Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। সবার উপরে মানুষ সত্য ।। দীনেশ সরকার





      সবার উপরে মানুষ সত্য

                                                                                               দীনেশ সরকার

 

 

            অনেক ভেবেচিন্তে অনেক সাহস সঞ্চয় করে তৃণা বাবার মুখোমুখী হ'লো । বললো, 'বাবা, আমি ইসমাইলকে বিয়ে করতে চাই ।'

         তৃণার বাবা ভুবন চাটুজ্যে হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, 'কী বললি তুই !'

          তৃণা শান্ত গলায় উত্তর দিলো, 'ঠিকই শুনেছো বাবা । আমি ইসমাইলকে ভালোবাসি, ইসমাইলও আমাকে ভালোবাসে । আমরা বিয়ে করবো । তোমারা যদি রাজি না হও, আমরা রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ করবো ।'

           ভুবন চাটুজ্যে আবারও হুঙ্কার দিলেন, 'আমি ভুবন চাটুজ্যে, আমাদের বংশ কুলিন ব্রাহ্মণ বংশ। তুই সেই বংশের  মেয়ে হয়ে একটা মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করবি ! বংশের মুখে চুনকালি লেপে দিবি ! জাত-কুল-মান সব খোয়াবি !  আমি সমাজে মুখ দেখাবো কেমন করে । ছিঃ-ছিঃ-ছিঃ----- । একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ্‌, তুই যদি ইসমাইলকে বিয়ে করিস্‌ তবে ও মুখ আমাকে আর দেখাবি না ।'

          তৃণাও রেগে বলে উঠলো, 'ঠিক আছে । তাই হবে বাবা, এ মুখ আমি আর তোমাকে দেখাবো না । আমি চলে যাচ্ছি ।'

           বাবা-মেয়ের চিৎকার শুনে তৃণার মা প্রভাদেবী ছুটে এলেন । বললেন, 'কি বলছো তুমি ! ইসমাইল খুব ভালো ছেলে । উচ্চশিক্ষিত, ব্যাঙ্কে চাকরি করে । তুমি তোমার কথা ফিরিয়ে নাও,  তৃণাকে ফেরাও ।'

          ভুবন চাটুজ্যে বললেন, 'তুমিও আমাকে জাত-কুল-মান খোয়াতে বলছো ? ওকে যেতে দাও ।'

          তৃণা মাথা নীচু করে বেরিয়ে গেল ।

        

          একমাত্র কন্যা তৃণা চলে যাওয়ার পর থেকে ভুবন চাটুজ্যের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না । পিতৃহৃদয় বার বার কেঁদে কেঁদে উঠছে ।   খাওয়া-ঘুম চলে গেছে । রাতের পর রাত জেগে বসে থাকেন । যখন তখন মাথা ঘোরে । সেদিন রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন । জ্ঞান হারালেন । হাসপাতালে ভর্তি করা হলো । ডাক্তারবাবু বললেন, 'দীর্ঘদিন না ঘুমানোর ফলে ওনার শরীর রক্তশূন্য হয়ে গেছে । বাঁচাতে হলে রক্ত দিতে হবে । AB nigetive   গ্রুপের রক্ত চাই ।

          সারা ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘুরেও ওই গ্রুপের রক্ত পাওয়া গেল না । ওই গ্রুপের ডোনার পাওয়াও খুব মুশকিল  । অসহায় প্রভাদেবী  তৃণাকে ফোন করলেন । তৃণা-ইসমাইল দুজনে হাসপাতালে ছুটলো কিন্তু বাবার মুখোমুখি হলো না । যদি উনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন । সব শুনে ইসমাইল বললো, 'আমার ব্লাডগ্রুপ AB nigetive, কিন্তু উনি কি আমার রক্ত নেবেন ?'

         প্রভাদেবী ইসমাইলের হাত ধরে বললেন, 'ওকি বলছো বাবা, তুমি রক্ত দিয়ে ওনাকে বাঁচাও বাবা ।'

         ভুবন চাটুজ্যে একটু সুস্থ হতে প্রভাদেবী সব খুলে বললেন । ইসমাইলের রক্তে যে উনি জীবন ফিরে পেয়েছেন সে কথাও জানালেন । ভুবন চাটুজ্যের দুচোখে অশ্রুধারা । ইশারায় ওদেরকে ডাকতে বললেন ।  তৃণা-ইসমাইল কাছে আসতে চার হাত এক করে দিয়ে ক্ষীণ গলায় বললেন, 'আমায় ক্ষমা কর বাবা । আজ আমি বুঝেছি, জাতপাত সব মিথ্যে । মানুষের মনুষ্যত্বই সবচেয়ে বড় । সবার উপরে মানুষ সত্য  ।'

          তৃণা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো । প্রভাদেবীর চোখেও জল ।

 

চিত্রঋন- ইন্টারনেট।   

=========================

 

দীনেশ সরকার

১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি,

প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.