ধারাবাহিক উপন্যাস ।। সামান্য মেয়ে ( পর্ব- ৩) ।। রণেশ রায়
এক যাত্রা
পৃথক ফল
নীলুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু সৌম্য। সৌম্য ঘোষ। পড়াশুনায় ভালো। রানাঘাটের ছেলে। বাবা প্রতিষ্ঠিত
ডাক্তার। মাও সরকারি অফিসে কাজ করেন । সৌম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকে। নীলুর আড্ডা
বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে। সৌম্যও সেই আড্ডায়। ওরা দুজন অল্প সময়ে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নীলু
প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে বন্ধুবান্ধবের কারও ঘরে বিশেষ করে সৌম্যের ঘরে থাকে। সৌম্য
পড়াশুনায় খুব মনোযোগী। ক্লাসের সব নোটপত্র ওর নখদর্পনে। নীলুর পড়াশুনায় তত মন নেই। কিন্তু
পরীক্ষার তাগিদে তৈরি হতে হয়। তার সহজ পথ হলো সৌম্যের মত বন্ধুর সাহায্য পাওয়া। তাতে নিজে
সময় না দিয়েও কাজগুলো হয়ে যায়। সে কারণে তাকে হোস্টেলে থাকতে হয়। এতে আড্ডাও হয় পরীক্ষার
জন্য যতটুকু দরকার সেটাও হয়। আর একটা ব্যাপার ওকে বাড়ি ছেড়ে হোষ্টেলে থাকতে উৎসাহিত করে।
সেটা হলো ওর বাবার সঙ্গে ওর সম্পর্ক। ওর বিশ্বাস ভাবনার সঙ্গে বাবার ভাবনা মেলে না। আর ও
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ইউনিয়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ইউনিয়নের কাজ করতে সুবিধে
হয় হোস্টেল থেকে। ওর এসব কাজকর্ম বাবা আর সেই দৌলতে মায়েরও পছন্দ নয়। এসব নিয়ে বাপ ছেলের
মধ্যে বিবাদ। এক জন আরেকজনকে এড়িয়ে চলে। আগে এ নিয়ে অশান্তি হত কারণ বাবা বকাবকি করতেন
আর নীলুও প্রতিবাদ করতো। ছেলে উচ্ছন্নে গেছে ভেবে বাবা আজকাল আর কিছু বলেন না। ছেলের
যোগাযোগ মূলত মায়ের সঙ্গে। মানি মাষ্টার মানে দাদুর বাড়ি নীলু মধ্যে মধ্যে মাকে নিয়ে যায়। বাবা
ওখানে খুব একটা যান না। দাদুর সঙ্গে নাতির ভাবটা আরও গভীর কারণ দাদু তার চিন্তা ভাবনার সঙ্গে
সহমত। এককালে তিনিও বামপন্থী রাজনীতি করতেন। আজও ভাবনাটা ধরে রেখেছেন।
সৌম্য মধ্যে মধ্যে নীলুদের বাড়ি আসে। অল্প সময়ের মধ্যে ওর মায়ের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে। নীলুর
বাবাও ওকে খুব পছন্দ করেন কারণ ও সাতে পাঁচে থাকে না। ওর বাবা প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার বলে ওদের
পরিবারের প্রতি একটা বাড়তি শ্রদ্ধাও পোষণ করেন নীলুর বাবা। সৌম্যের নীলুর মায়ের রান্না খুব
পছন্দ। নীলুর মা ওকে খাইয়ে খুব আনন্দ পান। আর নীলু তেমন খাদ্য রসিক নয়। তাই ছেলেকে খাইয়ে মা
তেমন আনন্দ পান না। সেটা মেটে সৌম্যকে খাইয়ে। এখন সৌম্যের সঙ্গে নীলুর বাড়ির সম্পর্ক এমন হয়ে
গেছে যে ও বাড়িতে সৌম্যের অবাধ যাতায়াত। সৌম্য না থাকলেও। ও দরকারে অদরকারে নীলুর বাড়িতে
থেকে যায়। এ বাড়িতে আরেকজন খুদে সদস্য আছে। সে হল নীলুর বোন শিপ্রা। ক্লাস টেনে পড়ে। সামনে
মাধ্যমিক। সৌম্য তার দাদার মত বললে কম বলা হয়। অন্তত ওদের চাল চলনে তার চেয়েও বেশি বলে মনে
হয়। ওর পড়াশুনা নিয়ে সৌম্য খুব যত্নশীল। আর সৌম্যের একটা মাস্টারি মনোভাব আছে। কতক্ষন
15
কিভাবে পড়লে ভালো ফল করা যায় কোন বই কার ভালো সেসব নিয়ে সৌম্য শিপ্রাকে পরামর্শ দেয়।
এখনতো নীলুর মায়ের অনুরোধে ও নিয়ম করে শিপ্রাকে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো দেখিয়ে দেয়। সৌম্য নীলুর
মা আর বোনকে রানাঘাটের বাড়িতেও নিয়ে গেছে। সৌম্যের বাবা মা কলকাতায় এলে সময় করে গড়িয়ায়
নীলুর বাড়িতে আসে। দুবাড়ির মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
নীলু সুন্দরবনে দাদুর বাড়ি এসেছে। সঙ্গে মা বোন আর সৌম্য। বাবা এখানে খুব একটা আসেন না বলে মা
আর বোনের আসা হয় না। এবার ওরা এসেছে দুদিন থাকবে বলে। নীলু আর সৌম্যের মাথায় আছে বন্ধুদের
নিয়ে যে সুন্দরবনে বেড়াতে যাবার ইচ্ছে আছে সেটার ব্যবস্থা করে যাবে। বুড়ির কাকা যে লঞ্চ চালায়
সেটার সঙ্গে চুক্তি করবে। তাছাড়া বুড়ি সম্পর্কে সৌম্য শুনেছে। ওরও ইচ্ছে বুড়ির সঙ্গে আলাপ করার।
ওর কৌতূহল জানার ভাবুক কবি একটা অজপাড়াগাঁয়ের গরিব ঘরের মেয়ের কি দেখে মজল। আর ও জানে
এই নিয়ে নীলুর বাবা মায়ে সঙ্গে বিরোধ। ওঁরা সৌম্যের ওপর খুব নির্ভর করে তাই ওর যদি ভালো লাগে
তবে ও নীলুর বাবা মাকে বোঝাবে। যেন বিরোধটা মেটে। অবশ্য নীলু মনে করে এতে কাজ হবে না। কারণ
বিরোধীতার মূলে আছে একটা ভুল সমাজ সংস্কৃতি যা মন থেকে দূর না করলে এ সমস্যাটা মিটবে না। যাই
হোক সৌম্য চেষ্টা করতে চায় করুক না। ওরও শিক্ষা হবে।
ওরা বাড়িতে আসায় দাদু দিদা মামা মামী মামার মেয়ে সোমা খুব খুশি। অনেকদিন পর বাড়িতে এতজন মিলে
হৈচৈ হবে। নীলু অবশ্য চিন্তিত এই নিয়ে যে সে বুড়িকে নিয়ে দাদু দিদার যে মনোভাব দেখে গেছে তার সঙ্গে
মা যুক্ত হলে ব্যাপারটা কোন দিকে যায়। আর নিজের বাবা মানে এ বাড়ির জামাইকে ও চেনে। ওর ভয় মা
বিষয়টা নিয়ে তোলপাড় না করে। হয়তো দাদু দিদার কপালেও দুঃখ আছে। যাক সে কথা। যা হবার হবে। ও
সৌম্যের সঙ্গে দাদু দিদা মামা মামী সোমা সবার আলাপ করিয়ে দেয়। সোমা আর বৌদি চা জল খাবার
এনেছে। খেতে খেতে গল্প শুরু হয়। দাদু নতুন পরিচিত সৌম্যকে নিয়ে শুরু করে। সে নাতির বন্ধু। বিশেষ
অতিথি। তিনি সৌম্যকে প্রশ্ন করেন:
------- তোমার বাড়ি কোথায়? বাবা কি করেন?
সৌম্য বলে, ----- আমাদের দেশের বাড়ি বাংলা দেশের ঢাকায়। বাবা রানাঘাটে বাড়ি করেছেন । বাবা ডাক্তারি
করেন। একই সংগে সে জানায় মাও সরকারি চাকরি করেন। সাধারণত মা কি করেন সেটা কেউ জিজ্ঞাসা
করে না বলে সৌম্য লক্ষ্য করেছে। সবাই ধরে নেয় মায়েদের একটাই কাজ। ঘরে রান্না বান্না ঘর
পরিষ্কার কাপড় কাঁচা। তাই মাকে যথার্থ সন্মান দেওয়ার জন্য সে এটা না জিজ্ঞাসা করা সত্বেও বলে
দেয়।
সৌম্যের কথা শেষ হলে মাসিমা মানে নীলুর মা বলেন:
------- রানাঘাটে বাড়ি হলেও ও এখন আমার বাড়ির ছেলে। বলতে পার শিপুর আর এক দাদা। নিলু তো ওর
বকার গার্জিয়ান। কিন্তু ও ওর শিক্ষক গার্জিয়ান। শিপুকে পড়ায়।
শিপ্রা ফোরন কাটে। বলে দাদা তো আমাকে শাসন করে। নিজের পড়াশুনা শিকেয় উঠেছে। পালিয়ে বেড়ায়।
আমার পড়ার খবরই রাখে না। দেখা হলে খালি পড় পড় করে। কিন্তু সৌম্যদা আমার পড়ায় সব সাহায্য
করে। কি সহজে অংক বুঝিয়ে দেয়। আমি অংকে এখন আর ভয় পাই না।
সোমা টিপ্পনি কাটে। বলে:
16
তুই দেখছি আসল দাদাকে ভুলেই গেছিস। নীলুদা তো এখানে এসে আমাকে কত কি বুঝিয়ে দেয়। ইতিহাস
ভূগোল। ওতে যে এত জানার আছে তাতো কেউ আগে বলে নি। ভাবতাম ওগুলো না পড়লেও চলে। তাছাড়া কি
সুন্দর কবিতা বলে লেখে। আড় চোখে সৌম্যের দিকে একবার তাকিয়ে বলে:
----- তোর সৌম্যদা কি এসব পারে। নীলুদা নীলুদাই।
দাদু চোখ গরম করে বলেন:
------- সৌম্যদা সৌম্যদা আর নীলুদা নীলুদা। দুজনেই তোমাদের দাদা। আর আমাদের নাতি। তুলনা কি চলে।
যেমন শিপু সোমা দুজনেই আমাদের নাতনী।
সবাই হেসে ওঠে। অনেকক্ষণ গল্পের পর দিদা বলেন:
----- অনেক সময় হয়েছে। একে একে সবাই স্নান করে খেয়ে নাও। বৌমা সোমা খাবার সাজাও।
স্নান সেরে সবাই খেতে বসেছে। দিদিমা সোমা খাবার পরিবেশন করছেন। সঙ্গে নীলুর মা আলো। উনার
নামটা জানানো হয় নি। দাদু দিদার প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় দাদুর ইচ্ছেটা পূরণ হয়। মেয়ে উনার ঘর
আলো করে থাকবে ভেবে দাদু আদর করে নাম রাখেন আলো। নামটা অন্তত উনার বাহ্যিক পরিচয়ে
সার্থক। যাকে বলে সুন্দরী তিনি তাই। ঘর আলো করেই ঘরে থাকে । তবে তিনি দিদার চাহিদা জন্মসূত্রে
মেটাতে পারেন নি। নীলুর দিদা মানে আলোর মায়ের ইচ্ছে ছিল প্রথম সন্তান ছেলে হোক। তবে তাতে তার
আফসোস নেই। তখনকার দিনে স্বামীর পুণ্যে স্ত্রীর পূণ্য। তাই দাদুর ইচ্ছে মেটে বলে দিদার ইচ্ছেও
অবহেলিত হয় না। আর আলো ছোটবেলার থেকেই মায়ের ডান হাত। পরে যখন ভাইরা হয় তখন কৃতিত্বের
সঙ্গে অভিভাবকত্বের ভূমিকা পালন করে। সেটা মায়ের কাছে বিরাট পাওনা। যাই হোক এলাহি খাবার
ব্যবস্থা। দিদার হাতে রান্না। এখানকার ইলিশ টেংরা আর চিংড়ি মাছ দিয়ে পাত সাজানো। সঙ্গে ঘরের
পায়েস মিষ্টি। আমরা জানি আজের প্রধান অতিথি সৌম্য খাদ্য রসিক। সে পরিচয় সে নিলুদের বাড়িতে
দিয়েছে। তবে ভাবুক কবি নীলু তা নয়। সেটা পূরণ করার জন্য বাড়ির দুই ছেলে এসেছে যারা একই সঙ্গে
বাঙালি ঘরের রীতি অনুযায়ী মেয়েদের আগে খেতে বসে। মেয়েরা পরে বসবে।পেট পুড়ে তৃপ্তি করে সৌম্যের
আহার। সোমা যেন বিশেষ ভাবে ওর সেবায় নিজেকে সমর্পণ করেছে। সে যে খাদ্য রসিক সেটা বুঝেছে। তার
রসনায় খাবার ছাড়াও অন্য কিছু আছে বলে যেন সোমার মনে হয়। সেটা মেটাতে সোমা কতটা প্রস্তুত সেটা
এই মুহূর্তে সোমা বুঝতে দিতে চায় না। তাই সোজা চোখে তার দিকে তাকায় না। তবে সোমাকে কেউ সম্যক
নজর করলে হয়তো সেটা বুঝে নেবে। বার বার সবার সৌম্যের জন্য আগ্রহ দেখে নীলু বলে:
------- সবার দেখি নতুনের দিকে ঝোঁক। পূরণ মাল বাসি তাই সে পরিত্যক্ত। ‘পুরানো বলিয়া চেও না আমারে‘
বলে সে গেয়ে ওঠে। দাদু হাসতে হাসতে বলে:
----- হাজার হলেও আজ তো ও প্রধান অতিথি।
ঠাট্টার ছলে নীলু বলে:
------ প্রধান অতিথি ঠিক আছে। কিন্তু এ যে জামাই আদর! দেখো।
নীলুর ঠাট্টা শুনে বোঝা গেল না সোমা এত লজ্জা পেল কেন !
17
বিকেলে সোমা নিলুদের নিয়ে বুড়ির বাড়ি যাবে। বলা আছে বুড়ির কাকা থাকবেন। উনার সাথে আগামী
ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে সুন্দরবন বেড়াবার ব্যবস্থা পাকা করে নিতে হয়। সোমা নীলু আর বুড়ির
ব্যাপারটা জানে। ও দুজনের মধ্যে কুরিয়ারের কাজটা করে। আজও সে দায়িত্ব ওর। বেড়াতে যাওয়ার
ব্যবস্থা করার নামে যাবে। তারপর বুড়িকে নিয়ে বেরিয়ে আসবে। ওরা তিনজন ঘুরতে বেরোবে। কথামত
চারজন বুড়িদের বাড়ি যায়।
বুড়িদের ঘর শত ছিন্ন। তার মধ্যেই ওদের বসার ব্যবস্থা করে দেয় বুড়ির বাবা। কাকাও আছেন। মা চা
করে নিয়ে আসেন। কাকার সঙ্গে কথা বার্তা বলে লঞ্চ বুকিং হয়। মালিকের হয়ে কাকাই দায়িত্ব নেয়।
যথা সময়ে ক্যানিং থেকে সবাই লঞ্চে উঠবে। তারপর দু দিন দুরাত্রির ভ্রমণ। উত্তর থেকে দক্ষিণে নদী
ধরে সমুদ্র পথ যাত্রা। দুরাত্রি দুজয়গায় রাত্রি বাস। এর জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। কথাবার্তা
শেষ করে চারজন বেরোয়। সেই পুকুর পাড় ধরে এগিয়ে গিয়ে বিদ্যাধরি নদীর ধারে। তবে আজ নদীতে ভাষা
হবে না। সেটা কালকের জন্য তোলা থাকে। কাকা বলেছে একটি ছোট ছিপ নিয়ে খারিতে ঢুকে সুন্দরবনের
আসল চেহারাটা যেন ওরা দেখে নেয়। এতজনকে নিয়ে বড় লঞ্চে যখন চুক্তি অনুযায়ী বেড়াতে যাবে তখন
খারি ভ্রমনটা সম্ভব নয়। ওরা নদী পাড়ে আসে। শরৎকাল। আকাশ পরিষ্কার।জল বৃষ্টির ভয় নেই।
কিছুক্ষণ বসে গল্প করা যাবে।এই ঝকঝকে বিকেলে চারজনের গল্প শুরু হয়। বুড়ি এই আড্ডায় বলতে
গেলে নেত্রী। এই অঞ্চলটা তার হাতের তালুতে। অন্য সবাই এখানে আগন্তুক। বলতে গেলে অতিথি। নীলু
অনেকবার এলেও এই অঞ্চলটার সঙ্গে সে এখনও একাকীত্ব হয়ে ওঠে নি। এখানে গাছগুলো থেকে পুকুর
পথ ঘাট কোনদিকে কোন দ্বীপ নদী গুলোর কি নাম সব বুড়ি ওদের জানায়। এখানকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
তুলে ধরে। মানুষের জীবন যাপন সম্পর্কেও আলোচনা হয়। সোমা এ অঞ্চলের মেয়ে হলেও এখানকার
সঙ্গে তার আজন্ম আত্মিক পরিচয় থাকলেও ও বেশি কথা বলে না কেমন যেন একটু অন্যমনস্ক। মধ্যে
মধ্যে বুড়ি নীলুর সম্পর্ক নিয়ে ঠাট্টা ইয়ার্কি করে। কিছুদিন আগে সন্ধ্যের ঝড়ে নীলুর কি দুরবস্থা হয়
সেটা রসিয়ে রসিয়ে বলে। বুড়ি না থাকলে সে সেদিন উদ্ধার পেত না জানায়। ওদিকে পুকুর পাড়টা ওদের
প্রেমকুঞ্জ বলে সোমা বলে। বুড়ি বলে:
------ তোরও তো হাবভাব যা দেখছি তাতে এটা তোরও অবসর যাপনের জায়গা হতে পারে। হয়তো সঙ্গে
বিদেশ থেকে কেউ আসবে।
সৌম্য সোমা কি করে কি করতে ইচ্ছুক জানতে চায় তার মাস্টারির চোখ দিয়ে। সোমা জানায় উচ্চমাধ্যমিক
পাশ করে ও কলকাতায় গিয়ে পড়াশুনা করতে চায়। ওখানে নীলুদা পিসি আছে ওর অসুবিধে নেই। আর আছে
শিপ্রা। শিপ্রা আবার সৌম্যের ছাত্রী। সৌম্য ইতিমধ্যে কয়েকবার কথা প্রসঙ্গে ও যে ওর প্রিয় ছাত্রী
সেটা বুঝিয়ে দেয়। নানা ধরণের আলোচনার পর ওরা বাড়ি ফিরতে উদ্যোগী হয়। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। নদীর
ওপারে সূর্য ঢলে পড়েছে। এটা শুক্ল পক্ষ। দুএকদিনের মধ্যেই পূর্ণিমা। আকাশে চাঁদের হাসি উপচে পড়বে।
চাঁদের আলোতে কিছুক্ষনের মধ্যেই এলাকাটা রূপ ছড়াবে।
ওরা গ্রামের পথ বেয়ে ফিরে আসে ঘরে। আজ দিদির মেয়ে শিপ্রাকে সঙ্গে আনা হয় নি। ওর অনুপস্থিতিটা
সবাই বোধ করে। তবে কালকে ছিপে খারি ভ্রমণে ওকে নিয়ে যাওয়া হবে। ও যেন বাদ না পড়ে সেটা সৌম্য
বিশেষ করে বলে। বাড়ি ফিরে আরেক দফা আড্ডা। দাদু তাতে শিরোমনি। এবার আড্ডায় সৌম্যদের
পরিবারের কথা ওঠে। রানাঘাটে ওদের নিজেদের বাড়ি। সৌম্যরা এক ভাই এক বোন। দাদা বড়। এখানে থাকে
না, চাকুরীর সূত্রে স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে দিল্লিতে থাকে। সৌম্য থেকে বছর চারেকের বড়। বোন ছোট। কলেজে
পরে। দাদুর প্রশ্নের উত্তরে সৌম্য জানায় বাবা ওখানে ডাক্তার। চাকরি করেন না। প্রাইভেট প্র্যাক্টিস
করেন। মা চাকুরীরতা। ওরা দেশভাগের পর রানাঘাট আসে ওপার বাংলা থেকে। কেন জানি না দাদু
18
পুঙ্খানুপুঙ্খ সৌম্যের পরিবারের খোঁজ করেন। কি জানি দাদুর অভিজ্ঞ চোখ এমন কিছু খুঁজে পায় কি না
যার জন্য সৌম্যের পরিবারের এতো খবর নেন। সৌম্য দাদু দিদাকে রানাঘাট আসতে বলে। দিদা বলেন:
------- তোমার বাবা মাকেও নিয়ে এসো। আর সুন্দরবন তো বেড়াবার জায়গা। এখান থেকে সুন্দরবন বেড়াতে
যাবার ব্যবস্থা করা যায়।
সৌম্য বলে:
------বাবা মা দুজনেই বেড়াতে ভালোবাসে। সুন্দরবন বাবা মা বার দুয়েক এসেছে। আমারই এই প্রথম। বাবা
ভালো ছবি তোলে। সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় ছবি আমাদের এলবামে পাওয়া যাবে। একটা বিশেষ বিষয়
হল বাবা একবার বাঘের দেখা পায় যার ছবিটা আছে।
দাদু বলেন :
------ আমরা একবার আধবার বেড়াতে বেরলেও পুঙ্খানুপুঙ্খ কিছু দেখা হয় নি। আর দেখতে হলে দেখার
চোখ চাই। সেটা সবার থাকে না। তাছাড়া জানো তো গেঁয়ো জমি ভীত পায় না। তোমরাও দেখো দুনিয়া জুড়ে
অনেক জায়গায় ঘুরলেও -----
কত ঘুরলাম আকাশ বাতাস সমুদ্র সিন্ধু
ঘরের দুয়ারে দেখা হয় নি ভোরের শিশির বিন্দু।
পরের দিন সকাল হতেই ভোরে নদী পাড়ে। নদীতে তখন জোয়ার। সূর্যের আলোয় পূবাকাশ লাল। সৌম্যরাও
নিজেদের আকাঙ্খার আলোয় রাঙিয়ে নিয়েছি নিজেদের। শুনেছে খারির ভেতর গরান জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে
বাঘ। জল খেতে নামে নদীতে। সেখানে কুমিরের বিচরণ। জলে বাঘ কুমিরের লড়াই। এই শরতের শুভ্র সকালে
কি অপূর্ব দৃশ্য উঁকি মারে সকলের মানস তটে। সোমা খুব উত্তেজিত। তবে শিপ্রা কম, একটু অবসন্ন।
শিপ্রার এই অবসন্ন ভাব আসার পর থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে সৌম্যের গুণগ্রাহী মাষ্টারমশাইএর
অনুগত সব সময় সে তাঁর উপস্থিতিতেও কেমন যেন গুম মেরে। যাই হোক সবাই ছিপছিপে লম্বা নৌকোটাতে
উঠলো যাকে নৌকো না বলে ছিপ বলা হয়। ছিপ বয়ে চলেছে উত্তর থেকে দক্ষিণের পথে সমুদ্র অভিমুখে।
খারি খুব স্বল্প পরিসরের জলাশয়। চওড়ায় কুড়ি পঁচিশ ফুট কোথাও কোথাও আরও কম। দুধারে ছোট ছোট
বনভূমি।সবুজে সবুজ বনানী। খারি গিয়ে মিশেছে নদীতে। নদীতে কিছুটা এগিয়ে আমার খারি। যেন বড় রাজপথে
পৌঁছবার মত শরু রাস্তা যা আমরা পাই শহরের জনপদে। গলি ধরে রাজপথে যাওয়া। বিস্তৃত নদীর মধ্যে
দুদিকে দ্বীপ উপদ্বীপ ধরে খারি ঢুকে গেছে। শরতের নির্মল আকাশে পূর্ণ সূর্য কিন্তু খারিতে সে
সূর্যালোক যেন মাথায় ঘোমটা দিয়ে মুখ দেখাচ্ছে। দ্বীপে উঁচু গাছগুলোতে ধাক্কা খেয়ে কঙ্কাল হয়ে জলে
ভাসছে গাছের ছায়া হয়ে। এখানে সূর্যের দহন নেই। নিরুত্তাপ ঘোমটা মাথায় শান্ত গৃহবধূ। ছিপ জলের
সঙ্গে যেন মিশে যাচ্ছে। হাত বাড়ালেই বন্ধু। আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে তৎপর। জলে হাত দিলে শীতল
অনুভূতি। যেন মায়ের ঠান্ডা হাত যা কপালে ঠেকালে কপালের জ্বর নেমে যায়। স্নিগ্ধ শীতল হয়ে ওঠে
শরীর। নদী থেকে হাতে করে জল ছিটিয়ে একে অন্যকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। তবে সবার সজাগ দৃষ্টি নদীতে আর
পারে জঙ্গল মুখে কখন একটা কুমির বা বাঘ দেখা যায়।তাদের লড়াই শুরু হয়। বাঘ দেখার সম্ভাবনা তেমন
নেই বলে জানালেন চালক। তবে নদী পারে কুমির শুয়ে থাকতে দেখা গেল। কুমির নাকি সবসময় তাকে তাকে
থাকে কখন মানুষ ধরবে আর পটাপট খাবে। কিন্তু আমরা দেখলাম কুমির নির্লিপ্ত শুয়ে। চোখ খুলে
তাকিয়ে। তবে উদাসীন।আমাদের দেখেও দেখছে না। বোধ হয় পছন্দ নয়। হতে পারে আমাদের কেউ সেরকম
গাবদা গোবদা নয়। তাই বোধহয় ওদের উৎসাহ নেই। তাছাড়া কেউ কচি বাচ্চা নয় যে ওরা লোভ করবে।
19
আমরা শুনেছি সুন্দরবনে জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। তাদের মধ্যে অহরহ বিবাদ। কিন্তু বাঘের দেখা কই? এ
যে কুমিরের সাম্রাজ্য। কুমির ছাড়া বন বিড়াল আর পাখির দেখা পাওয়া গেল । তবে বাঘমামা বেপাত্তা।
সময় বয়ে দুপুর। সঙ্গে খাবার আছে। সবাই মিলে এই ছিপ বিহারের মধ্যেই খেয়ে নেয় । কারও কারও
তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ। জলের আর্দ্রতা চোখকে অশ্রুসজল করে তুলেছে। তাও জোর করে তাকিয়ে। কিছুই যেন
বাদ না পড়ে। আর বাঘ তো এসে পড়তে পারে। তার সাক্ষাতের লোভে চোখ খুলে রাখতেই হয়। চারিদিকের
স্তব্ধতা সবাইকে যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। এ এক নীরব অপেক্ষা।এমনি করে সময় কেটে যায়। সবার
এখন ফেরার পথে। বাঘের দেখা না পেয়েই ফিরতে হয়।
সন্ধ্যার মধ্যে চারজন বাড়ি ফেরে। ফিরেই প্রথমে সৌম্য সোমাকে বলে:
------ খুব চা তেষ্টা পেয়েছে। এককাপ চা খাওয়াও। কে বলবে একদিনের পরিচয়। যেন কতদিনের চেনা।
একটা অধিকার বোধ। সোমা যেন এই অনুগ্রয়ের অপেক্ষায় ছিল। তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে যায় আবেদন
রক্ষা করতে। তবে শিপ্রা গম্ভীর। নিলুদের বাড়িতে সাধারণত এই একই আবেদন করে থাকে সৌম্য তবে
শিপ্রাকে উদ্দেশ্য করে। ওই চা করে দেয়। আজ সৌম্য বেসুরো উপলক্ষ্যটা বদলে যায়। সেটা বোধ হয়
শিপ্রার ভালো লাগে না। একদিনের মধ্যে তার বন্ধু প্রিয় দিদি সোমা যেন তার প্রতিযোগী হয়ে উঠল।
এতদিন ধরে নিজের মনের প্রচ্ছদে সৌম্যের যে উজ্জ্বল প্রাণবন্ত ছবিটা সে যে এঁকেছিল সেটা একরাতেই
কেমন যেন ফেকাশে হয়ে গেল।
সোমা চা নিয়ে এসেছে। সবাই মিলে চা সেবন করল। তারপর দাদু সৌম্যকে নিয়ে বসেন। আর সবাই ইতস্তত
ছড়িয়ে। নীলু সোমার সঙ্গে গল্প করে। গল্প প্রসঙ্গে বুড়িদের খবর জেনে নেয়। বুড়িদের অবস্থা যে ভালো
নয় সোমা সেটা বলে। বুড়ির ওপর বিয়ের চাপ। তারপর নিধিরামের ওর বাবাকে প্রস্তাব। নীলু সোমাকে
জানায় বাবা মা ব্যাপারটা জেনেছে। বাবা পরোক্ষে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর সম্মতি নেই। নীলু যেন সম্পর্ক
ত্যাগ করে। নীলুর পরীক্ষা হয়ে গেলে পাশ করে এ ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত ফয়সালা করবে বলে জানায়।
ওদের আলোচনা প্রসঙ্গে সোমা ইঙ্গিত দেয় সৌম্যকে ওর পছন্দ হয়েছে। নিলুকে অনুরোধ করে ও যেন
সৌম্যের মনটা জেনে নেয়। ওরা দুজনেই একমত যে দাদুর সৌম্য সম্পর্কে উৎসাহ থাকলেও বুড়ির
ব্যাপারে দোনো মনা। এ যেন একই যাত্রায় পৃথক ফল। আজ ওরা সবাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। কাল সকাল
সকাল বেরোতে হবে।
পরের দিন সকাল বেলা সবাই ওঠে। এরই মধ্যে সৌম্য আর সোমা নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলে নেয়।
ওদের চলাফেরা দেখে মনে হয় অঙ্কুর মাটিতে জল পেয়েছে। এখন বেড়ে ওঠার অপেক্ষায়। সবাইকে বিদায়
জানিয়ে নীলুরা চারজন বেড়িয়ে আসে। নৌকো করে ওপারে যাবে ক্যানিং স্টেশনে তারপর ওখান থেকে ট্রেন।
ঘন্টা চারেকের মধ্যে জল পার হয়ে ডাঙ্গা ধরে ওরা এসে বাড়ি পৌঁছয়। নীলুদের বাড়িতে সৌম্যও আসে।
খেয়ে দেয়ে এখান থেকে হোষ্টেলে। নীলুও যাবে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। এখন কয়েকদিন হোষ্টেলে থেকে
সৌম্যের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে হয় যাতে পাশটা অন্তত করে। তারপর এদিকের কথা
ভাবা যাবে। আর কিছুদিন সংগঠনের কাজ বন্ধ থাকবে। এখন শিরে সংক্রান্তি। পড়ায় একটু মন দিতে হয়।
থাক বুড়ি বৃত্তান্ত। বাড়িতে এসে শিপ্রা ওর ঘরে চলে যায়। নীলুর মা মানে আলো মাসিমা চা করে নিয়ে
আসে। আজ শিপ্রা চা করে দেওয়ার উদ্যোগ নিল না। নীলুর বাবা বাড়ি নেই। নীলুর সঙ্গে বসে সৌম্য। বুড়ির
প্রসঙ্গ ওঠে। সৌম্য বলে ওর বুড়িকে পছন্দ হয়েছে। দাদুর সঙ্গেও কথা হয়েছে। দাদু বিভ্রান্ত। এই
সম্পর্ক বিয়ের পর কোনদিকে মোড় নেবে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তবে নীতিগতভাবে উনার আপত্তি নেই।
বাস্তবটা মানতেই হয় বলে সৌম্য মত দেয়। অর্থাৎ এ সমাজের সেই সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি। নিলু সৌম্যের
মনোভাবকে সমর্থন করতে পারে না। ও বলে:
20
----- বোঝার চেষ্টা কর সৌম্য, বিষয়টা আর কিছুই নয়। চলতি সমাজে গরিব মানুষের প্রতি দৃষ্ঠিভঙ্গি
আর উচ্চবিত্তদের সামাজিক মর্যাদা নিয়ে অহং। দেখ তোদের অবস্থা ভালো আর সামাজিক মর্যাদায়
তোদের প্রতিষ্ঠা তাই তোদের বাড়ির কাউকে না চেনা সত্বেও দাদু দিদা মা বাবা সবারই এত আগ্রহ। অথচ
বুড়িদের পরিবারকে দাদু বহুদিন ধরে চেনে তাদের সততা পরোপকারী মানসিকতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই
কিন্তু দ্বিধা আর আপত্তি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে। আমার বাবার কথা ছেড়ে দে।তার ভাবনা চিন্তা আমরা
জানি। বাবা খোলাখুলি সম্পর্কটাকে অস্বীকার করে কারণ গরিব মানুষদের ওরা মানুষ বলে গণ্য করে না।
কিন্তু দাদু ! দাদুকে অনুসরণ করেই আমাদের মানসিকতার বিকাশ ঘটেছে।এই সমাজে ধনী দরিদ্র্যের মধ্যে
সৃষ্টি হওয়া বৈষম্যটাকে আমরা অস্বীকার করতে শিখেছি। মানুষের অধিকারের কথা বলি অর্থের ভিত্তিতে
সমাজে গড়ে ওঠা এক ভুয়ো মর্যাদা বোধকে আমরা স্বীকার করি না। কিন্তু যেই নিজের ঘরে সেটা
প্রয়োগের প্রশ্ন আসে তখন গুটিয়ে যাই। অজুহাত সৃষ্টি হয়। বেশীরভাগ মানুষের পিছিয়ে পড়া ভাবনার
লেজুড়বৃত্তি করি। আদর্শ পেছনে পড়ে থাকে। এটাই হল মধ্যবিত্ত বামপন্থীদের বিড়ম্বনা। আর এর থেকে
বাঁচার জন্য কুযুক্তি।
সৌম্য নীলুর যুক্তিকে অস্বীকার করতে পারে না। আর কথা বাড়ায় না।
দেখতে দেখতে দুমাস কেটে গেছে। নিলুদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। আবার সব কাজকর্মে যোগ দিয়েছে।
সৌম্য হোষ্টেল ছাড়ে নি। নতুন বছরের ছেলেরা না আসা পর্যন্ত হোষ্টেলে থাকা যায়। ততদিনে পরীক্ষার
ফল বেরোবে। ওদিকে সোমা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলকাতায় হোষ্টেলে থেকে একটা কলেজে পড়ে। পিসি
ওকে নিলুদের বাড়িতে থেকে কলেজ করতে বলে। কিন্তু ও হোষ্টেলে থাকাই ঠিক করেছে। সৌম্যের সঙ্গে
ওর একাকী সম্পর্কটা দানা বেঁধেছে। সম্পর্কের বাগানে অঙ্কুরিত বীজ মুকুল ফলিয়েছে। এবার ফল
ফলবার অপেক্ষায়। ব্যাপারটা আর গোপন নেই। এর মধ্যে সোমার বাবামায়ের সঙ্গে সৌম্যের পরিবারের
যোগাযোগ হয়েছে। সৌম্য দিদির বাড়িতে আসে। শিপ্রাকে পড়াশুনায় সাহায্য করে। সামনে শিপ্রার মাধ্যমিক
পরীক্ষা। শিপ্রা সোমার সঙ্গে সৌম্যের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে। বুঝেছে ও নিজে যাই ভাবুক সৌম্য ওকে
ছাত্রী বলেই বিবেচনা করে। সৌম্যের বাড়ির সঙ্গে সোমার বাড়ির সম্পর্কটা স্বাভাবিক এক সমতার
ভিত্তিতে সম্পর্ক। ভালো মন্দের বিষয় নয়। আর্থিক বিত্ত আর সামাজিক মর্যাদাই মান্যতা পায়। কিন্তু
বুড়ি আর নীলুর সম্পর্ক মান্যতা পায় না। কার্যত অস্বীকৃত হয়। তাই আবার বলতে হয়: একই যাত্রায়
পৃথক ফল।
ক্রমশঃ------------