Click the image to explore all Offers

গল্প ।। অনুঢ়া ।। বিশ্বেশ্বর মহাপাত্র


চিত্রঋন- ইন্টারনেট।  
অনুঢ়া
বিশ্বেশ্বর মহাপাত্র


এটা যে বর্ষাকালের শেষ তা প্রমাণ দিতে চারিদিকে বৃষ্টির ছাপ লেগে আছে। মাঠ ঘাট নদী নালা তো জলে টইটম্বুর। শুধু আকাশের মেঘগুলি যা শেষ বেলায় একটু উদাসী।দীর্ঘ বর্ষণ শেষে এ সময় তার ঘরে- 
"তরঙ্গ মিলায়ে যায় তরঙ্গ উঠে 
কুসুম ঝরিয়া পড়ে কুসুম ফুটে।
নাহি ক্ষয়,নাহি শেষ,নাহি নাহি দৈন‍্যলেশ।
সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে।।"
 
গানটি হোম থিয়েটারে শুনতে শুনতে এক ভাবনার ঘোরে তলিয়ে যেতে থাকে লিলি।
সদ‍্য স্নাতকোত্তরের পাঠ চুকিয়ে বাড়ি ফিরতে না ফিরতে বাবা মায়ের ভীষণ চাপ এসেছে মাথার উপর।মা বার বার প‍্যান প‍্যান করে বলেই চলেছে এবার তোর জন্য আমরা পাত্র তো দেখতেই পারি।
লিলি বারবার বলে মা তোমরা এতো ব‍্যস্ত হয়ে পড়ছো কেন বলো তো? আমি কি তোমাদের গলারকাঁটা যে আমাকে গলার থেকে নামাতে পারলেই যেন মুক্তি।
তা নয় মা আমরা বয়স্ক হয়ে পড়ছি তাছাড়া তোমারও তো বয়স বেড়ে চলেছে এই সময় তোমার উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে না দিলে পরে যদি তোমার সমতুল‍্য না পাই!
না পেলে নাই পাবে,তাতে কি এমন রামায়ন, মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে শুনি?
ওটা ঠিক কথা নয় মা! পাড়া প্রতিবেশরা কী বলবে? 
কি আর বলবে তোমার মেয়ে বিয়ে করেনি কেন?কোন ছেলে বন্ধু-টন্ধু আছে টাছে বোধ হয়।এ জাতীয় শব্দগুলো তো? আই ডোন্ট কেয়ার দ‍্যাট!কারণ আমি জানি কোন পাড়ার লোকজন আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে না।তারাই তো এ সমস্ত ভাটের চিন্তা করবে।তুমি ওদের নিয়ে পড়ে থাকো মা আমায় এ সব বলতে এসো না।আমি এ যুগের জব অ‍্যাসপারেন্ট গার্ল।আমার কাছে আমার কেরিয়ার নিয়ে যত ভাবনা।আগে তো আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই তারপর না হয় ও সব ভেবো।
কথাগুলো মাকে বলার কয়েক দিন পর লিলির বাবা মা দিল্লীর থেকে ফেরার সময় গাইসালের ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যায়।
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ের সেই আকস্মিক ঘটনায় একেবারে নাজেহাল অবস্থা।আত্মীয় বন্ধুবান্ধব প্রথম প্রথম একটু আহা উহু করলেও তার বাবা মায়ের শ্রাদ্ধ শান্তির পর কেউ যোগা-যোগটুকুও করল না।সেই শোক কাটিয়ে বাবার জমিয়ে রেখে যাওয়া টাকায় সংসার চালিয়ে নিজের একটা সরকারি চাকুরী অবশ্যই জুটিয়েছে কিন্তু নিজ ভুলে নিজেকে পাত্রস্থ করতে না পারায় সে আজ বিপর্যস্ত এক অনুঢ়া।
এসময় একমাত্র রবি ঠাকুরের এই গানই তার ভরসা।ওদিকে তখনও গান বেজে চলেছে-
"আছে দুঃখ, আছে মৃত‍্যু,বিরহদহন লাগে।
তবুও শান্তি,তবু আনন্দ,তবু অনন্ত জাগে।
===================

পশ্চিম মাশুড়িয়া.পূর্ব মেদিনীপুর।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.