অণুগল্প।। গবেট ।। চন্দন মিত্র
চিত্রঋন- ইন্টারনেট।
গবেট
চন্দন মিত্র
ঘরেবাইরে শব্দটি শুনতে শুনতে অবিনাশ একদা নিজেকে গবেট ভাবতে শুরু করেছিল। শব্দটি তাকে স্কুল পর্যন্ত ধাওয়া করে গেছিল। তবুও সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিল। অবশ্য আর্টস নিয়ে। তারপর তাকে আর কলেজে যেতে হয়নি। কলেজে যাওয়ার ইচ্ছাও তার আদৌ ছিল না। আনন্দের সঙ্গেই সে বাবার বেনেমশলা দোকানের গদিতে বসে পড়ে। তারপর কোথা থেকে যে কী হয় অবিনাশ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু হয়ে ওঠে। গদিতে বসেই সে নানা ধরনের বই পড়া শুরু করে। লাইব্রেরি থেকে বই আনার পাশাপাশি নিজেও বই কিনে পড়ে। শুধু পড়া নয়, গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেলে সে ডাইরিতে নোট করে নেয়। নিন্দুকেরা বলে এমএ পাশ বউয়ের সঙ্গে টক্কর দিতে সে কেঁচেগণ্ডূষ করছে। দোকানের চার কর্মচারিই বাবুকে বেশ সমীহের চোখে দেখে।
বিকাল বেলায় কাঁচালঙ্কা সহযোগে চপ-মুড়ি খাচ্ছিল অবিনাশ। কাঁচালঙ্কায় একটা কামড় মেরে তার চোখ দিয়ে শুধু নয় নাকমুখ দিয়েও জল গড়াতে থাকে। মুড়ির ঠোঙা রেখে সে রুমাল বের করে। এমন সময় দোকানে এসে হাজির হন অবিনাশের স্কুলজীবনের বন্ধু বিকাশ, এখন তিনি বায়োলজির নামকরা শিক্ষক। অবিনাশ যেন হাতে চাঁদ পেয়ে যায়। সে বিকাশের কাছে জানতে চায়, 'বিকাশ কাঁচালঙ্কাতে কী থাকে বলত, যা এমন জ্বালা ধরিয়ে দেয় ?' বিকাশ কালক্ষেপ না-করে বলেন, 'এক ধরনের অ্যাসিড, নাম অ্যালঝোল।' বিকাশ বাজারের ব্যাগ ঝুলিয়ে একটা চপ চিবোতে চিবোতে বিদায় নেন। বিকাশের উত্তরটা অবিনাশের ঠিক মনঃপুত হয়নি। মাধ্যমিক পর্যন্ত তাকেও তো বিজ্ঞান পড়তে হয়েছে, কই এমন বিদঘুটে কোনো অ্যাসিডের নাম তো সে পড়েনি বা স্যারেদের মুখে শোনেনি! অবিনাশ ভাবল ঠিক আছে মিহিরবাবু এলে তাঁর কাছ থেকে যাচাই করে নেওয়া যাবে। মিহিরবাবু কেমিস্ট্রির অধ্যাপক, তার দোকানের বাঁধাধরা কাস্টমার। দিন দুয়েক পরে মিহিরবাবু দোকানে আসেন। অবিনাশ তাঁকে কাছে ডেকে বসার জন্য একটি টুল এগিয়ে দেয়। দোকানের এক কর্মচারিকে চা আনতে পাঠিয়ে মিহিরবাবুর কাছে অবিনাশ তার লঙ্কাজিজ্ঞাসা নিবেদন করে। মিহিরবাবু কোনোরকম কালক্ষয় না-করে বলেন, 'লঙ্কায় থাকে পিকরিক অ্যাসিড, আমাদের জিভের স্বাদকোরকের সঙ্গে তার বিক্রিয়ার ফলে আমরা ঝাল স্বাদ পাই।' মিহিরবাবু চলে যাওয়ার পরে অবিনাশ বেশ ফ্যাসাদে পড়ে। কোন উত্তরটা যে ঠিক তা সে স্থির করতে পারে না। নাকি তাকে গবেট দেখে দুই বিজ্ঞমানুষ তাৎক্ষনিকভাবে মুখে যা এসেছে তাই বলে দিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞ হলে তো তাঁরা 'জানি না' বলা শিখতেন ! অবিনাশ শেষমেশ গুগলের শরণাপন্ন হয়। সে অবাক হয়ে দ্যাখে, ক্যাপাসাইসিন নামক এক রাসায়নিকের উপস্থিতির জন্য কাঁচালঙ্কা খেলে ঝাল লাগে।
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা)
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ।