সন্তানের মূল্য
মিঠুন মুখার্জী
সৌরভীর জীবনের মূল্য সৎ মা আরতীর কাছে কোনোদিনই ছিল না। সৌরভী হবার এক সপ্তাহ পর মা বিশাখা পরলোক গমন করে। সুশান্ত ছোট্ট মেয়ে সৌরভীকে মানুষ করার চিন্তা করে ইচ্ছা না থাকলেও আরতীকে বিয়ে করে। কাঠের মিলে কাজ করে সামান্য আয় করে সে। আরতীর অবহেলায় ও কাকিমা সরলার ভালোবাসায় মানুষ হয় সে। সৌরভীর যখন দশ বছর বয়স তখন তার সৎ মা আরতীর মেয়ে হয়। সৌরভীর উপর অবহেলা আরও বেড়ে যায়। ওইটুকু মেয়েকে দিয়ে সংসারের বেশিরভাগ কাজই করিয়ে নিত। কাকিমা কিছু বলতে এলে মুখরা আরতীর সঙ্গে পেরে উঠত না। সৌরভীর নিরীহ বাবাও বুঝতে পারে নি,আরতী এমন নিষ্ঠুর মানুষ হবে।সৌরভীকে স্কুলে যেতে দিত না, ঠিকমতো খেতে দিত না। প্রায়ই প্রহার করত। সুশান্ত একদিন সহ্য করতে না পেরে আরতীকে প্রচন্ড প্রহার করে ও সৌরভীকে কলকাতায় মাসির বাড়ি দিয়ে আসে।
মাসি সুষমা সৌরভীকে ভালো স্কুলে ভর্তি করে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে সৌরভীর মেধা সকলের চোখে পড়ে। সকলের নয়নের মণি হয়ে ওঠে সে। দেখতে দেখতে ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়। সৌরভী মাধ্যমিকে স্টার নিয়ে পাশ করে। স্কুলে প্রথম হয়।
এদিকে আরতীর মেয়ে রিয়া ডাইরিয়ায় মারা যাওয়ায় আরতীর দর্প চূর্ণ হয়ে যায়। সন্তান হারিয়ে সৌরভীর উপর তার সমস্ত বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। আরতী তার ভুল বুঝতে পারে। তার মাতৃসত্তার জাগরণ ঘটে । আরতী তার কৃতকর্মের জন্য সুশান্তের কাছে ক্ষমা চেয়ে সৌরভীকে এনে দিতে বলে। কিন্তু সুশান্ত চায় না সৌরভীকে পুনরায় এই জীবনে ফিরিয়ে আনতে। সে বলে---"আজ সন্তান হারিয়ে তোমার মাতৃসত্তা জেগেছে? কিন্তু তুমি অনেক দেরি করে ফেলেছ।" সন্তানের অভাব সেদিন আরতী অনুভব করতে পেরেছিল--- "হাজার হাজার মায়েরা শত চেষ্টা করেও মা হতে পারে না। সেখানে সৌরভীর মতো সন্তানকে পেয়েও তাকে নিজের ভুলে হারাতে হয়েছে।"
চিত্রঋন- ইন্টারনেট।
=====================
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা