঝা যাচ্ছে সব কথা। তুমি লিখেছো-- শেষ চিঠিটাও পাঠিয়ে দিলাম। উত্তর দিও প্লিজ। একবার জানিও তুমি আমার সব চিঠি পেয়েছো কিনা। আর কিছু না লিখলেও বুঝে যাবো। তবুও আশায় থাকবো।অন্তরে এঁকেছি তোমারই ছবি, ভালোবাসাকে দিয়েছি তোমায় ছোঁয়ার অনুভব।এখন আমি খুব খুশি, নাইবা তুমি খোঁজো আমায়। যদি কোনোদিন ইচ্ছা হয় মনে করে একটা চিঠি লিখো আর ডাকবাক্সে ফেলে দিও। আমি ঠিক পেয়ে যাবো। আমার ঠিকানা যদি ভুলে যাও কষ্ট করে একবার যেও সেই প্রিয় গাছতলায় যেখানে হয়েছিল আমাদের প্রথম দেখা। নতুবা প্রথম শিশিরভেজা ঘাসে যেখানে একসাথে রেখেছি পা অথবা একসাথে পুজোর প্যান্ডেলে গা ঘেঁষে একটু ছোঁয়ার শিহরণ.....।কোথাও না কোথাও আমায় পেয়ে যাবে ঠিকই। মনে থাকবে অনামিকা?
----হ্যাঁ, আমিও মনে করে চিঠিতে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমি সত্যিই তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসতাম। কিন্তু তুমি ভিন জাতের বললো সবাই। এ বিয়ে হলে লাশ হবে তুমি নাকি। সমাজ ভয় দেখালো। আমি পারিনি আর সাহস করে এগিয়ে যেতে। তাইতো বাড়ির সবার পছন্দের পাত্রকে.....।
আমি কেমন আছি জানতে চেওনা। তুমি যে ভালো নেই তা তো তোমার চিঠিই বলে দিচ্ছে। তবে অতীত ভুলে যাও, নতুন করে বাঁচো অয়নদা.....।
চিঠিটা সুন্দর করে লিখে সেদিন ডাকবাক্সেই ফেলতে গিয়েছিলাম তোমার সেই পুরোনো ঠিকানায়।কিন্তু ডাকবাক্সটা খুঁজে পায়নি। তাই আমাদের প্রথম দেখা সেই বকুলতলায় পৌঁছে গেলাম। কিন্তু এক দমকা হাওয়ায় চিঠিটা উড়ে গিয়ে পড়লো শিশিরভেজা ঘাসের উপর। ভিজে যাবে এই ভয়ে দৌঁড়ে ছুটে গেলাম। না, তুলতে পারলাম না। ঝোড়ো হাওয়া চিঠিটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল দূরে,অনেক দূরে.....।
চারিদিকে কালো অন্ধকার করে এলো। পাড়ার পুজোর প্যান্ডেলে ঢাকের আওয়াজ উঠলো। মনে পড়লো--অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে হবে। ছুটতে ছুটতে এসে দাঁড়ালাম অঞ্জলির লাইনে। অঞ্জলির ফুল হাতে নিয়ে দেখি মা দুর্গার পায়ের কাছে আমার সেই চিঠিটা। উপরে তোমার নাম লেখা আমারই হাতের অক্ষরে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি চিঠির উপর তোমার মুখ। তুমি হাসছো,খুব হাসছো আর বলছো--এইতো আমি পেয়েছি,আমি পেয়েছি আমার ভালোবাসা। মুহূর্তে মিলিয়ে গেলে।চিঠিটাও কেমন অদৃশ্য হয়ে গেল।বাঁধভাঙা গতিতে আমার চোখের জল বেরিয়ে আসতে লাগলো। ঠাকুরমশাই তখনও উচ্চৈঃস্বরে মন্ত্রপাঠ করে চলেছেন।সেই কণ্ঠ শরতের স্নিগ্ধ সকালের মুক্ত বাতাসের সাথে ভেসে গেল অনেক দূরে....।
কিন্তু আজ আমি কেন এসব লিখছি চিঠিতে? আমি জানি না। ভাবছি আজও সেই প্রিয় বকুলতলায় গিয়ে চিঠিটা তোমার উদ্দেশ্যে উড়িয়ে দেবো। তুমি নিশ্চয়ই পাবে এই চিঠিটাও।
বাইরে বিসর্জনের ঢাক বেজে উঠেছে। ভারাক্রান্ত মনে সবাই বলছে--"আসছে বছর আবার এসো মা"।একা আমি ঘরে। যেখানেই থাকো ভালো থেকো অয়নদা....
ইতি
অনামিকা।
================================
তপতী মণ্ডল। রহড়া,উঃ২৪ পরগণা।