রম্যরচনা ।। মুদ্রা দোষ।। উত্তম চক্রবর্তী
মুদ্রা দোষ
উত্তম চক্রবর্তী
মুদ্রা দোষ নেই এমন একটা মানুষ আজও আমি দেখিনি। জানিনা হয়ত বিধাতা মানুষ সৃষ্টির সময়ই ভেবেছিলেন যে শুধু একটা নিরেট গবেট বা বুদ্ধিমান মানুষ না বানিয়ে, নুন ছাড়া যেমন রান্না হয়না, সেরকম যদি সবার মধ্যেই একটা মুদ্রা দোষ দিয়ে দেওয়া যায় তাহলে কেমন হয় ? তাই তিনি কাউকে দিলেন শারীরিক মুদ্রা দোষ আবার কাউকে দিলেন ভাষা গত মুদ্রা দোষ। শারীরিক মুদ্রা দোষে কোন মানুষ কারণে অকারণে মাঝে মাঝে হয় কাণ চুলকায় অথবা হাতের আঙুল মটকায় অথবা দাঁত দিয়ে নখ কাটে অথবা বারবার চুল ঠিক করে নেয়,গাল, ঘাড় বা মাথা চুলকায় বা হয়ত একদিকে বেঁকিয়ে হাটে বা দাঁড়ায় ইত্যাদি। নারী পুরুষ সবাই একেকজন একেকটা বিভিন্ন অদ্ভুত আচরণ করে থাকে যেটা সে নিজেই জানেনা কেন করছে বা অন্যেরা দেখে কী ভাবছে।
কথা বলার সময় মুদ্রা দোষ দেখা যায় অনেকের মধ্যেই এবং হয়ত তাদের মধ্যে শারীরিক মুদ্রা দোষ নেই অথবা সেটাও আছে আবার কথা বলার মুদ্রা দোষও আছে , মানে দুটোই আছে। আমি একজনকে চিনতাম যিনি অনেক শিক্ষিত এবং একটা হাই স্কুলের অঙ্কের টিচার ছিলেন। কিন্তু কথায় কথায় উনি বলে উঠতেন 'ব্যাঙ', আর সেই বদ অভ্যাস এমন আকার নিয়েছিল যে স্কুলে শুধু ছাত্রদের বা ওনার সহকর্মীদের সাথে কথা বলবার সময়েই নয়, এমনকি রাস্তা ঘাটেও ওনাকে সেটা বলতে শোনা গেছে বহুবার। এই নিয়ে অনেকের সাথেই ওনার বেশ কয়েকবার ঝামেলাও হয়েছে শুনেছি।
একবার স্কুলের রবীন্দ্র জয়ন্তীতে সেই মাস্টারকে কিছু বলবার জন্য স্টেজে ডাকা হয়। উনি শুরু করলেন এই ভাবে, "মাননীয় হেড স্যার, আমার ব্যাঙ সহকর্মীরা ও আমার সমস্ত ছাত্ররা ব্যাঙ। আজ এই যে ব্যাঙ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ব্যাঙ জয়ন্তী আমরা পালন করছি ব্যাঙ, আমাদের একটা কথা ব্যাঙ মাথায় রাখতে হবে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন ব্যাঙ বিশ্বকবি ছিলেন না, তিনি একজন সমাজের বড় ব্যাঙ মাথা ছিলেন। এই পরাধীন ব্যাঙ ভারতের স্বাধীনতার জন্য ব্যাঙ উনি ওনার লেখার মধ্যে আবেগের ব্যাঙ বন্যা ফুটিয়ে তুলতেন আর সমস্ত ভারত বাসি ব্যাঙ তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে……।"
সবাই জানত যে ওনার কথায় কথায় 'ব্যাঙ' বলাটা মুদ্রা দোষ, তাই মাস্টার মশাইরা বা ছাত্ররা কেউ কিছু ভাবেনি ,শুধু মুখ টিপে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করেছে। কিন্তু অনুষ্ঠান পরিচালনায় যেই সিনিয়র ছত্রটি ছিল সেও ওনার বক্তব্য হয়ে গেল পর মাইকে ভুল করে বলে ফেলে, "ধন্যবাদ ব্যাঙ স্যার। এতক্ষণ আপনারা শুনছিলেন আমাদের ব্যাঙ অঙ্কের মাস্টার মশাইয়ের ভাষণ ......।"
চিত্রঋন- ইন্টারনেট।
---------শেষ--------