বিড়াল
তপন মাইতি
রবিবার। আজ ছুটির দিন। মেসে দীর্ঘ ঘুমের পর বাজার থেকে আনা হয় একটু মাংস।তাতেই দোকানে দীর্ঘ লাইন।সকাল ৯ টা ছাড়া দোকান খোলে না।সারাদিন হইহুল্লোর!নাচ গান নাটক কবিতা,ঘোরাঘুরি..সারাদিন যে যার মতো করে ইনজয় করে। তপু গরীব মানুষ। কোম্পানির সিফটিং ডাউটি। ঘরভাড়া করে থাকার মুরোদ নেই। বত্রিশ বসন্ত হয়ে গেল।কোন গার্ল ফ্রেন্ড নেই। আজ ঘুম থেকে ওঠা মাত্র একাকীত্ব জেঁকে বসেছে। প্রতিবারের মতো পায়ে হেঁটে খবরের কাগজ আনতে যাবে!এমন সময় একটা কুচকুচে কালো বিড়াল রাস্তা কেটে গেল।বামদিক থেকে ডানদিকে।কেন?আর কী কোন সময় হল না?একটা রাজনীতিবাজ লরি হঠাৎ ষাঁড়ের মতো চলে গেল। যদিও তপু সায়েন্সের ছাত্র। তবুও সময় বিশেষে পেঁয়াজ খোসায় ও যে পা কাটে! খ্যাঁচর খ্যাঁচর মনটাকে সংযত ও অনুপ্রাণিত করে স্টেশনের দিকে এগোতে লাগল। তপুর পাশের বেডে থাকে সুজন। ঋদ্ধার সাথে সম্পর্ক ছিল বছর পাঁচেক মতো।এই কলকাতা শহরের কোন্ রাস্তা থেকে একটা বাচ্চা বিড়াল তুলে এনে পুষেছে। বিড়ালটা যেন তার জীবন। শুতে উঠতে বসতে পড়তে চলতে ঘুরতে ফিরতে কাছছাড়া করেনা তাকে। বিড়ালটার নাম দেয় ফ্রাঙ্কটেচ।এখন সে অনেক বড় হয়েছে। সেও বিজ্ঞানের ছাত্র। সে বোঝে বিড়ালের চুল পেটে গেলে পেট খারাপ হয়। এঁটো বা লালা পেটে গেলে ডিপথরিয়া রোগ হয়। কামড়ালে বা আঁচড়ালে ইনফেকশন হয়। এতো জানা সত্ত্বেও সে চুমু খায়। একদিন বৃষ্টিমুখর দিনে গায়ে খুব জ্বর নিয়ে প্রেগন্যান্ট 'ফ্রাঙ্কটেচ'কে নিয়ে যায় পশুচিকিৎসক খালেদ মিঞার কাছে। তিনি বললেন 'তোমার ফ্রাঙ্কটেচ শীঘ্রই মা হতে চলেছে '।ঔষধপত্র দিচ্ছি তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যাবে আশা রাখি। জ্বর গায়ে সুজন বাজার থেকে দুধ মাছ মাংস রুটি কিনে দেয়। সাতদিন পর চারটে বাচ্চা হয়। চারটেই পুরুষ বাচ্চা।এই খবরটা তার ডাক্তারবাবুকে বললেন ফোনে। কিছু ওষুধপত্র লিখে দিলেন এবং হাসতে হাসতে বললেন একটা মেয়ে বিড়াল সংগ্রহ করুন যথা শীঘ্রই…।তার দিনটা তিনেক পর সেদিন ছিল আবার অক্ষয় তৃতীয়া আবার ঈদ একসাথে পড়েছে বোধহয়। একটা বাচ্চা মারা যাওয়ায় সেকি কান্না! মনখারাপ!সেকি বিলাপ সুজনের!'তোদের কত ভালবাসি বলতো?তোরা ছাড়া এই জগতে আর আমার কে আছে বল?আমি তোদের প্রেমে অন্ধ। আমি যাদের ভালোবাসি তারা কেন ছেড়ে চলে যায় বলতে পারিস?' সুজনের এত বাড়াবাড়ি দেখে ঋদ্ধার উপমা দিতেই। যেন জ্বলন্ত কাঠে ঘি পড়ল। পরমানু বোমার মতো বিস্ফারিত ও উদ্ধত হয়ে গলা চেপে ধরল।তপু তো ছাড়াতে পারছে না আর কোন শব্দও করতে পারছে না বেচারা! ভাগ্যক্রমে আমি এসে উদ্ধার করি। 'ওই নামটা যদি এরপর বলিস তো জিভ টেনে ছিঁড়ে নেব 'বলছে এমন সময় মেসের ছেলেরা টানতে টানতে নিয়ে গেল। সেদিন থেকে বুঝলাম পৃথিবীতে মানুষ, মানুষ ছেড়ে কেন অন্যকোন কিছুর প্রেমে পড়ে!ভালোবাসে! মানুষকে ভালোবাসলে আঘাত ঘৃণা অবজ্ঞা অবহেলা বঞ্চনা উপেক্ষার শিকার হতে হয় কিন্তু অন্যকোন কিছুর প্রেমে পড়লে সে হল একতরফা।ওসবের বালাই নেই।যেমন পশু প্রেম!জড় প্রেম!সে শুধু সামান্য আদর আর একটু খাবারেই সন্তুষ্ট। সেদিন থেকে আমি পশু প্রেমিক হয়ে গেলাম। এবং এটাও বুঝেছি মানুষকেও এভাবে ভালোবাসলে ভালোবাসা পাওয়া যায়।প্রেম হয়। সে যা দেবে যা আশা করোনি কখনও...
======================
নামঃ তপন মাইতি
ঠিকানাঃ
গ্রামঃ পশ্চিম দেবীপুর;
পোঃ দেবীপুর;
থানাঃ মৈপীঠ কোস্টাল;
জেলাঃ দঃ ২৪ পরগণা;