Click the image to explore all Offers

গল্প ।। প্রতীক্ষা ।। অনন্যা ঘোষাল মুখার্জী

  
 
   প্রতীক্ষা
অনন্যা ঘোষাল মুখার্জী 
 
 
" মা ও মা" বলতে বলতে ঝাঁপিয়ে পড়ল বৃষ্টি। ওর কচি আঙুল দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে একটা স্বপ্ন। মা। আজ ও সেই মাতৃদিবস। কলিং বেলের গর্জনে  দরজা খুলে দেখি ওলি। জড়িয়ে ধরে হাতে দিল তার কুইজের পুরস্কার: একটা রুমাল এ লেখা 'মা'।

দুই কন্যা সন্তানের গর্বিতা জননী মনে মনে চীৎকার করে  বললাম, 'আমি হারিনি, জেঠিমা। তুমি যে টাইম মেশিনেই থাক, জেনে নাও, : কোন পেশা ই ''মা" র থেকে দামী নয়। বকুল  সেদিন  মেঘ রোদ্দুর কে হত্যা করেনি;বরং  সমাজ  হত্যা করেছে বকুলকে।  অশ্বত্থ গাছে ঢিল বাঁধা, মাজারে চাদর চাপানো, মন্দিরে হত্যে দেওয়া, পুজোয় দণ্ডী কাটা, যজ্ঞের পোড়া কলা খাওয়া- কিছুই বাদ পড়েনি। কিন্তু এসবের তো দরকার ছিল না। আসলে মেরে ফেলা আত্ম প্রত্যয়কে ভাঙা পায়ায় দাঁড় করানোর জন্য দরকার ছিল এই লাঠিগুলোর।ঝাপসা হয়ে যায়, ওলিবৃষ্টিকে জাপটে ধরে থাকি- আমার শক্ত লাঠি দুটো।  
মনে পড়ে দশ বছর আগের সেই মাতৃদিবস।মেঘ আর রোদ্দুর, এদের খেলনা নিয়ে খেলতে খেলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল।ঘুম ভাঙল একরাশ অন্ধকারে। অন্ধকার ঘরে এ কোন আঁধার নতুন নয়; কিন্তু আজকের আঁধার  যেন আরো কালো;মুঠি তে জাপটে-ধরা এক চিমটি আলো হাতের ফাঁক গলে চলে যাওয়ায়। বিছানায় অগোছালো কাগজ গুলো যেন বিদ্রূপ করছে, জেঠিমার মতন- ' নিজের কেরিয়ার টা ই শুধু ভাবলে মা,? এই যে বুড়ো বুড়ি বেঁচে আছে  বংশের মুখ দেখবে বলে,..ছেলে ছিল না মেয়ে ছিল?....
.পোড়া কপাল!!'
চীৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল : "দেখে যাও এসে, আমার মেঘ-রোদ্দুর এর জন্য কেনা খেলনা, তিল তিল করে গুছিয়ে নেওয়া তাদের জন্য পরিসর।" ডঃ ঘোষ যখন বললেন, যমজ সন্তান,...মেঘের আড়ালে রোদ তখন চোখ টিপে পালিয়ে গেল। যদি জানতাম যে সত্যিই ওরা পালিয়ে যাবে,  কিছুতেই ছাড়তাম না।আকাশের কাছে ভিক্ষা চাইতাম, মাটিকে শিকড় হয়ে আঁকড়ে ধরতাম.... নারী কি আঁকড়ে ধরার জন্য ই জন্মেছে? মেয়ে হয়ে বাবাকে, প্রেমিকা হয়ে প্রেমিক কে,মা হয়ে সন্তান কে.....!আসলে মানুষ মাত্র আঁকড়ে ধরে মানুষ কে। নারী ও তাই। কিন্তু যার   ঠিকানা, সম্পর্কের ঠিকুজি ধরে বদলায়, সেই নারী আঁকড়াবে কাকে ..!
আজকাল এই হয়েছে সমস্যা। অতীত ফিরে ফিরে আসে আর উপচে পড়া ভাতের ফ্যানে সব ভাসিয়ে দেয়।  ভেসে যায় হৃদমাঝারে এমন কত শত বকুল, মালতী, ঝুম্পা। মনে পড়ে সুমি র মুখটা, সেদিন এর সারির শেষ রোগী। তিন সন্তানের মা, ফ্যাকাসে দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আবার ও তবে  গ্রামের গয়া রাম ডাক্তার কে দিয়ে গর্ভপাত করেছে! অনেক দূরে একটা জায়গায় যায় এই সন্তান সম্ভবারা, সাথে থাকে একটা চিরকুট   " ভোলেবাবা পার করেগা", অথবা "পঞ্চানন মঙ্গল এর দয়া "। যাদের কন্যা সন্তান আছে, তাদের তো আরো গেরো। ...পঞ্চানন তলায় যদি বলে কন্যা: আপদ বিদায় কর,আর তার ফলাফল এই সুমি। ভাবি সুমির সাথে বকুল এর তফাত কোথায়! সুমি র মাথায় হাত বুলিয়ে বলি, দেখলি তো, কেন বলি তোর মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করিস না। অনেক মহীয়সী নারী র বলিদান এ আমরা আজ আলোর মুখ দেখেছি। জানিস তো,  বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কথা, জীবনভোর সংগ্রাম করে আমদের হাতে বর্ণপরিচয় তুলে দিয়েছেন। বিদ্যা ই অলংকার,  নিজের পরিচয়।সুমি মাথা নাড়ে, প্রতি বারের মত।

জয়চণ্ডী পাহাড়ের বাঁক পেরিয়ে আসতে গিয়ে চোখ পড়ে পর্বত শিখরে চণ্ডী দেবীর মন্দির এর চূড়ো।এক ই তো নারী রূপ; তবে মানবী আর দেবী তে এত বৈষম্য কেন!!
হয়ত সময়ের অপেক্ষা। মহিষাসুর নিধনের প্রয়োজন পড়লে কোন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এর দ্বারা বোধনের প্রতীক্ষায়।
======================
 
Story written by Dr Ananya Ghoshal Mukherjee, Asansol, West Bengal

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.