Click the image to explore all Offers

 মুক্ত গদ্য ।। ঢেকে রাখা ।। কাকলী দেব

 







ঢেকে রাখা

 কাকলী দেব


ঢেকে রাখা টাই মেয়েদের জীবনের মূলমন্ত্র।  অন্তত এখনও পর্যন্ত আমরা মহিলারা তাই করে যাচ্ছি। 
        জন্মের পর থেকে, পরিবার আর সমাজের কাছে এই মন্ত্র জপার ই শিক্ষা পেয়ে এসেছি। 
            বাড়ীতে অশান্তি, বাবা মা র মধ্যে, সেটা পরিবারের বাইরে লুকিয়ে রাখো। এমনকি প্রাণের বন্ধু কে ও রেখে ঢেকে বলতে শিখি। মনের ভেতর সমস্ত অন্ধকার চেপে রাখতে রাখতে, একটা বয়সের পরে আমরা অনেকেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। 
        নিজের সংসারকে, সুখী গৃহকোণ দেখাতে চেষ্টা করি, ভেতরের সব অসুখ ঢেকে রাখি। স্বামীর সঙ্গে কোনও ভাব ভালবাসা না থাকলেও, আমরা ফেসবুকে স্বামীর বুকে মাথা রেখে ছবি পোস্ট করি। স্ট্যাটাস দিই, 'পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল হাসব্যান্ড। 
        আমাদের এই দ্বিচারিতার দিন শেষ হয়ে আসছে, এটাই আশার কথা।  আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম, পাশ্চাত্য শিক্ষায় বড় হয়ে অকপট হতে শিখছে! মনে মনে যা ভাবছে, সেটাই মুখে বলতে তাদের আর দ্বিধা নেই। 
 পাশ্চাত্য এই ব্যাপারে অনেক এগিয়ে আছে, প্রাচ্যের থেকে। পাশ্চাত্যের অনেক খারাপ জিনিস আছে, কিন্ত এই ব্যাপারটা শিক্ষনীয়!
        প্রাচ্যের সমাজের বাঁধন অনেক শক্ত, সেখানে পুরনো বহু জঞ্জাল এখনও আমরা সযত্নে ঢেকে রেখেছি।  
অত্যাচার যে শুধু শারীরিক হয়না, একথা বুঝতেই শতাব্দী কেটে যায় আমাদের। ছোট বড় হাজারো মানসিক অত্যাচারকে সহ্য করার এক মহান ব্রতে মেয়েদের জন্ম থেকেই দীক্ষিত করে তোলা হয়। সহ্য করার সঙ্গে সঙ্গে সেসব ঢেকে রাখার নিপুণ কলাও আমাদের শিখতে হয়।
        আমাদের দেশে এখনও অধিকাংশ মহিলা উপার্জনশীল নয়, তার জীবন চলে মূলতঃ স্বামীর রোজগারের ওপর নির্ভর করে! সেখানে অজস্র অবমাননার ঘটনা ঘটে চলে নিরন্তর,  হয়তো সেগুলো এত সূক্ষ্ম যে খুব সংবেদনশীল এবং আত্মসন্মানের অধিকারী  মহিলা ছাড়া চোখেও পড়বে না।  সেই সব কাহিনী জড়ো করলে মহাভারত হয়ে যাবে, কিন্ত সেগুলো ঢাকা থাকে, বিদ্রোহ প্রকাশ করা, বলা,  বা লিপিবদ্ধ করাটা এখনও আমাদের সমাজে একরকম 'ট্যাবু'! তাই সেই 'মহাভারত 'ও লেখা হয়না। মেয়েরা এমনকি নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্কেও খুব  কম সেসব তুলে ধরে। যদিও সময় পাল্টাচ্ছে,  সমাজের যা কিছু পুরনো, বস্তাপচা তা, বুঝতে পারছে ক্রমশ এবং বদলের অংশীদার হচ্ছে এখন বহু মেয়েরা। নারী পুরুষের বৈষম্যের বিষয় টা এখন বহু আলোচিত,  আর ঢেকে রাখা যাচ্ছেনা ! 
ঢেকে রাখতে রাখতে এখন বিষয় গুলো পচে যাচ্ছে ! তাই এখন সব ঢাকনা খুলে উন্মুক্ত হাওয়ায় সেসব মেলে ধরার দিন এসে গেছে। 
        পরিচিত একজন নারী র কথা বলে এই আলোচনা আপাতত শেষ করব। একজন মহিলা শুধু, তার স্বামীর অপছন্দ বলে তার নিজের ছেলের মনোনীত বান্ধবীর সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজী হলনা, যদিও মেয়েটি কে তার নিজের কিন্ত অপছন্দ হয়নি, কারণ মেয়েটি, কোয়ালিফিকেশন এবং চেহারায়,কোনও অংশে তার ছেলের থেকে কিছু কম নয়, স্বভাব এবং ব্যাবহার খুব ভাল! অবশ্য তার পরিবারের আর্থিক অবস্হা ভাল নয় এবং মেয়ের বাবা মা তা স্বত্বেও ঠিক জোড় হাত করে থাকা চরিত্র নয়। সেই জন্য তাকে তার হবু শ্বশুর বাতিল করে দিল আর হবু শাশুড়ী নিজের মতামত ঢেকে রেখে, স্বামীর সুরে সুর মেলাল! সারাজীবন ধরে সে তার স্বামীর এই সব নানা জোর জুলুমের শিকার হয়েছে, এবং চিরকাল তা ঢেকে রেখে, নিজেকে সুখী স্ত্রী র পরিচয় দিয়েছে। শেষে ছেলের বিয়ে নিয়েও স্বামীর এহেন বায়নাক্কায়,কষ্ট পেয়েছে কারণ ছেলে সব বাধা এড়িয়ে নিজের খরচে, নিজে নিজের বিয়ে দিয়েছে, বাবা মা র সঙ্গে প্রায় নিঃসম্পর্কিত হয়ে। এইভাবে মহিলা তার মধ্য বয়সে ক্রমশ আরও একা হয়ে পড়ছে কিন্ত তবু স্বামীর সমস্ত দোষ সে প্রকাশ্যে না আনার, যে অঙ্গীকার করেছিল, নিজের বিয়েতে, তার মান রক্ষা করে চলেছে।
 
================

                    কাকলী দেব, কলকাতা। 




 






Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.