অণুগল্প।। খড়কুটোদের গল্প ।। দীনেশ সরকার
খড়কুটোদের গল্প
দীনেশ সরকার
বউ-বাচ্চা নিয়ে কালীপদর অভাবের সংসার । ছেলে কানাই পড়ে থ্রীতে আর মেয়ে ছায়া ওয়ানে । কালিপদ রাজমিস্ত্রীর যোগাড়ের কাজ করে সপ্তাহান্তে যা মজুরি পায় বউ ভানুমতি তাই দিয়েই কষ্টেশিষ্টে সংসার চালিয়ে নেয় । নিরক্ষর কালীপদ আর ভানুমতি স্বপ্ন দেখে, ছেলে-মেয়েকে অনেক অনেক লেখাপড়া শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করাবে । তখন আর তাদের দুঃখ-কষ্ট থাকবে না । ভানুমতি প্রতি সপ্তাহে লক্ষ্মীর ভাঁড়ে কিছু-কিছু টাকা-পয়সা জমাতে থাকে ।
ভানুমতির সুখের সংসারে অকস্মাৎ অন্ধকার নেমে আসে । আষাঢ় মাস, বর্ষাকাল, পিচ্ছল ভূমি । কালীপদ মাথায় করে ইট বওয়ার সময় পা পিচ্ছলে পড়ে যায় আর ইট সব পড়ে তার কোমরে-পিঠে । জ্ঞান হারায় কালীপদ । কন্ট্রাকটর কালীপদকে হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়িতে খবর পাঠিয়ে দায়িত্ব সারে । একসপ্তাহ যমে-মানুষে টানাটানির পর কোমরভাঙা কালীপদকে হাসপাতাল ছূটি দেয় । লক্ষ্মীর ভাঁড়ে যে ক'টা টাকা জমেছিলো কালীপদর ওষুধ কিনতেই তা শেষ । নিরক্ষর ভানুমতি ভেবে কূলকিনারা পায় না, কি করে সে এই চারটে প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখবে । ভগবান অর্থ দিতে না পারলেও গরিবকে লড়াই করার ক্ষমতা দিয়েছেন । ভানুমতি মেরুদন্ড সোজা করে উঠে দাঁড়ায় । তাকে বাঁচার লড়াই লড়তে হবে । শহরে তিন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেয় । সংসার বাঁচানোর জন্য তার এখন কাজ চাই । পেলে আরও দুটো বাড়ির কাজ নেবে । চারটে প্রাণীর মুখে একবেলা অন্ততঃ ভাত যোগাতে হবে ।
দুর্গাপুজো । কানাই আর ছায়া ভানুমতির গলা জড়িয়ে বলে, 'মা, এবার পুজোয় আমাদের নতুন জামা হবে না ?' ভানুমতির দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে । এক কাজের বাড়িতে গিয়ে বলে, 'বড়বাবু আমাকে ১০০০টাকা ধার দেবেন ? বাচ্ছাদের জামা কিনবো । দু-তিন মাসে আমার মাইনে থেকে কেটে নেবেন ।' বড়বাবু বলেন ,'সবে তো দুমাস কাজ করছিস । কাল যদি কাজে না আসিস্ তখন কে আমার টাকা ফেরৎ দেবে ? না বাপু আমি দিতে পারবো না ।' দ্বিতীয় বাড়িতে গিন্নিমার কাছে ধার চাইতে তারও একই উত্তর । তৃতীয় বাড়িতে বৌদিমণির কাছে ধার চাইতে তার দয়া হয়, সে ভানুমতিকে ১০০০টাকা ধার দেয় । ভানুমতি জামা-জুতো কিনে ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেয় । তখন তাদের খুশি আর ধরে না । মন্ডপে মায়ের বোধনের ঢাক বেজে ওঠে ।
***************************
দীনেশ সরকার
১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি,
প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ---- ৭২১৩০৬