আতিথ্য
বিশ্বনাথ পাল
না না ,যাবো না।
ওমন নেমন্তন্নের মুখে ছাই। বলে কিনা-- দাদার নেমন্তন্ন, পারলে তুমি যেও।
হতচ্ছাড়া সম্বন্ধি! বলতে পারলে না, ছোটকত্তা তুমি অবশ্যই যাবে, না গেলে হবে না; তোমার আসার পথ চেয়ে থাকব। তুমি তো কীর্তনের ভক্ত। এ সব কথার ধারে কাছে না যেয়ে, স্রেফ প্রাণহীন শুকনো একটা নেমন্তন্ন !
দাদা এখন বি এডের ছাত্র। কলেজ থেকে সুন্দর বনে বেড়াতে নিয়ে গেছে। অবশ্য বি এড ছাড়াই ব্যাকডোরে দাদা একটা জুনিয়র হাই স্কুলে গতে গেছে। তাই দাদা শুধু শিক্ষক নয়, রীতিমতো টিচার ইনচার্জও।
অজ পাড়া গাঁয়ের স্কুলে এক এবং অদ্বিতীয় লড়ঝড়়ে বাসে পৌঁঁছতে দিন কাবার হত বলে দাদা কাছাকাছি এক আধাশহুরে গাাঁয়ে থাকতে শুরু করে।হ্যাণ্ডসাম এই শিক্ষক মশাইয়ের চোখেে তখনই পড়ে পড়শি গাঁয়ের বিনতার কাজল টানা ডাগর চোখের ছায়া। মিস বিনতা সেন। কনভেন্টের ছাত্রী না হলেও হাল হকিকত কনভেন্টকেও হার মানায়। এই বিনতার সঙ্গেই সামনের অঘ্রাণে দাদার বিয়ে।
দাদা ঐ মেয়েটাকে একটা আপেল ফোন কিনে দিয়েছে যেদিন, তারপরের দিনেই আমাদের রান্না ঘরের পিছন দিকের দেয়ালটা পড়ে গেল। আমার বাবা দাদার চাকরির পয়সা থেকে যে ঘরটা ভেঙে দালানের স্বপ্ন বুকে নিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন সেই ঘরে আমি কঞ্চি আর কাদা লিপে ছিটে বেড়ার দেয়াল তুলে লোভী বেড়ালদের আসা যাওয়ার পথটাই আটকে দিয়েছি।
আমার দাদার চাকরি প্রাপ্তির সংবাদ পাকা হবার সঙ্গে সঙ্গে যে আর্থিক অনটন আর চরমতম দুঃখের ভয়়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি --সেখান থেকে উদ্ধার হতে আজও পারি নি। মায়ের ভয়়ার্ত সকরুণ চাউনিই আমাকে বলে বাড়িতে চাল বাড়ন্ত আজ।
আমি টিউশন পড়িয়ে জি আর এফ (জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ) -এর জন্য লড়ে যাচ্ছি। কিন্তু দেশে যে কি মড়ক লাগল মাইরি ,এম এ পাশ করার পর আর চাকরির পরীক্ষাই হচ্ছে না। দাদার চেয়ে শত গুণের ভাল ফল করেও চোরের মতো এ সংসারে মাটি কামড়়ে থাকতে হয় অসহায় বৃৃৃদ্ধা মায়ের মুুখ চেয়ে।
দাদা এ বাড়ি থেকে বিয়েটা কোন রকমে সেরেই শহরের ঝাকাস ফ্লাটে উঠে যাবে।বুকিং হয়ে গেছে। দাদার ঘাড়ে খাই বলে নেমন্তন্নের খবর ফোনে জানাতেই ও প্রান্ত থেকে দাদা ওর রাশভারী গলায় আমাকেই শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি না হবার জন্য উদুমপুরে নামী দলের দামী কীর্তনে যাবার নিদান দিলে।
দাদার নির্দেশের ফোন বন্ধ হতেই আমার মনটা ছোট হয়ে গেল। হাতে আর দিন নাই দেখে মা বললে, ঘন্টুরে , মন্টুর পয়সাতেই তো আমাদের ডান হাত মুখে উঠছে না কি, লক্ষ্মী বাপ আমার আর অমত করিস না , তুই এবার যা।
বড়বাবুর হুকুম তামিল না করলে ভবিষ্যতে আরো বিপদের গেড়োয় পড়ার ভয়। তারচেয়েও বড় কথা মায়ের আশার সলতে জাগিয়ে রাখতে হবে আমাকেই।পুরনো পাঞ্জাবীটা বালিশের নীচে রেখে ইস্ত্রির কাজ সেরে সাইকেল নিয়ে তিন সন্ধ্যার পরে উদুুম পুরে গিয়ে দেখি---অনাবৃষ্টি হটাতে ব্যাঙের বিয়ে কোথায়?আর কীর্তনই বা কোথায়?? এলাহি আয়োজনে এ যে বিনতার বিয়ে। একজন জাঁদরেল মন্ত্রী ইডির খপ্পরে ধরা পড়েছে জেনেই বিনতার এই চট জলদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ। জেনুইন বনেদি ব্যবসাদার পরিবারের আধবুুুুড়ো ভোঁদা নাকের মোটা একটা মোষের গলায় মালা পরিয়ে পতিত্বে বরণ করবে বিনতা সুুুন্দরী!
দাদা যে আসবে না তা ওরা আগেই জানতো বলতে বলতে বিনতার ভাই ফটিক চাঁদ আমাকে হাতে ধরে পরম আদরে ঘরের মধ্যে নিয়ে চলল। দাদার চাকরি হয়তো নয়় ,এবার যাবেই। কিন্তু দাদার চাকরি থাকা অবস্থায় দাদার ভাই হিসেবে এই আতিথ্য আমি ভুলব কেমন করে?
চিত্রঋন- ইন্টারনেট।
=====================
Biswanath pal
Kanaikunja
Vill--Amarpur, P o--Dwarnary
P S--Galsi,
District-PurbaBardhaman